somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীরাঙ্গনার থুতু

১৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতিদিন সকালে আহমদ আলির ঘুম থেকে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। তারপর উনার জন্য বেড টি আসে। রকমারি মসলা দিয়ে বানানো স্পেশাল চা। এই চা উনি প্রথম খেয়েছিলেন পাকিস্তান আমলে, নবাব সাহেবের সাথে। নবাব সাহেব সৌখিন ছিলেন, বাঈজির নাচ দেখতে পছন্দ করতেন ভরা মজলিশ নিয়ে। কথিত ছিল উনি একসাথে একাধিক নারীর সাথে সঙ্গম করতে পছন্দ করতেন। আহমদ আলি সাহেব আরও নানা কারণে নবাব সাহেবের ভক্ত ছিলেন। এখনো আছেন,প্রতি শুক্রবার তাই তিনি নবাব সাহেবের জন্য একবার করে কুরআন খতম দেন। অবশ্য মাদ্রাসার ছেলেরাই সে ‘কষ্ট’টা করে। উনার বয়স হয়েছে আর কত! জুম্মার পর তাদেরকে পেট ভরিয়ে গরু ভুনা দিয়ে পোলাও খাইয়ে দেন। নবাব সাহেবের মৃত্যু হয় পূর্ব পাকিস্তান ভারতের হাতে আসার ঠিক আগে। আল্লাহর লাখো শুকরিয়া কাফেরদের শাসন নবাব সাহেবের দেখতে হয়নি। উনি যে আসলেই মুমিন পাকিস্তানি ছিলেন তার বড় প্রমাণ এইটাই। সামান্য একটা গৃহযুদ্ধ নিয়ে আজকে তাদের কত মাতামাতি। আবার নাকি কী নারী নীতি প্রণয়ন হচ্ছে। আল্লাহর পাক কুরআনকে অবমাননার ধৃষ্টতা তারা দেখাচ্ছে। হবে না ! দেশ তো চালাচ্ছে কাফের আর মুশরিকরা। এই ইস্যু নিয়ে অবশ্য তিনি ও তার দল মাঠ গরম করে রাখছেন। তবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কোনই আশা নেই। ক্ষমতায় আসতে হবে ইসলামি শাসনে বিশ্বাসী দল। এর জন্য উনাদের একটা ঐক্যজোটও আছে।

আহমদ আলি সাহেব গোপনে একটি জঙ্গী দলও চালান যার নাম ‘দ্বীন-ঈ-ইসলাম,বাংলাদেশ’। সংগঠনের মূল লক্ষ্য আজকের এই বিভ্রান্ত যুব সমাজকে ইসলামের পথে নিয়ে আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেল্লাল্পনা করা মেয়েদের নামাজি করা আর সকল মুমিন ভাইদের মসজিদ্গামী করে তাদের ইসলামের সঠিক পথে নিয়ে আসা। আর এর মাধ্যমেই একজন মুমিন ভাই এবং বোন দ্বীন-ঈ-ইসালামের সদস্য হতে অনুপ্রানিত বোধ করবেন। আহমদ আলি সাহেবের আজকে মিটিং আছে ঢাকার বাইরে। ঐখানে দ্বীন-ঈ-ইসলামের গোপন প্রেস। যেখান থেকে তাদের তাত্ত্বিক গুরু আল্লামা শাইখুল হাদীস সাহেবের জিহাদী বই এবং জিহাদ সম্পর্কে আহমদ আলি সাহেবেরও বই বের হয়। সব বইয়েই জিহাদী অনুপ্রেরণামূলক কথা থেকে। যার ফলে মুমিন যুবক ভাই ও বোনেরা জিহাদ করতে উৎসাহ পায়। বইয়ে আরো লেখা থাকে ইহুদি-খৃষ্টান-নাসারা সভ্যতার কথা , তাদের দুর্ভিসন্ধির কথা,তাদের ষড়যন্ত্রের কথা এবং পরিশেষে তাদের কীভাবে নির্মূল করা যায় তার বিস্তারিত।

আহমদ আলি সাহবের মাদ্রাসাও আছে একটা, কওমি মাদ্রাসা। যাতে ঐ মূর্খ বিজ্ঞানের বই একদম পড়ানোই হয় না। যারা কয়দিন পরপর সূর্যকে বড় আর ছোট করে তাদের কথায় যাতে বাচ্চারা ঈমান নষ্ট না করে তার কথাও বলা হয় মাদ্রাসায়। আরো বলা হয় শুধু মুখেই ঈমান আনলেই হবে না নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে জিহাদি বই পড়ে ঈমান পোক্ত করতে হবে। একদম মুমিনের সার্থকতা এইখানেই যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ইসলামের মূল কথা বুকে ধারণ করে। আর ইসলাম বলে যতোদিন এই পৃথিবীর বুকে একজন মুমিনও থাকবে ততোদিন পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত রাখ। আহমদ আলি সাহেবের পরিকল্পনায় আরও অনেক কিছুই আছে। তবে তার আগে তিনি এইরকম মাদরাসা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চান যাতে দ্বীন-ঈ-ঈসলাম বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। এর জন্য দাতা সংগঠনগুলো থেকেও ক্রমাগত চাপ আসছে। বিশ্বের নামি-দামি সব জঙ্গো সংগঠন উনাকে টাকা দেয় সংগঠনকে আরো মজবুত করার জন্য। উনি এই লক্ষে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আহমদ আলি সাহেব অবিচল থাকবেন ইনশাল্লাহ।

আহমদ আলি সাহেবের ঘরে কোন আয়না নেই। এর মূল কারণ অত্যন্ত গোপনীয়। এতোটাই গোপনীয় যে এই কথাটি উনি উনার কোন বিবিকেই বলেন নাই। এই ঘরেও উনি কখনো একলা থাকেন না। চার বিবির এক বিবি অবশ্যই থাকবে, এইটা তার কড়া হুকুম। রাতে উনি না ঘুমানো পর্যন্ত ছোট বিবি পা টিপে দেয়, শরীর ভাল থাকলে এক-আধটুক আদর সোহাগও হয়। চার বিবির সাথে একত্রে সঙ্গম করা উনার সারা জীবনের খায়েশ রয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তিনবারের পর আর শরীর ‘সাথ’ দেয় না।

উনার ‘গোপন কথা’টার ইতিহাস বেশ পুরোনো। সেই ৭১ এর কাহিনী,যখন কাফের ইন্ডিয়া আর আওয়ামীলীগের মুক্তিবাহিনীর সাথে মুমিন পাক বাহিনীর লড়াই হয়েছিল। পাক বাহিনী ছাড় দেয়াতেই না মুজিব বাহিনী জিতে গেল। সেই সময় - মনে হয় অক্টোবর মাস। উনার বাড়ি থেকে সাহায্যের জন্য দলে দলে লোক আসছে, আর উনি সবাইকে শান্তি বাহিনীর সদস্য করে নিচ্ছেন। এমন সময় গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী কাশেম চাচা তার ভর যৌবনা কন্যাকে নিয়ে উপস্থিত হলেন আহমদ আলি সাহেবের বাড়িতে। যুবক আহমদ আলি কাশেম চাচার মেয়ে জমিলাকে দেখে মনে মনে শায়ের আওড়ালেন-
“কসম খুদাকি জো আপকো ইনসান বানায়া
কসম খুদাকি জো আপকো ইনসান বানায়া
মে আগার খুদা হতা তো আপকো চান্দ বানা দেতা।’


যুবক আহমদ কাশেম চাচাকে থেকে যেতে বললেন। বললেন আপনার ও বোন জমিলার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা শান্তিবাহিনী দিবে। কিন্তু কাশেম চাচা স্ত্রী আর ঘর গেরস্তের কথা ভেবে থাকতে পারলেন না। শুধু যাওয়ার আগে আহমদ আলির বুড়ো মাকে বললেন -“বইনগো খালি ইজ্জত বাঁচানির লাগি মাইয়াটারে আপনের হিল্লায় রাইখা গেলাম-আমি গন্ডগোল শেষ হইলেই মাইয়াটারে নিয়া যামু”।

এরপর, আহমদ আলি জমিলাকে এক ভর দুপুরে চা বানিয়ে আনার কথা বলে তার শোবার ঘরে এনে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে পাক বাহিনীর কমান্ডার মিনহাজ খানের হাতে তুলে দিল। পাক বাহিণীর হাতে তুলে দেয়ার আগে জমিলা বারবার বলছিল-“ভাইগো সারাজীবন আপনার বান্দী হয়া থাকুম তাও এগো কাছে আমারে দিয়েন না, ভাই গো আপনে না আমারে বইন ডাকছিলেন!” আর এর জন্যই খালি ঘরে জমিলা বারবার ঘুরে ফিরে আসে তার বিচার চাইতে।আহমদ আলির মুখে একদলা থুতু আর রক্ত ছুড়ে মারে।

[যারা যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার চায় তাদের উৎসর্গ করলাম]
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×