somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃত্রিম রক্ত

২১ শে মার্চ, ২০১১ ভোর ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানব দেহে রক্তের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের কল্যাণে অন্যান্য অনেক জিনিসের মতো এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিস রক্তও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আর জনৈক জাপানি ডাক্তার জরুরি অপারেশনের সময় ঐ কৃত্রিম রক্ত কাজে লাগিয়েছেন এবং ফলও পেয়েছেন।

কৃত্রিম রক্ত আসলে এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ। এই যৌগ স্বাভাবিক রক্তের মতোই শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে। এর রাসায়নিক নাম ‘এফডিএ’। বিজ্ঞানীরা দুটি রাসায়নিক যৌগের সাহায্যে এফডিএ তৈরি করেছেন। এ দুম্বটি যৌগ হচ্ছে পারফ্লুরোডেকটিন এবং পারফ্লুরোট্রাই প্রয়ল্যামাইন।

জাপানের একটি মেডিকেল কলেজের শল্য চিকিৎসক ডক্টর কেনজি হোন্ডা অপারেশনের সময় মোট দেড়শো রোগীর দেহে এই কৃত্রিম রক্ত ঢুকিয়েছেন এবং প্রত্যেকটিতে সফল হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওষুধ যাকে বলে এফডিএ ঠিক তা নয়। ড. হোন্ডার মতে একে বলা যেতে পারে অক্সিজেন পরিবাহী।

এই কৃত্রিম রক্ত বা এফডিএ প্রথম তৈরি করেছেন ওসাকার ড. জে. নাতিও। আর তিনিই এর নাম দিয়েছেন এফডিএ। এই রক্ত শরীরের স্বাভাবিক রক্তের মতোই অক্সিজেন বহন করতে পারে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, থ্রম্বসিস প্রভৃতির সময় শরীরে রক্ত দেয়া প্রয়োজন হলে এই রক্ত ব্যবহার করা যায়। এক নাগাড়ে তিন দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেও শরীরে এখনো পর্যন্ত কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এই রক্ত দেখতে দুধের মত। দুধের মতোই তরল। এই রক্ত যকৃতের কোন ক্ষতি করে না। তবে কিছু অসুবিধাও আছে। সাধারণ রক্ত অক্সিজেন ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টির সামগ্রী, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন ইত্যাদি পৌঁছে দেয়। কিন্তু কৃত্রিম রক্তের সে ধরনের কোন ক্ষমতা নেই। আর এখানেই সাধারণ রক্তের সঙ্গে এফডিএ-র পার্থক্য। উল্লেখ্য, দেহ কোষের বৃদ্ধি, বিভাজন এবং শারীর বৃত্তীয় কাজকর্মের জন্য রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে উপরোক্ত দ্রব্যাদি পৌঁছে দেয়া জরুরি।

সাধারণ ক্ষেত্রে কারোর শরীরে রক্ত দিতে গেলে ডাক্তাররা কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রথমেই দেখতে হয় রক্ত কোন গ্রুপের। কেননা একেক জনের রক্ত একেক গ্রুপের হয়ে থাকে। ফলে কোন একজনের রক্ত অপর একজনের শরীরে ইচ্ছেমত ঢুকানো যায় না। যার শরীর থেকে রক্ত নেয়া হয়ে থাকে বা ব্লাড ব্যাংক থেকে যে গ্রুপের রক্ত নেয়া হোক সেই রক্ত ও রোগীর রক্ত একই গ্রুপের না হলে হিতে বিপরীত ফল হতে পারে। ক্ষতি হবার আশংকা বেশি থাকে।

কিন্তু নতুন আবিষ্কৃত এই কৃত্রিম রক্ত যে কোন মানুষের শরীরে দেয়া যায়। এই রক্তে তেমন কোন বাদ বিচার নেই। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, কারোর দেহে যে কোন গ্রুপের রক্তই থাকুক না কেন রক্তের প্রয়োজনে সকলের দেহে এফডিএ দেয়া যেতে পারে। এতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটে না। এদিক থেকে এফডিএ একটি মস্ত বড় অসুবিধা দূর করেছে। কারণ অনেক সময় রোগীর জন্য ঠিক যে গ্রুপের রক্ত দরকার সেই গ্রুপের রক্ত দেয়ার মত দাতা পাওয়া যায় না- এমনকি ব্লাড ব্যাংকেও না থাকতে পারে।

চিকিৎসার সময় রোগীর দেহে এফডিএ দেয়া হয় দু’থেকে তিন হাজার মিলিলিটার। আর এজন্য সময় লাগে ঘণ্টা দু’য়েক। শরীরে ঢোকার পর এর প্রতিক্রিয়া থাকে তিন ঘণ্টার মত। কাজ সারার পর এই যৌগ ফুসফুসের ভেতর দিয়ে এসে নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। এভাবে শরীর থেকে এটি তিন থেকে ছয় মাসে পুরোপুরি বের হয়ে যায়।

পৃথিবীর দেশে দেশে হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। অপারেশনের জন্য চাই প্রচুর রক্ত। জনসাধারণের পক্ষে অত রক্তের যোগান দেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। এছাড়া আছে গ্রুপের প্রশ্ন। ঠিক যে গ্রুপের রক্ত দরকার সেই গ্রুপের রক্ত বা রক্তদাতাই হয়তো পাওয়া গেল না সময়মত। হয়তো রক্তদাতা পাওয়া গেল, কিন্তু রক্ত দেয়ার মত সামর্থই তার নেই। এরপর আবার দেখতে হবে, যিনি রক্ত দিচ্ছেন তিনি রোগমুক্ত কি না। কারোর সংক্রামক রোগ বা রক্তে অনাকাঙিক্ষত বস্তু থাকলে তার রক্ত অন্যের শরীরে ঢোকানো রীতিমত বিপজ্জনক। কৃত্রিম রক্তের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন বাধাই থাকবে না। এছাড়া কৃত্রিম রক্ত দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যাপক রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যদি এফডিএ-র ভূমিকা নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয় অপারেশনের কাজ তখন আরো অনেক সহজ হবে বলাই বাহুল্য।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×