somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরাজয়

২১ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
বদলে যাচ্ছে সবকিছু। সেনাবাহিনীতে গতকালও সৈনিক আর অফিসারের মধ্যে ছিল বিরাট পার্থক্য। আর আজ সবাই এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। সবার পোষাক একই রকম, পদবী, সম্মান আর সুযোগ সুবিধাও সমান হয়ে গেছে। অফিসারদের পরিকল্পনা, প্রশিক্ষন আর রণকৌশল তৈরীর দালানগুলো থেকে সব জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন থেকে অফিসারদেরকে আর সেখানে নতুন রণকৌশল বানাতে হবেনা, যুদ্ধের পরিকল্পনাও করতে হবেনা। এখন সেখানে বসানো হয়েছে উন্নত মানের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনস সিস্টেম যা দিয়ে শব্দ ও চিত্র যোগাযোগ করা যাবে সারা বিশ্বে। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমেরিকান সৈন্যদের সাথে এখান থেকে সেন্ট্রাল যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরী করা হয়েছে।

ঘটনা শুনে নিশ্চয়ই মনে হবে যেন, আমেরিকার সেনাবাহিনীতে কোন বিদ্রোহ কিংবা সামরিক উত্থান হয়েছে যার ফলে সারাবিশ্বে যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে। না, তা নয়, আমেরিকা এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সারাবিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কারনে কিংবা অকারনে। যুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে না পারলেও প্রেস্টিজ রক্ষার্থে পিছিয়ে আসতে পারছেনা। প্রচন্ড ঋনগ্রস্ত দেশ আমেরিকার ঋনের পরিমান আকাশের সীমা ছাড়িয়ে যেতে বসেছে। যুদ্ধে খরচ করার মত আর কোন সামর্থই তাদের নেই, এদিকে ইউরোপে তাদের বন্ধুরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ব্যবসা-বানিজ্যেও আমেরিকার সেই প্রতিপত্তি নেই, ধীরে ধীরে এশীয়ার দিকে সরে গেছে বানিজ্যের কেন্দ্রভূমি। বাধ্য হয়ে আমেরিকাকে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। দেশের সেরা প্রযুক্তিবিদ, রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীরা মিলে পরিকল্পনা করল যে, সেনাবাহিনীকে তারা কায়দা করে বিক্রি করে যুদ্ধের খরচ চালাবে, কিন্তু সেনাবাহিনী তখনও আমেরিকার জন্যই যুদ্ধ করবে। যেই ভাবা সেই কাজ, তৈরী করা হল আধুনিকতম গেমিং কনসোল যা দিয়ে একজন গেমার স্যাটেলাইটের সাহায্যে গুরুত্বপূর্ন তথ্য, চিত্র ও শব্দ গ্রহন করে সত্যিকার যুদ্ধরত যোদ্ধাকে তার যুদ্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবে। গেমিং কনসোলের সাথে স্যাটেলাইট এর প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রন দেয়া হল, আর যোদ্ধাদের সাথে গেমারদের শব্দ ও ভিডিও যোগাযোগ এর ব্যবস্থা তৈরী করে দেয়া হল। তারপর একে একে সব সৈন্যকেই বেচে দেয়া হল, সৈন্যদের যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একেকজনের দাম নির্ধারন করা হল। যুদ্ধে চেইন অব কমান্ড ভেঙে আন-আইডেন্টিফাইয়েবল কমান্ড জারী করা হল।


দুই.
নতুন গেমস বাজারে আসতেই ক্রেতাদের মধ্যে কেনার জন্যে ধুম পড়ে গেল। বড় বড় গেমিং ক্লাব তৈরী হল। কিছুদিনের মধ্যেই তরুনদের হাতে চলে গেল পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা আমেরিকান সৈন্য। এদিকে অস্ত্র, সৈন্য বেচাকেনা আর গ্যাম্বলিং এর ব্যবসা শুরু করে দিল আমেরিকা ভেতরে ভেতরে। ভার্চুয়াল দৃশ্য মানুষকে বাস্তবতা ভুলিয়ে দেয়, তাই বুলেটের ব্যাবহার বাড়াবার নির্দেশ দিতে গেমাররা বাস্তবের অফিসারদের চেয়েও বেশি পছন্দ করে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে সৈন্যদের উগ্রতা, হত্যা ও সন্ত্রাস আরো বেড়ে গেল। বেধড়ক আক্রমন আর সৈন্য, প্রতিপক্ষ ও বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকল।

ভার্সটি পড়ুয়া হাফিজ কিছুদিন আগে একটা দুর্ঘটনায় পায়ের হাঁড় ভেঙে ফেলেছে। ধনীর সন্তান হলেও সে অন্যদের মত উচ্ছৃংখলতা কিংবা বিলাসীতায় নিজেকে না হারিয়ে বরং বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। দেশ আর বিদেশের বিভিন্ন খবর সে খুব যত্ন করে দেখে ও বুঝার চেষ্টা করে। তার এক বন্ধু তাকে সেদিন দেখতে এসে তার নিজের গেমসটা দিয়ে গেল অসুস্থ বন্ধুর সময় কাটানোর জন্য। তবে তার কেনা যোদ্ধাটা যুদ্ধে আহত হয়েছে, নতুন আরেকটা কিনতে পারেনি, তাই গেমসটা তার কোন কাজে আসছেনা। হাফিজ সাদরে গ্রহন করল উপহারটা।

তিন.
এডগার ম্যাকফিল্ড আমেরিকার সেনাবাহিনীতে একজন অফিসার ছিলেন। তিনি অন্যান্য সেনার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি উদারতার অধিকারী। সুন্দর বাচনভঙ্গী আর দক্ষ রণকৌশলের জন্য তিনি অফিসার-সৈনিক সব মহলেই অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ছিলেন। কিন্তু হঠাতই সেনাবাহিনীর রদবদলে তিনি তাঁর অর্জিত সকল সম্মান আর ক্ষমতা হারিয়ে কোন এক যুদ্ধপ্রেমী তরুন গেমারের অ্যাভাটারে পরিণত হয়েছেন। আফগানিস্তানের যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে, আর তারপর থেকে হেডফোন আর ক্ষুদ্র অনেক ভিডিও ক্যামেরা লাগানো পোষাক পরে যখন তখন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ মানতে হচ্ছে। মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই অকাতরে গুলি ছুড়তে হচ্ছে, বেসামরিক মানুষ হত্যা করতে হচ্ছে। নিজের সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ নেই এখন আর। সাধারন একশনেও গেমারের ভুল নির্দেশ মেনে আহত হবার ঝুঁকি নিতে হয়েছে অসংখ্যবার। শেষ পর্যন্ত একটা ভয়াবহ যুদ্ধে পায়ে গুলি লেগে আহত হল এডগার। এখন সে হাসপাতালে।

তিনদিনের মাথায়ই এডগার মোটামুটি সুস্থ হয়ে পড়ল। সে এখন ধরে ধরে হাটতে পারছে। ক্যাম্পের মেডিকেল সেন্টারে আহত সব সহকর্মীকেই এডগার প্রতিদিন একবার করে দেখে আসে, খোঁজ নেয় আর বর্তমান অবস্থায় তারা খুশি কি অখুশি তা নিয়ে জানতে চায়। কিছুদিনের মাথায় হাসপাতালের সহকর্মীরা তার গোপন প্রচারনায় সহমত জানিয়ে বিদ্রোহের পক্ষের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এডগার আর তার পক্ষে থাকা সেনাদের নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ক্যাম্পেইন চালাতে লাগল। ভিডিও ক্যামেরার পাঠানো চিত্র আর ভেসে আসা শব্দ থেকে গেম নিয়ন্ত্রক কিংবা গেমাররা কিছুই টের পেলনা। ধীরে ধীরে এডগারের সমর্থকের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে শেষে সবাই এসে যোগ দিল। হঠাতই একদিন সেনাবাহিনীর আফগানিস্তানের ইউনিটগুলোর একটা এসেম্বলির ব্যবস্থা করে ফেললেন। তারপর শুরু করলেন তাঁর বক্তৃতা। এই প্রথম সবাই বিদ্রোহের ব্যাপারে জ্ঞাত হল, আর সবার চোখের সামনেই এডগার তার বক্তৃতায় সেনাবাহিনীর এই নতুন পদ্ধতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত ও সরাসরি যুদ্ধের ডাক দিলেন। সেই সাথে শান্তি নষ্টের যুদ্ধ ত্যাগ করে শান্তির পক্ষে যুদ্ধ করার আহ্বান জানালেন পৃথিবীর সকল যোদ্ধাদের প্রতি। গেমিং কনসোল, নিয়ন্ত্রন প্যানেল আর টিভিতে সারা পৃথিবী নতুন এই বিদ্রোহ সরাসরি দেখতে পেল।

আমেরিকার সেনাদের অন্য রাষ্ট্রের যুদ্ধরত ইউনিটগুলোও এডগারের বিদ্রোহের স্বপক্ষে অবস্থান নিল, সেই সাথে আমেরিকায় থাকা সেনারাও তার পক্ষ নিল। এডগারকে তারা আমেরিকায় ফিরে আসার ব্যবস্থা করল, তারপর এডগারের নের্তৃত্বেই পুরো পদ্ধতি ধ্বংশ করে আগের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা হল। আর শাস্তি দেয়া হল যুদ্ধংদেহি সকল রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী আর প্রযুক্তিবিদদের।

কেউ হয়ত জানেনা, এডগারের বিজয়ী হাসির সাথে দুর থেকে সুর মিলিয়েছিল আরো একজন।

(একটা ছোট্ট প্রশ্ন, বলুনতো এডগারের সাথে কে দুর থেকে হাসিতে সুর মিলিয়েছে, কেন?)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×