somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'সাদ্দামের পর গাদ্দাফি, পশ্চিমের প্রিয় পদটি এখন ফাঁকা'

২১ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিবিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্বে সামরিক হামলার পরপরই লেখা এক কলামে খ্যাতনামা সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক বলছেন, বিভিন্ন দেশে দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমই স্বৈরশাসক লালন করেছে।

"শেষ পর্যন্ত আমরা লিবিয়ার নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য 'প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থাই' নিতে যাচ্ছি। সত্যিই কি তাই? দুঃখজনক হলেও সত্যি, অনেক আগে কিন্তু আমরা এমনটি ভাবিনি।"

ব্রিটেনের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টে শনিবার রাতে প্রকাশিত এক কলামে রবার্ট ফিস্ক বলেন, ৪২ বছর আগে হতে পারতো এটি, অথবা ৪১ বছর আগে বা ... এর পরের অধ্যায়ের কথা তো আমাদের জানা। জাতিসংঘ প্রস্তাবে সত্যিকার অর্থে কী বলা হয়েছে তা নিয়ে বোকা না হলেও চলবে। আবারো শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, এবং ইরাকের মতোই।

"এক্ষেত্রে টম ফ্রিডম্যানের একটি উক্তির কথা মনে পড়ছে- এক স্বৈরাচারের বিদায়ে কে জানে খোলস থেকে কোন্ উন্মাদ বেরিয়ে আসে?"

তিউনিসিয়ার পর মিশর, মিশরের পর লিবিয়া, তাই নয় কি?- এ প্রশ্ন তুলে আরব বিশ্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রবার্ট বলেন, উত্তর আফ্রিকার আরবরা চাইছে মুক্তি, চাইছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা। বেরিয়ে আসতে চাইছে বন্দিদশা থেকে। তাদের মধ্যে মৌলিক মিল এখানেই।

তিনি বলেন, তবে এই জাতিগুলোর মধ্যে আরো কিছু মিল আছে, আর সেই মিলটি হলাম এই আমরা- আমরা পশ্চিমারা। এই আমরা দশকের পর দশক ধরে তাদের স্বৈরতন্ত্র লালন করেছি আমরা।

ফরাসিরা বেন আলিতে আক্রমণ চালিয়েছে, আমেরিকানরা মুবারককে তাড়িয়েছে। অন্যদিকে ইতালি গাদ্দাফিকে যে কোনো মূল্যে তাড়াতে চাইবে; যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের মহিমান্বিত এ নেতা নিজে নিজের রাজনৈতিক পুনরুত্থান ঘটাতে পারেন।

রবার্ট মনে করেন, এই [লিবিয়া] বিপ্লব মৌরিতানিয়ার মতো সহিংস উপায়ে দমন করা হলে এজন্য উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণার প্রয়োজন নেই। আইভরি কোস্টের ক্ষেত্রেও তা ভাবা হয়নি। আফ্রিকার যে দেশে তেল, গ্যাস বা খনিজ নেই সেরকম কোনো দেশের ক্ষেত্রেই এমন ভাবা হয়নি। ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টিও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট; এ কারণেই মিশর নিয়ে আমরা এতো উদ্বিগ্ন।

কলামে রবার্ট উল্লেখ করেন, কাজেই এখানে বেশকিছু বিষয় আছে যেখানে ভুল হতে পারে। ধরুন গাদ্দাফি যদি ত্রিপোলিতে মাটি কামড়ে পড়ে থাকে; ব্রিটিশ, ফরাসি কিংবা আমেরিকানরা যদি তার সব যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে, তার সব বিমানঘাটি ধ্বংসও করে দেয়, কিংবা তার সব সামরিক ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র উড়িয়ে দেয়, আর তা সত্ত্বেও যদি গাদ্দাফি শেষ না হয়?

"বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে ভোটাভুটির আগে পেন্টাগন সাংবাদিকদের সামনে পুরো বিষয়টার বিপদের অংশটুকু তুলে ধরে; [তারা বলে] এমনকি উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ এলাকা বাস্তবায়ন করতেই কয়েকদিন লেগে যেতে পারে।"

গাদ্দাফিও একটি হিসেবে রাখার মতো বিষয় বলে উল্লেখ করেন রবার্ট। তিনি বলেন, এরপর আছে গাদ্দাফির ছলনা ও ধূর্ততার বিষয়টি। গতকালই আমরা এর একটি উদাহরণ দেখতে পেয়েছি। এদিন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অস্ত্রবিরতি এবং সামরিক অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেন। যদিও তারা জানেন ন্যাটোর কাছে কখনোই তা গ্রহণযোগ্য হবে না; তারা এখানে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছে, পরিবর্তন চাচ্ছে শাসকের।

রবার্টের মতে, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে গাদ্দাফি নিজেকে শান্তিপ্রিয় আরব নেতা হিসাবে উপস্থাপন করেছেন এবং সবাইকে দেখিয়েছেন তিনি পশ্চিমাদের আক্রমণের শিকার।

সামরিক অভিযানে সাফল্য না এলে কী করবে পশ্চিমা দেশগুলো- এরকম প্রশ্ন তুলে এই বর্ষীয়ান সাংবাদিক বলেন, আমরা যদি গাদ্দাফির ট্যাঙ্কের গতি সময়মতো রোধ করতে না পারি? এরপর কি আমরা বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করবো? আমরা কি বেনগাজিতে ঘাঁটি গাড়বো?

"এই সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে আমরা সেইসব লিবীয় গোষ্ঠী নিয়ে কথা বলছি না যাদেরকে কয়েক সপ্তাহ আগেও আমরাই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলাম। এখন আমরা কথা বলছি- কীভাবে 'লিবীয় জনগণকে' নিরাপত্তা দেওয়া যায়।"

১৯৬৯ সালে বেনগাজির সবচেয়ে শক্তিশালী আদিবাসী গোষ্ঠী কিং ইদ্রিসকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন গাদ্দাফি- এ তথ্য উল্লেখ করে রবার্ট ফিস্ক বলেন, এখন যদি এই ইদ্রিসের অনুসারিরা ত্রিপোলিতে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে তারা কি অভিনন্দিত হবেন? রাজধানীতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হলেও প্রতিবাদকারীদের বেশিরভাগই ছিলেন এই বেনগাজির।

"সেক্ষেত্রে গাদ্দাফির সমর্থকরা কী করবেন? তারা শান্ত হয়ে যাবেন? আমরা কি হঠাৎ দেখতে পাবো তারা সবাই গাদ্দাফিকে তিরস্কার করছেন এবং বিপ্লবে যোগ দিয়েছেন? আর এটি যদি না হয় গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে।"

রবার্ট প্রশ্ন করেন, যদি গাদ্দাফির বিপক্ষে প্রতিবাদী 'বিদ্রোহী' গোষ্ঠী ত্রিপোলিতে গিয়ে গাদ্দাফি ও তার ছেলের সঙ্গে দেখা করে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার দিতে চায়? বিশেষ করে তাদের হত্যাকাণ্ড, প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া, যা বহু বছর ধরে হয়ে এসেছে, সেক্ষেত্রে আমরা কী আমাদের চোখ বন্ধ করে রাখবো?

"এখন সবচেয়ে বিপদের কথা হলো আমরা যে 'ভুলটি' করছি- সাধারণ নাগরিক মরছে বোমার আঘাতে, ন্যাটোর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভূপাতিত হতে পারে এই গাদ্দাফির এলাকাতেই। 'বিদ্রোহী, লিবিয়ার মানুষ কিংবা গণতন্ত্রকামীরা' মধ্যে যদি হঠাৎ পশ্চিমাদের নিয়ে সন্দেহ হয়?

"তাদের যদি মনে হয় যে এ সাহায্যের নেপথ্যে গোপন কোনো উদ্দেশ্য আছে?"

সব মিলিয়ে এ ক্ষেত্রে চিরন্তন একটি আনন্দহীন বৈশ্বিক নিয়ম আছে- স্মরণ করিয়ে দেন রবার্ট ফিস্ক। তিনি বলেন, তুমি যেই মুহূর্তে অন্য একটি সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করবে তখনই সবকিছু উন্মুক্ত হতে শুরু করবে।

"একই 'বিদ্রোহী'রা, যারা বৃহস্পতিবার সকালেও ফরাসিদের প্রতি ক্রোধান্বিত ছিলো রাতে সেই ফরাসিদের পতাকাই তারা উড়িয়েছে বেনগাজিতে। দীর্ঘজীবী হও আমেরিকা। সেই পর্যন্ত ... "

ভবিষ্যতের গাদ্দাফি-সাদ্দামদের- যাদের লালন করছে পশ্চিম- এখনই চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন রবার্ট ফিস্ক। তিনি বলেন, ধরুন উজবেকিস্তানে যাকে লালন করা হচ্ছে, কিংবা তুর্কমেনিস্তানে, তাজিকস্তানে, চেচনিয়ায় আরো আরো জায়গায়।

"কিন্তু না। এরা [ভবিষ্যতের সাদ্দাম-গাদ্দাফি] সেই লোক যাদের সঙ্গে আমাদের লেনদেন আছে। যারা আমাদের কাছে তেল বিক্রি করবে। আমাদের অস্ত্র কিনে মুসলিম 'সন্ত্রাসবাদীদের' টিকিয়ে রাখবে।"
................................................................................।
বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকম Mon, Mar 21st, 2011 11:06 am BdST
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর সামনের পাতার ৯টি পোষ্টে শুন্য (০ ) মন্তব্য।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০



আজকে সকালে একটু দেরীতে ( নিউইয়র্ক সময়, সকাল ৮:২১ ) সামুতে লগিন করলাম; লগিন করে আজকাল প্রথমে নিজের লগিন স্ট্যাটাস পরীক্ষা করি: এখনো সেমিব্যানে আছি। মোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×