somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌম কর্তৃত্ব

১৮ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌম কর্তৃত্ব
ফকির ইলিয়াস
=================================
প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেই সার্বভৌম সংসদের একটি কর্তৃত্ব থাকে। থাকা উচিত। কারণ জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে এমপিদের সংসদে পাঠান। সংসদীয় গণতন্ত্রে এমপিদের অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় সংসদ অচল হয়ে পড়ে। তাই যেভাবেই হোক সংসদ সচল রাখা সরকারি দলের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবেই বর্তায়।
বাংলাদেশে স্বাধীন-সার্বভৌম সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যদের অবস্থা নাজুক সব সময়ই। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সামরিক রক্তচক্ষু রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার পাঁজর ভেঙে দেয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটাতে বেশ কার্যকর। আর তাই সামরিক শাসকরা সে ব্যবস্থাটিকেই বেশি পছন্দ করেন। সামরিক শাসনের আরেকটি হুজুগ আছে। আর তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক উর্দি পরা সৈনিক রাজপথে নামিয়ে তাৎক্ষণিক মানুষের মন জয় করা যায়। তবে সমস্যা হচ্ছে সেই উর্দি পরা জেনারেলরা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করে খায়েশ পূরণে ব্যস্ত হন। নিজেদের 'ধোয়া তুলসীপাতা' দাবি করলেও প্রকারান্তরে তারা কোটি কোটি টাকা ঢেলে রাজনীতিকে প্রকৃত রাজনীতিকদের জন্য ডিফিকাল্ট করে তোলেন।
টাকা ঢেলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ঘটনা বিশ্বে নতুন নয়। অতিসম্প্রতি লিবিয়ায় যে গণযুদ্ধ চলছে, সেখানেও চলছে প্রায় একই রকমের ঘটনাবলি। খবর বেরিয়েছে, স্বৈরশাসক গাদ্দাফি তার প্রতিপক্ষ বিদ্রোহীদের দমনে তার সপক্ষের সৈনিক সমর্থকদের হাতে কাঁচা কাড়ি কাড়ি অর্থ তুলে দিচ্ছেন। এবং হুঙ্কার দিয়ে বলছেন, আমার জয় সুনিশ্চিত।
এই যে জয়ের স্বপ্ন (নাকি দুঃস্বপ্ন) সেটাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রকৃত ভরসাকে রক্তরঙে লালচে করে তুলছে। মানুষের কণ্ঠ রোধ করে তাদের মৌলিক অধিকারকে টুঁটি চেপে হত্যা করা হচ্ছে। আমার এ কথাটি বারবারই কেন জানি মনে হয়, বিশ্বের উন্নয়নশীল, গণতন্ত্রকামী দেশগুলোর অধিকাংশ শাসকগোষ্ঠীই চান না, সব দেশের মানুষ প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক। কারণ মানুষ জেগে উঠলে সেসব দেশের রাজনীতিকের ছলচাতুরীর বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, মানুষকে কী দমিয়ে রাখা যায়। না যায় না। বাংলাদেশে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান সে প্রমাণটি করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশ। '৫২, '৬৯ কিংবা '৭১ সে তো বাঙালির মহান বিজয়ের বিভিন্ন অধ্যায়।
ঠেকানো যায়নি তিউনিশিয়া-মিসরেও। এর কারণ হচ্ছে, দীর্ঘ তিন দশক কিংবা তারও অধিক সময়ের স্বৈরতন্ত্রের জাঁতাকল সেসব দেশের মানুষকে হাফিয়ে তুলেছিল। রাজপথ দখল ছাড়া তাদের কোন গত্যন্তর ছিল না। অত্যন্ত আশার কথা, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদী মৌলবাদীরা আশকারা পায়নি। পেয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষরা। তারা সংগঠিত হয়েছে।
এ তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের চিত্র বেশ বিপরীত। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে ধর্মীয় মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী অর্ধশিক্ষিতরা আদিমতার শিকল পরাতে চেয়েছে সমাজের মুক্তমনা মানুষের হাতে পায়ে। পাকিস্তানে মুক্ত চিন্তাসম্পন্ন রাজনীতিকদের যেভাবে বর্তমান সরকারের সময়েও হত্যা করা হচ্ছে তা গোটা বিশ্বের গণতন্ত্র, মুক্ত চিন্তাবাদীদের জন্য অশনি সংকেত বটেই।
ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশে জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের তথাকথিত গণতান্ত্রিক ছত্রছায়ায় জঙ্গিবাদীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল গোটা জাতির ওপরে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় ছিল সেই পাকিস্তানি তালেবান চক্রের মদদপুষ্টদের নেপথ্য হাত। যারা এখনো বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাকে মেনে নিতে কষ্টবোধ করে।
খুবই অবাক করা বিষয় হচ্ছে, স্বার্থবাদী ধনিক গণতন্ত্রবাদীরাও 'ধর্ম'কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পিছপা হন না। বর্তমান সময়ে মার্কিন কংগ্রেসে ইসলাম ও জঙ্গিবাদ শীর্ষক একটি শুনানি চলছে। এর অন্যতম আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান পিটার কিং। নিউইয়র্কের লংআইল্যান্ড থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান তিনি। তার এ শুনানির উদ্দেশ্যে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান এবং ধর্মীয় মৌলবাদ বিষয়ে নানা সমস্যার সমাধান বের করা। কিন্তু কথা হচ্ছে, মৌলবাদের কি কোন ধর্মীয় পরিচয় আছে? ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, ক্যাথলিক বিভিন্ন ধর্মালম্বীর মাঝে কি গোড়া মৌলবাদী, কট্টরপন্থি নেই? তাহলে মুসলমানদের নাম উল্লেখ করে এমনভাবে শুনানির মুখ্য উদ্দেশ্য কী?
বলা হয়ে থাকে, সাদ্দাম হোসেন, ওসামা বিন লাদেন, ওমর আবদুর রহমান এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের অলিখিত ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাদের অবস্থান এবং বর্তমান ঘটনা প্রবাহ বিশ্ববাসী দেখেছে। তা লিখিত হয়েছে অন্যভাবে। এসব ধারাবাহিক ঘটনা প্রমাণ করে যারা বিশ্বে সন্ত্রাস দমনের ইজারা নেয়ার জন্য একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছেন, তারাও নিজ স্বার্থের বিষয়ে অধিকাংশ সময়েই 'একচক্ষু হরিণ' এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন।
খুবই স্পষ্ট কথা, কারও গায়ে ধর্মীয় লেবাসের লেফাফা লাগিয়ে তাকে সন্ত্রাসী বানানো যাবে না। বানানো উচিতও নয়। আগেই বলেছি যে কোন রাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিরা সার্বভৌম, নিরপেক্ষ, সৎ না হলে রাষ্ট্রের জনগণের অসহায় না হয়ে কোন উপায় থাকে না। আর তা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদই হোক আর মার্কিন কংগ্রেসই হোক।
পরমত, ভিন্ন চিন্তার এক সম্মান জানানোর প্রক্রিয়া আছে। কোন ভিন্নমত যদি ধর্ম, গোত্র, জাতি, বর্ণের স্বার্থপরিপন্থী হয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেয় তা কখনই মানবতার, জাতিপুঞ্জের কাম্য হতে পারে না। এ বিষয়গুলো জানার, বোঝার পরও বরেণ্য রাজনীতিকরা যখন না জানার ভান করেন তখন ধরে নিতে হয় তারা কোথাও কোন গোলযোগ বাধানোর চেষ্টা করছেন।
বিশ্ব আজ নানা রকম দুর্যোগের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশের চরম বিপন্নতা কাঁপিয়ে তুলেছে বিশ্বমানবের ভিত। জাপানের অতিসাম্প্রতিক ভূমিকম্পের জের হিসেবে ৩০ হাজারেরও অধিক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যা এ লেখার সময় পর্যন্ত ১০ সহস্রাধিক ছাড়িয়ে গেছে।
আমরা কি তা থেকে সামান্যতম শিক্ষাটুকু নেব না? গণমানুষের স্বার্থরক্ষা করতে হলে রাজনীতিকে গণমুখী করতে হবে। কেউ ভোট পেয়ে জিতে এসে যদি জনগণের আমানতের বরখেলাপ করেন, সেই দায় তো জনগণ নিতে পারে না। নেয়ার কথাও নয়। দুঃখের কথা, তা অনেকেরই মনে থাকে।
নিউইয়র্ক, ১৬ মার্চ ২০১১
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ/ ঢাকা/ ১৮ মার্চ ২০১১ শুক্রবার প্রকাশিত

ছবি- লুসি এন্ডমিটো
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×