somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ও আধুনিক বিশ্বে এর চ্যালেঞ্জসমূহ (১)

২০ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[লেখক পরিচিতিঃ ডঃ আই ব্রুস ওয়াটসন প্যালেস্টাইন বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ নিউজিল্যান্ডের “সাউথ এশিয়ান এন্ড ইসলামিক হিস্ট্রি”র প্রভাষক। এছাড়া তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইসলামিক স্টাডিজের কো-অর্ডিনেটর। এছাড়াও তিনি “সাউথ এশিয়া”র সহ-সম্পাদক। “পিরিওডিকা ইসলামিকা”র আন্তর্জাতিক সম্পাদক কমিটির সদস্য। তিনি দক্ষিণ এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইতিহাসের উপরে অনেকগুলো প্রবন্ধ লিখেছেন যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তার একটি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।
ডঃ ওয়াটসনের লেখা “ইসলাম ও আধুনিক বিশ্বে এর চ্যালেঞ্জসমূহ” নামক প্রবন্ধটি ১৯৯৭ সালে প্রথম “ইনসাইট”-এর ১২তম ভলিউমে প্রকাশিত হয়। এই পোস্টে অত্যন্ত সময়োপযোগী লেখাটির একটা ভাবানুবাদ করার চেষ্টা করা হয়েছে।]


সারা বিশ্বে ঘরে-বাইরে ইসলাম আজ নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ইসলামের ভিতরকার নানারকম টানাপোড়েনকেই প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বিশ্বব্যাপী বাইরের দিক থেকে মানে অমুসলিমদের ও অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে যেসব সমালোচনাগুলো হয় সেগুলোকে পথভ্রষ্টতা, অজ্ঞতা বা শত্রুতা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু ইসলামের সীমানার ভিতরে থেকে যেসব মতপার্থক্যের বা মতবিরোধিতার সৃষ্টি হচ্ছে, এগুলো এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই। খুব সাধারণ ভৌগোলিক সেন্সে, ইসলামের মূল কেন্দ্রসমূহকে তার অবস্থান পরিবর্তনের হাত হতে রক্ষা করার কথা বলা যায়। যেমন, সৌদিআরবের মক্কা-মদীনা হচ্ছে ইসলামের মূল ধর্মীয় পবিত্র ভূমি, প্রতিবছর এখানে হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়, এর মাধ্যমে সৌদিআরব মুসলিম বিশ্বে তার অভিভাবকত্ব ধরে রেখেছে, কিন্তু শিয়ামতাবলম্বী ইরান ও আরো কিছু ক্ষুদ্র মতাদর্শের দল এর বিরোধীতা করে আসছে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখবার ফলে সৌদিআরব বেশ জোরালোভাবেই এ ধরণের বিরোধীতাকে নাকচ করতে পারছে। এক সৌদিআরবের যে পরিমাণ তেলসম্পদ আছে, তা কুয়েত, ইরাক, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, ইরান, ইয়েমেনের সম্মিলিত আয়ের কাছাকাছি। কিন্তু এ সম্পদের উৎস সীমিত। তাই কয়েক বছরের মধ্যেই এই অর্থনৈতিক কেন্দ্র মুসলিম বিশ্বের আরেক প্রান্তে স্থানান্তর হবে যেখানে শক্তির স্থিতিশীল উৎস পাওয়া যাবে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উতপন্ন হবে। পশ্চিম এশিয়ার অর্থবিনিয়োগকারীরা অনেকদিন ধরেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা উপলব্ধি করছেন, কিন্তু তারা পশ্চিমা বিশ্ব এবং অমুসলিমদের উপর নির্ভর করে বসে আছেন। অন্যদিকে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হচ্ছে মিশরের কায়রো। এখানে যেসব আদর্শ ও ধ্যান-ধারণার চর্চা হয় তা সারা বিশ্বের মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলগুলো যেমন- ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশগুলোর মাধ্যমে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন কেন্দ্রের ক্ষমতার স্থানান্তর হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে পবিত্রভূমির দাবীর পক্ষে-বিপক্ষে এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম কমিউনিটি বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। রক্ষণশীল কেন্দ্রসমূহ অধিকতর শক্তিশালী, যোগ্যতাসম্পন্ন ও উদার মুসলিমদের চাপের মুখে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে।

যদিও ইসলামে আদর্শিকভাবে সাম্য এবং উন্নয়নমুখী পার্থিব জীবনযাপনের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়, কিন্তু বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ের, যেকোন মানদন্ডের বিচারে যার কোন অবস্থানই নেই। এবং এ প্যারাডক্স সম্পদশালী তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোতেই বেশি প্রতীয়মান হয়। যেখানে আদর্শগত দিক থেকে ইনসাফ এবং ভাতৃত্ববোধের চর্চা হবার কথা, সেখানে দেখা যাচ্ছে একদিকে ধনী মুসলিম দেশগুলো বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে, দামী দামী সব মিলিটারী অস্ত্র-শস্ত্র কিনছে, অন্যদিকে ফিলিপিন, পাকিস্তান, ফিলিস্তিনের মতো দেশগুলো থেকে শ্রমিক আমদানী করা হচ্ছে! ১৯৯০-৯১-এর উপসাগরীয় যুদ্ধের পর এ পরিস্থিতি আরো বেশি নাজুক হয়েছে। অধিকাংশ জনগনের কর্মসংস্থানের অভাব, দ্রুত নগরায়ন, ভারসাম্যহীন উন্নয়ন প্রকল্প – সবকিছুই একসাথে শুরু হয়েছে মুসলিম উম্মাহর মাঝে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন মুসলিম সমাজে উপার্জন আর সম্পদের মাঝে বিস্তর ফারাক দেখা দিয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় তাদের মাঝে সম্পদের সুষম ও দক্ষ বন্টন হয়েছে খুব কমই।

ইসলামে সুদ হারাম হবার বিষয়ে পশ্চিমাদের মাঝে নানারকম কনফিউশন থাকার ফলে মুসলিম দেশগুলোতে উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ খুব ধীরগতিতে হয়। আবার মুসলিম বিনিয়োগকারীরা অমুসলিম দেশগুলোতেই নিজেদের অর্থ লগ্নি করতে স্বস্তিবোধ করে, কারণ সেখানে থেকে লাভও বেশি পাওয়া যায়, আবার ঐসব দেশগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অনেক স্থিতিশীল ও নিরাপদ। আবার কোথাও কোথাও মানুষজন যদি তার কমিউনিটির সুবিধার্থে বিনিয়োগ করতে চায়, তারাও নানাবিধ অন্যরকম সমস্যার মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশে গ্রামীন ব্যাংক গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে যা ব্যক্তি পর্যায়ে বা সামষ্টিকভাবে বিনিয়োগ করা যায়। সেখানে মূলধনের পরিমাণ খুব অল্প আর সুদও নির্দিষ্ট। মূলধন আগে পরিশোধ করতে হয়, এরপর বাকী থেকে যাওয়া অল্প পরিমাণ মূলধনের উপর সূদ নির্ধারিত হয়। বাতসরিক শতকরা ২০ ভাগ সুদ যদিও পরিমাণে বেশি মনে হয়, কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য মহাজনী সুদ ব্যবস্থার মাসিক ২০% সুদ বা বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দৈনিক ১০% সুদের তুলনায় এটা নিতান্তই ক্ষুদ্র পরিমাণের। বানিজ্যিকভাবে দক্ষ নয় এমনসব লোককেই গ্রামীন ব্যাংক অর্থ ধার দেয়। জনগণকে ব্যাংকের অফিসারদের মাধ্যমে ট্রেনিং দেয়া হয় কিভাবে তাদের চাহিদা মোতাবেক সঠিক পন্থায় পুঁজি খাটাবে। গ্রামীন ব্যাংক তার গ্রাহকদের কাছাকাছি থেকে তাদেরকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে সেবা দেয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে এবং এতে করে তাদের ঋণ আদায়ের পরিমাণ প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ। অথচ এই ব্যাংককে মহাজনদের পক্ষ থেকে বিবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাপেক্ষে এই ঋণ অনেক নিতান্ত পরিমাণের, আরেকদিকে যারা গ্রামের নারীদের ক্ষমতায়ন চান না তাদের বিরোধিতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। এ ব্যাংকটি ইসলামী আদর্শই বাস্তবায়ন করেছে, অথচ এদের বিরোধিতা করা হয়েছে অন্যান্য সুদীব্যবস্থার দ্বারা তাদের নিজস্ব ইসলাম চর্চার মাধ্যমে।

এ ধরণের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য থেকেই সমাজে নানারকম মতবিরোধ ও ক্ষোভ তৈরী হয়।সমানভাবে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের সরকারগুলোর শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হওয়াও একটি কারণ।একইভাবে রাষ্ট্রগুলোর আধুনিক হবার মূল লক্ষ্যও এড়িয়ে যেতে পারে না।সমসাময়িক বিশ্বে সহনশীল জ্ঞানময় জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আধুনিকতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কনসেপ্ট।আধুনিকতা মানে চলন-বলনে পশ্চিমাদের মতো হওয়া নয়, বরঞ্চ এর মানে হলো মুসলিম জ্ঞান-দর্শনে আরো কিছু সেকুলার ভাবধারা প্রবেশ করানো।ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ এ বিষয়টিকে সুন্দরভাবে অনুধাবন করেছেন যে, সেকুলার আর ইসলামী জ্ঞান বলে দুটো আলাদা বিষয় থাকতে পারে না, এ ধরণের সব জ্ঞানই ইসলামের মাঝে আছে। তাই তো উনার মতো একজন প্রণিধানযোগ্য ও সফল মুসলিম নেতা এক হাতে এমন এক স্বাধীন এবং অগ্রসর মুসলিম আদর্শ গড়ে তুলেছেন যেখানে নানা বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এটা করা হয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রতি পূর্ণ সচেতনতা ও শ্রদ্ধাসহ এক চমৎকার নৈতিক শিক্ষাপদ্ধতিকে ধর্মীয় বিশ্বাস সমুন্নত রাখার একমাত্র পন্থা হিসেবে। বর্তমানে অনেক মুসলিম বুদ্ধিজীবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন কিভাবে আধুনিক বিশ্বে মুসলিমদের পরিচয় তুলে ধরা যাবে, কিন্তু তারা পশ্চিমা মিডিয়ার কভারেজ পায় না, যেমনটা পায় কট্টরপন্থীরা।পশ্চিমা মিডিয়া কেবল সন্ত্রাসী আর উগ্রমনস্কদের প্রতিই আগ্রহী, অথচ যেখানে পশ্চিমা জনগণ রাজনীতিবিমুখ ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনযাপন নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে একদল শান্ত মুসলিম বুদ্ধিজীবি নীরবে গবেষণা করে যাচ্ছেন মানব জীবনে আভ্যন্তরীণ মূল্যবোধের কি ধরণের প্রয়োজনীয়তা আছে এর উপর।এই বুদ্ধিজীবিরা কেবল যে নিজ দেশে কট্টরপন্থীদের দ্বারা চাপের মুখে থাকে তা নয়, এরা পশ্চিমাদের কাছ থেকে প্রাপ্য স্বীকৃতি, সহযোগিতা কোন কিছুই পায় না। এখন সময় এসেছে মুসলিম নেতাদের নিজ দেশে আধুনিকতার ধ্যান – ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার।আর ইজতিহাদের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো ঠিক রেখে নীতিমালাগুলোর যুগোপযোগী ব্যাখা দাঁড় করানোর এবং সন্দেহজনক যে কোন কিছু যা বিভিন্ন সময়ে ইসলামে অনুপ্রবেশ করেছে সেগুলোকে ছাঁটাই করে ফেলার।

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সবকিছুই গ্রহণযোগ্য, কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব নির্ভর করবে কেবল পশ্চিমাদের করা উন্নতিগুলোর উপর তাহলে এজাতীয় ধ্যান-ধারণা অবশ্যই বর্জনীয়। এখানে মূল প্রশ্ন যেটা কেবল নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার আর এর উপর নির্ভরশীলতাই কি জীবনের দর্শন বদলাতে পারে, চাহিদার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, সমাজে খুব বড় ধরণের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে? যারা এসব নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করছে, দেখভাল করছেন, তারাই কি মানব জাতির নতুন নেতা বনে যাচ্ছেন? এসব জ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবিধাজনক বস্তুগত বৈশিষ্ট্যের চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো এ প্রযুক্তিগুলো কিভাবে ব্যবহার হবে, কি ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, কারা এসবের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করবেন? এটা খুব সহজেই বোঝা যায় সেকুলার কর্তৃপক্ষ কখনোই এসবের জবাব দিতে পারবে না, তারা কেবল ব্যবহারের সাংখ্যিক মানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কিন্তু গুণগত মানের কোন সিদ্ধান্ত দিতে তারা অপারগ।

এটা খুবই বিপদজনক যে মুসলিমরা কোন বাদ-বিচার না করেই পশ্চিমা যেকোন ধ্যান-ধারণা নিজেদের মাঝে গ্রহণ করে নিবে। তাদেরকে অবশ্যই ইসলামের আলোকে যাচাই করে দেখতে হবে। যাদের ইসলাম সম্বন্ধে পর্যাপ্ত ধারণা নেই, তারা ভাবে,

“ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপূর্ণ কিছু নয়, বরং এটা একটা আংশিক জীবন ব্যবস্থা, আধুনিক বিভিন্ন মতাদর্শ সংযোজনের মাধ্যমেই তা পূর্ণতা পেতে পারে। এই ইসলাম সম্পূর্ণ ব্যবস্থা হতে পারতো যদি এর কিছু মূল প্রতিশব্দকে পরিবর্তন করে নেয়া যেত যা কিনা অসতর্কভাবে নেয়া হয়েছে.........যারা ইসলামের পূর্ণাঙ্গ গঠনের ব্যাপারে জানেন, তারা খুব ভালভাবেই বোঝেন যে কোর ইসলামের কোনকিছুই পরিবর্তনীয় নয়।

পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যদি মুসলিমদের মাঝের নানা মতপার্থক্যকে খুব সিরিয়াসলি নেয়া হয় এবং তৃতীয় আরেক পন্থা খুঁজে বের করা হয়। যদি পশ্চিমাদের সবই বর্জন করা হয়, তাহলে ইসলামী ঐতিহ্যে সৃজনশীলতার আর উৎপাদনমুখী গতিশীলতার যে সুযোগ আছে সেটা পুরোপুরি দমিয়ে ফেলা হয়। বর্তমান বিশ্বে ইসলামের যে পুনর্জাগরণ ঘটছে তাতে কি দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ-বালাই, অশিক্ষার মতো যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর প্রতি প্রর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া হয়েছে?পুনর্জাগরণের কর্মীরা কি অতীত থেকে কিছু শিখেছে নাকি তারা এখনো নেশায় বুদ হয়ে আছে ইসলামী শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনার নিজ নিজ পছন্দের ভাষ্য নিয়ে?কি কি ক্ষেত্রে তারা নিজস্ব প্রতীক ও সংস্কৃতির চর্চা করবে? তারা কি এখনো পুরোনো আইন-কানুন নিয়ে পড়ে আছে, নাকি আইনের যুগোপযোগী সংস্কারের কথা ভাবছে?সমাজে নারী এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে এখনো কি কুরআন এবং সুন্নাহর শিক্ষার সাথে ধর্মান্ধদের মনোভাবের ফারাক আছে? এখনো কি রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কাফেররাই ধর্মান্ধদের প্রধান সমস্যা?এখনো কি নিজেদের ব্যাখ্যাই একমাত্র ঠিক এই বলে উম্মাহ্‌কে বিভিন্ন গোত্রে বা দলে ভাগ করে দেয়ার প্রতিই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িকারীরা ব্যস্ত? এসব বিভিন্ন ব্যাখ্যার পক্ষে শেষপ্রান্তে অবস্থান নিয়ে কি মুসলিম উম্মাহর মাঝে নানা উপদলের সৃষ্টি হচ্ছে?

আমাদের তাহলে এখন কি করতে হবে? ফজলুর রহমান এ ব্যাপারটা সঠিকভাবে অনুধাবন করেছেন। ইসলামের প্রয়োজন কিছু উন্নত পর্যায়ের মন যারা বিভিন্ন পুরাতন শব্দকে আদর্শের জায়গায় রেখে নতুন কিছু শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপন করবে। কোন আধুনিক ব্যক্তি কি আছেন পশ্চিমাদের বাদ দিয়ে আধুনিকতা গ্রহণ করে তাদের আকাংখাগুলো ভালভাবে বুঝতে পারবেন? পশ্চিমা সমাজগুলোতে এরকম বহু উদাহরণ আছে, যেখানে সব ধরণের প্রযুক্তিসহ আধুনিকতাকে গ্রহণ করার ফলে ঐতিহ্যবাহী প্রথাগুলো চাপা পড়ে গেছে এবং নতুন ধরণের মূল্যবোধের সৃষ্টি হয়েছে।

সীমাহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর উন্নতির ফলে বিশেষ করে স্বাধীন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আর বিদেশী ও তাদের মূল্যবোধের অবাধ আমদানীর ফলে, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট বস্তুবাদীতা আর বেশি বেশি সেক্যুলারিজমের কারণে আজ ভোগবাদীতা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থপরতা, অন্যায় সম্পদঅর্জন, অত্যধিক উচ্চাশা, অবাধ যৌনতা ও পরিবারের ভাঙ্গনসহ নানারকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।


(ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৫৪
২৩টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×