Published : 31 Jul 2013, 08:32 AM
নাটকপাড়া হিসেবে খ্যাত বেইলি রোড এখন খাবার আর পোশাকের দোকানের জন্য পরিচিত। খাদ্যরসিকদের আনাগোনায় যে রাস্তা মুখরিত থাকে সেখানে রকমারি ইফতারির আয়োজন থাকবেন না তা কি হয়! বেইলি রোডের ইফতারির বাজার নিয়েই এই বিশেষ আয়োজন।
ঢাকার একটি সুপরিচিত সড়ক, রাজধানীর পুরান অভিজাত এলাকা। বেইলি রোডের নামকরণ নিয়ে তিন রকম তথ্য রয়েছে। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘ঢাকা কোষ’ থেকে জানা যায় স্যার চার্লস স্টুয়ার্ট বেইলির নামানুসারে এই রাস্তার নামকরণ করা হয়। ১৯১১ সালের ২২ আগস্ট থেকে ১৯১২ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত চার্লস বেইলি ছিলেন পূর্ববাংলা ও আসামের লেফটেনেন্ট গভর্নমেন্ট।
দ্বিতীয় ধারণা হল, কর্নেল বেইলি- যিনি মহিশুরের টিপু সুলতানের সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ করেছিলেন। তার নামানুসারে বেইলি রোডের নামকরণ করা হয়।
তৃতীয় মত হল, ইনস্পেক্টর জেনারেল জেএইচ বেইলি- যিনি ‘বাংলা ওহাবি ফরায়েজি’ আন্দোলনের সময় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার নামানুসারে বেইলি রোডের নামকরণ করা হয়।
শান্তিনগর মোড়েই বিক্রি হচ্ছে হক হালিম। বেশ কয়েকজন বিক্রেতাকে হাঁড়ির ঢাকনা দিয়ে জোরেসোরে শব্দ করে হাঁকডাক করতে শোনা গেল, “বাসায় নিয়া যান, মজা কইরা খান।”
হকের হালিম বড় পাতিল বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ টাকায়। মাঝারি পাতিল ২শ’ টাকা। ছোট পাতিল ১শ’ টাকা।
একটু এগুলেই দেখা যাবে, ‘ক্যাপিটাল ইফতার বাজার’। পুরান ঢাকার সব ধরনের ঐতিহ্যবাহী ইফতার পাওয়া যায় এখানে।
কাবাবের মধ্যে আছে সুতি কাবাব। দাম ৬শ’ টাকা কেজি। প্রায় ৪২ প্রকার মসলা দিয়ে তৈরি হয় এই খাবার। ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের পরিচালকদের একজন মো. এহসান উদ্দিন জুয়েল বলেন, “সুতি কাবাবের আসল উপাদান গরুর মাংস। সঙ্গে মেশানো হয় জায়ফল, এলাচি, দারুচিনি, ঠসঠস, যষ্ঠিমধু, দেশি গোলাপ ফুলের শুকনো পাপড়ি, চন্দন ইত্যাদি।”
আরও বিভিন্ন ধরনের কাবাব যেমন শিক-কাবাব প্রতিটি ৮০ টাকা। জালি-কাবাব প্রতিটি ৩০ টাকা। মাটন বটি-কাবাব প্রতিটি ১শ’ টাকা।
জাম্বুরোস্ট ৩শ’ ৫০ টাকা। এটির মূল উপাদান ঘি, বাটার অয়েল, জায়ফল, মাওয়া ও আলু বোখারা। চিকেন দোপেঁয়াজার দাম প্রতি কেজি ৬শ’ টাকা। তৈরির মূল উপাদান দুধ ও টক দই। ব্রেইন-মসল্লা প্রতি কেজির দাম ৮শ’ টাকা। তৈরি হয় গরুর মগজ দিয়ে। বিফ-কোপ্তা ৮শ’ টাকা কেজি। মূল উপাদান আলু বোখারা, কিশমিশ ও পুদিনা পাতা।
মালাই-পপ, এক ধরনের আরবীয় মিষ্টি খাবার। মূল উপাদান ঘি, জাফরান ও মালাই। প্রতিটির দাম ৩৫ টাকা। কোনাফা, এটিও আরবীয় মিষ্টি। মূল উপাদান খাঁটি মাখন, গরুর দুধ, কিশমিশ, পেস্তা-বাদাম ও কাজু-বাদাম। প্রতিটির দাম ৪০ টাকা।
এখানে আরও আছে ছোলা-বুট, বেগুনি, পেঁয়াজু, জিলাপি, লাড্ডু ও ফিরনি।
রাস্তার দুই পাশে বেশ কিছু রেস্তোরাঁয় ইফতারির বিশেষ আয়োজন চোখে পড়ার মতো।
বেইলি বার-বি-কিউ এবার ৩১ প্রকার ইফতারি নিয়ে এসেছে। শাহী হালিম বড় পাতিল ৪শ’, মাঝারি পাতিল ৩শ’ ও ছোট পাতিল ২শ’ টাকা। শাহি জিলাপি প্রতি কেজি ২শ’ টাকা। রেশমি জিলাপি প্রতি কেজি ২শ’৫০ টাকা। চানা বাটুরা ৮০ টাকা। চিকেন সাসলিক ফ্রাই ১শ’ টাকা। গ্রিল চিকেন ৩শ’ টাকা। জালি কাবাব ও মুঠি কাবাব প্রতিটি ১৫ টাকা।
স্কাইলার্ক নিয়ে এসেছে ৩৪ প্রকার ইফতারি। বিশেষ পদগুলোর মধ্যে ফালুদা ৩শ’ টাকা। চিকেন রোস্ট প্রতি টুকরা ১শ’ ২০ টাকা। চিকেন ঝাল ফ্রাই প্রতি কেজি ৬শ’ ৫০ টাকা। বিফ ঝোল চাপ ও বিফ কাটা মসলা প্রতি কেজি ৬শ’ ৫০ টাকা।
বেশিরভাগ দোকানেই একই ধরনের খাবার। তবে মিষ্টিজাতীয় খাবারের মধ্যে বেইলি পিঠা ঘরের পিঠাগুলো দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। দোকানের ভিড় দেখে বোঝা যায় ইফতারিতে পিঠা বেশ চলে।
কোন পিঠা কি দিয়ে তৈরি হয়? জানতে চাইলে এক কর্মচারী শুধু মূল উপাদান-- নারকেল, ঘি, দুধ, চাল ও চিনির কথাই বললেন।
ফোর ডাইমেনশন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত খালেদ রহমান শান্তিনগর এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, “প্রায় ১৫ বছর হতে চললো এখানে আছি। তখন থেকেই দেখছি বেইলি রোডে ইফতারির বাজার বসছে। প্রতি বছরই এর জমক যেন বাড়ছে। যতদূর মনে পড়ে ‘ক্যাপিটাল’ই প্রথম দিকে ইফতারির আয়োজন করতো। আর এখনতো অনেক দোকান। এখানকার প্রায় সব খাবারই আমার খাওয়া হয়েছে। গুণে মানে ভালোইতো লাগে।”
পুরান ঢাকার চকবাজারের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে বেইলি রোডের ইফতারির বাজারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শহুরে কেতাদুরস্ত মানুষ এখানে আসছেন, কিনছেন আর পেট ভরার পাশাপাশি মন ভরাচ্ছেন সুস্বাদু খাবারে।