somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা (কমলগঞ্জ কলেজ এর সহপাঠী এবং প্রিয় বন্ধু ! প্রথম অংশ

১৯ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কখনো কি ভেবেছি বন্ধুদের অস্তিত্ত্ব আমার লেখায় উঠে আসবে ? আমি আমার ফেলে আসা দিনগুলো কে একেবারে সেই সময়ের মতোই অনুভব করছি । সেই রকম কখনো হেসে উঠছি , কখনো মুখ ভার । মাঝে মাঝে এমনও লাগে তুষার দেশের এই হিটার চালিত ঘর মেতে উঠেছে বন্ধুদের পদচারণায় । আর বন্ধু যে কি তাও তো বুঝলাম সতেরো বৎসর বয়সে ।

সবাই বলছে সিলেট মহিলা কলেজে ভর্তি করাতে । বাপিও একমত । সুযোগও পেলাম । একদিন বাপি কে বললাম :"বাপি , আমার খুব ইচ্ছা কমলগঞ্জ কলেজে পড়ার । তোমাদের সাথে দুটো বৎসর থাকি ।ইন্টার শেষ হলে তো চাইলেও আর থাকতে পারবো না ।" বাপি আমার কথা কোনোদিনও ফেলেনি । আমার পিতৃভাগ্য নিয়ে এমন কেউ নেই যে হিংসে করেনি । সবার অমতে রয়ে গেলাম । মানে আমার একমাত্র সাপোর্টার বাপি ।

আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে কালো একটা স্কার্ট পড়ে ঠাকুর ঘরে গীতা পাঠ আর প্রার্থনা সেরে রওয়ানা দেবো , সেই সময় বাপি বললো এমন একটি কথা যা আমার জীবন কে পরিচালিত করেছে , করছে এখনো :
"নীলমন একটা কথা মনে রাখিস জীবনের এই সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এই সময় সব কিছু ভালো লাগবে , রঙ্গীন জীবন । আর যে কোনো ছেলেকে দেখলেই ভালো লাগবে , ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে । কিন্তু মা রে সেই ভালোবাসায় যদি কোনো খাঁদ থাকে ধরতে পারবি না । তাই কাউকে যদি ভালোবেসে ফেলিস ইন্টার -এর পরে সিদ্ধান্ত নিস । তখন কোনটা ভুল , আর কোনটা শুদ্ধ তুই নিজেই বুঝতে পারবি ।" এতো সুন্দর সাবলীল ভাবে বলেছে বাপি , মেনে চলেছি বলেই হয়তো এমন বন্ধু পেয়েছি একান্ত জীবনে ।

যাক ভর্তি হলাম । প্রথম ক্লাশ -- বাপির সাথে বাসস্ট্যান্ড অব্দি , তারপর শুরু হলো একা পথচলা । কি এক্সাইটিং ! একা , আহ্ ! একটু লজ্জ্বা পেয়ে গেলাম একা । অবশ্য বাসে দেখা হলো নাসিমা আক্তার বীনার সাথে । সহপাঠী যদিও ছিলাম , কিন্তু দু'জন দুই স্কুলে ।আবার এক হওয়া । কলেজ ড্রেস ছিলো না , স্কার্ট পড়ে যাওয়াতে সবার চোখ আমার দিকেই , কিছুটা অবাক আর কারো কারো চোখে ঔৎসুক্য । সোজা মেয়েদের কমন রুমে । পরিচয় পর্ব শুরু হলো । সিনিয়র আপুরা আর আমরা । পরিচত হলাম : বদরুননাহার (আমি ডাকতাম নাহার - ভীষন শান্ত মেয়ে ) , শম্পা , মিলি (মিন্তু) , মিলি (২) , সবিতা (হাসি - খুশী মিষ্টি সবাই ডাকতো ছবি ,যদিও ছবি তার নাম ছিলো না ), শান্তি , নমিতা (এখন সে সিলেট রাগিব রাবেয়া হাসপাতালের ডাঃ ) , শারমীন (যাকে সবাই অহঙ্কারী বলতো , কিন্তু আমার সাথে কোনোদিনও ঐ রূপ দেখায়নি ) , রোশনী সেই নমুজা থেকে আসতো শান্ত-শিষ্ট মেয়েটি আমাকে দেখলেই একটা হাল্কা হাসি দিতো আর আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো ।ওর সব কথা আমাকেই বলতো সে । আর রাজলক্ষী পাল লিলি (প্রতিদিন তার জন্য আনকোরা কবিতা নিতেই হতো এবং অবশ্যই তার জন্ম হওয়া চাই বাস ধরার পনেরো মিনিট আগে । উফ্ , ভালোবাসার কি অসহ্য যন্ত্রণা !) , পপি , দুঃখের সাথে বলতে হয় আরো দু'জন যাদের নাম প্রায় এক ঘন্টা ধরে ভেবেও বের করতে পারলাম না , কিন্তু চেহারাটা একেবারে চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে (অবশ্য বই যখন বের করবো তখন ছবি থাকবে ) । আরো অনেক ছিলো মেয়ে , কিন্তু নিত্য রাগ - অভিমান - আনন্দের সঙ্গীদের নামই তুলে ধরলাম ।

প্রথম দিন ক্লাশ সেদিন সম্পূর্ণ ক্লাশে আমি , নাহার আর নাসিমা (আমাদের নাম দিয়েছিলাম আমি নিজেই এন কিউব- N3) এবং ছেলেদের মধ্যে কবি কাইয়ূম , হিরণ আর কয়েকজন । স্মরণশক্তি এবারও প্রতারণা করলো । আমরা নতুন , মজার ব্যাপার আমাদের স্যারও নতুন । আমরাই প্রথম ব্যাচ স্যারের । স্যারের নাম আবু রায়হান সেলিম , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়েছেন । কেন আমি তাঁকে নিয়ে বলছি , প্রশ্ন উঠতেই পারে । আমার লেখাগুলো যে চমৎকার কবিতা তা তিনিই বলেছিলেন । তাঁর কথাতেই কবিতাগুলো বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় পাঠাই আর আমায় অবাক করে দিয়ে নিজের নাম ছাপার হরফে স্থান পায় । তিনি আমার গুরু , নিঃস্বার্থ বন্ধু এবং বড় ভাই । আমার জীবনের প্রতিটি
ক্ষেত্রে তাঁর অবদান । আস্তে আস্তে সবই আসবে ।

যাক্ প্রথম ক্লাশে স্যার এতো চমৎকার করে কিছু কথা বললেন এখনো মনে আছে আর এই মূহুর্তে জীবন্ত হয়ে যেনো সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।সবচেয়ে যা মজার তা হলো আমি জীবনে প্রথম যেদিন কলেজে শিক্ষকতা জীবন শুরু করি স্যারের বলা আমাদের প্রথম ক্লাশে প্রতিটি কথা আমাকে সেদিন তাড়া করে ফিরছিলো ।স্যার কে বলেছিলাম জানেন স্যার আজকেও এই শিক্ষকতা জীবন আপনার সাহায্য নিয়েই শুরু হলো ? স্যার বললেন কেমন ? তখন বলার পরে উনি অবাক আমাকে বললেন তিনি নিজেই কি বলেছিলেন মনে নেই , আমি মনে রেখেছি কি করে ! আমার শিক্ষকতার খবরে যদি সবচেয়ে বেশী কেউ খুশী হয়ে থাকেন তিনি আমার রায়হান স্যার ।স্যার কে নিয়ে সামনে আরোও গল্প করবো ।

প্রথমদিন কোনো পড়ালেখা হলোনা । রোল কল শেষেই স্যার জিজ্ঞাসা করলেন :"তোমরা কে কে লেখালেখি করো ?" কবি কাইয়ূম দাঁড়ালো । নাসিমা কানের কাছে বলেই যাচ্ছে "এই তুই ও তো লিখিস , দাঁড়া না ।" আমি ওকে থামিয়ে দিলাম । ও করলো কি লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো আমি লেখালেখি যে করি । আর কি রাফ একটা কবিতা সেটাই নিলাম :


আমি কোথায় যাবো ?
কোন বুকে শুয়ে বলবো আমি নষ্ট হয়ে গেছি পৃথিবী
হাতের তালুতে হেমলক
তবুও ঠোঁটের কাছে এনে বলতে পারিনা
আমি আত্মহত্যা করতে চাই
আকাশের সূর্য্যে
বিষাক্ত আলফা ভায়োলেট রে
তবুও চাইতে পারিনা
আমার চারপাশে অজস্র মানুষ
তবুও কারো হাত ছুঁয়ে বলতে পারিনা
আমিও বাঁচতে চাই ।(নিঃসহায় , ১৯৯১ সাল)

অদ্ভূতভাবে ১৯৯১ সালে "নিঃসহায়" নামে এই কবিতাটি প্রকাশ হয় সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী পাতায় , আর তা বহন করে আনে আমার প্রিয় এক বন্ধু মিন্টু । তার আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিলো যেনো তারই কবিতা ।
স্যার আমার ওই কবিতা দেখে বলেছিলেন :"তুমি কি পত্রিকায় লিখো ?" আমি না বললাম । তারপর তিনি এমন এক কথা বললেন যা এখনো আমি ধারণ করি :
"নীলাঞ্জনা একটা কথা শোনো নিজে যে কাজ করো আর সেটা যদি ভালো হয় তাকে কোনোদিনও গোপন কোরোনা । কেউ প্রশংসা করলে বিনয় দেখাও । তুমি কি জানো কি সহজ ভাষায় একটা মন কে তুলে ধরেছো ? এটাকে পত্রিকায় পাঠাও ।" সেই সময় জানতামও না কিভাবে পত্রিকায় দিতে হয় । স্যার তাও বলে দিলেন । কবি কাইয়ূম একটু দুঃখ নিয়েই বললো :"নীলাঞ্জনা তোমার কবিতা স্যার তো পছন্দ করলেন ।আমারটা ভালো বললেও অতোটা বুঝি ভালো না ।" আমি আরো বললাম : "আরে না ভালো হয়েছে , আমি তো লজ্জ্বা পাচ্ছিলাম তাই আমায় এমন করে বলেছেন । বুঝলে ?" আর সেটাই সত্যি । স্যারের এই গুণেই অনেক ছেলে - মেয়ে এগুতে পেরেছিলো । আর আমি যতোটা পরিচিতি পেয়েছিলাম ওই বয়সে খুব কম জনই পেয়ে থাকে , তাও স্যারের অনুপ্রেরণায় । তাইতো সিলেটের প্রধান কবি দিলওয়ার শমশেরনগর এলেই আমায় খুঁজতেন :"আমার ছুটো কইন্যা কই ?"





ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম
৩০ - ০১ - ১০ ইং
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:৪৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×