somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপিঃ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ... :দীর্ঘশ্বাসের ইমো:

১৮ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১. আজকে জুম্মার নামাযে যাই নাই, কেন যেন ভাল লাগতেছে না, বসে আছি অফিসেই, আমি সেই কয়েকটা অভাগাদের মধ্যে একজন যারা শুক্রবারেও অফিস করে। অবশ্য শুক্রবারে অফিস করার একটা বড় সুবিধা হল, অফিসে বস, টস কেউ থাকে না। যে বনে বাঘ নাই, সে বনে শেয়ালই রাজা। শেয়াল হয়ে রাজত্ব করতে খুব একটা খারাপ লাগে না। তাছাড়া শনি আর রবি টানা দুইটা দিন অফ পাই। লাইফ ইজ নট ব্যাড অ্যাট অল।

০২. আজকে রাতে স্বপ্নে দেখলাম, টিভির সামনে বসে আছি, এখনকার টিভিটা না, ১৯৯২ সালের আমাদের বাসার সেই ন্যাশনাল সাদাকালো ১৪ ইঞ্চি টিভিটার সামনে। টিভিতে সেই গোল রঙের একটা সাদাকালো গোলক, পরে কালার টিভি কেনার পরে জেনেছি গোলকটা আসলে রঙিন। একটা টুউউউউ করে শব্দ হত বিকেল পৌঁনে পাঁচটা থেকে। তিন মিনিট আগে থেকে যন্ত্রসংগীতে বাজত, ও আমার, বাংলাদেশের মাটি। এরপরে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত, এরপরে বাইবেল, গীতা কিংবা ত্রিপিটক পাঠ। ত্রিপিটক পাঠ করতেন শীল ভদ্র ভিক্ষু। লোকটাকে দেখলে খুব মায়া লাগতে কেন যেন, গম্ভীর কণ্ঠে তিনি ত্রিপিটক পাঠ করতেন। এরপর অনুষ্ঠান পরিচিতি। মন দিয়ে শুনতাম আজ কি কি আছে।

প্রতি বৃহস্পতিবার এক পর্বের সাপ্তাহিক নাটক হত, বুধবার ম্যাকগাইভার, মঙ্গলবারে ধারাবাহিক নাটক। নয়টা বাজলেই টিভির সামনে বসে পড়তাম। "তথাপি" নাটকের লাটভাই (তারিক আনাম) এর সাথে, কিংবা "রূপনগর" নাটকের হেলাল (খালেদ খান) কিংবা শামীম (তৌকির আহমেদ) এর সাথে সময়টা দারুণ কাটত।

আর এখন, বাসায় দুইটা টিভি, কিন্তু শেষ কবে নাটক দেখেছি মনে পড়ছে না। :(

০৩. একটা সময় ছিল, জীবনে একমাত্র চাওয়া ছিল রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি আর বিকেল পাঁচটা বাজলেই বাইরে খেলতে যাওয়ার স্বাধীনতা। আর এখন, রাত দশটা, এগারোটা, বারোটা পর্যন্ত জীবিকার তাগিদে থাকতে হয় বাইরেই। বাসায় ফিরে ঢেকে রাখা ঠান্ডা ভাত, তরকারী গরম করতেও ইচ্ছে করে না কোন কোন দিন। ক্লান্ত দেহ বিছানায় এলিয়ে দিতে দিতে বলতে ইচ্ছে করে, আম্মু, আমাকে আবার ছোট করে দাও, আমি তোমার কোলে উঠে ঘুমাব।

০৪. আম্মু টিচার হওয়ায়, সাত বছরের জায়গায় চার বছর বয়সেই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম, কিন্তু বিধি বাম, ক্লাসে আমার নাম উঠত না হাজিরা খাতায়, আমি ছিলাম দুধ ভাত স্টুডেন্ট। আব্বুর চাকুরীর সুবাদে অনেকটা দীপু নাম্বার টু স্টাইলের শৈশব কেটেছে আমার সিলেটে, ছাতকে, ময়মনসিংহে এবং সবশেষে মিরপুরের পীরেরবাগে। তফাৎ একটাই, দীপু প্রতিবছর প্রমোশন পেত, আমি পেতাম না, প্রতিটা বছরই ক্লাস ওয়ানে পড়তে পড়তে যখন আব্বু বলল, এবার তুমি ক্লাস টু তে পড়বে, বলে আমার হাতে একটা ইকোনো কলম তুলে দিল, সেদিন আমার খুশি দেখে কে? পেন্সিল দিয়ে আর নয়, এখন আমি কলম দিয়ে লিখবো, আমি বড় হয়ে গেছি না?

০৫. ১৯৯৯ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে যেদিন প্রথম গেলাম, আমার দশজন রুমমেটের মধ্যে মোটা ছেলেটা দেখি কাঁদছে, দেখাদেখি আরো কয়েকটা ছেলে কান্না জুড়ে দিল। আমি মনে মনে হাসতে লাগলাম। বাবা মা কে ছেড়ে এই প্রথম বাইরে থাকছি, অথচ আমার একটুও খারাপ লাগে নি। ওদের কান্না দেখে মনে হল, আমি কি খারাপ, আমার কেন কান্না পাচ্ছে না? চামচ দিয়ে খাওয়া আর সকালের মাইল খানেক দৌড়ের কোনটাই আমাকে কাবু করতে পারে নি তখন। অথচ ২০০৫ সালে সেই অচেনা দশটা ছেলে সহ ৫৩ জন বন্ধুকে ছেড়ে আসার সময় কি না আমি কেঁদে ফেললাম!

০৬. আমার বন্ধু অনেক, বিএমডব্লিউ হাঁকানো শিল্পপতির পোলা (ভার্সিটিতে পরিচয়) থেকে শুরু করে সাধারণ একজন মুদি দোকানদার (ছোটবেলায় একসাথে খেলতাম বিকেলে) সব ধরনের বন্ধুই আছে আমার। পাট লইতেছি না, আমি সবার সাথেই মিশতে পারি, যেখানে যেমন দরকার, তেমন হয়ে যাই।
কিন্তু অবাক হয়ে গতকাল রাতে আমি আবিষ্কার করলাম, আমার কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নাই, যাকে আমি আমার সবকিছু খুলে বলতে পারি। :(

০৭. পোস্ট লম্বা হয়ে যাইতেছে, শেষ করা উচিত। জোক্স দিয়ে শেষ করুম ভাবছিলাম, কিন্তু এখন জোক্স মনে পড়তেছে না, মুড অফ।
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×