somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু রহস্য রহস্যই থেকে যায় রহস্য হয়ে

১৭ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাসেল, আমার স্কুলের বন্ধু। একই গ্রামে হলেও তাদের বাড়ি আর আমাদের বাড়ি কিছুটা দূরে। হেঁটে যেতে ৭/১০ মিনিট লাগে। তখন ক্লাস টেনে পড়ি। প্রায়ই বিকেলে বন্ধুরা রাসেলদের পুকুরঘাটে মিলিত হয়ে আড্ডা দিতাম। শেষ বিকেলের দিকে প্রতিদিন রাসেল অন্য একটা বাড়ি থেকে গরুর দুধ আনতে যেত। কখনো আমাদের কেউ সংগে যেতাম, কখনো সে একা।

সে যাদের বাড়ি থেকে দুধ আনতে যেত উনি ছিলেন আমাদের স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক, সবাই মূসা স্যার নামেই উনাকে চিনত। রাসেলদের বাড়ি থেকে স্যারের বাড়ি প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। তিনটা টিলা পার হয়ে যেতে হয়। বিকেল গড়াতেই টিলার রাস্তাগুলোতে ঝুপ করে আঁধার নেমে আসে। কেমন যেন গা ছমছমে একটা ব্যপার। একটা টিলার নাম নাথের চিতা। পাশের হিন্দু পাড়ার শ্বশান। লোকজন সন্ধ্যার পর থেকে একা ঐ পথটা তেমন একটা মাড়াতে চায় না। রাসেল যথেষ্ট সাহসী বলেই একা প্রায় প্রতিদিনই মাগরিবের সময় যাওয়া আসা করে নাথের চিতার পাশ দিয়ে।

একদিন দেখি রাসেল স্কুলে আসেনি। বিকেলে গেলাম তাদের বাড়িতে। দেখি তার গায়ে জ্বর, গলায় বেশ কয়েকটা তাবিজ। ঘটনা কি?!

এর আগের বিকেলেই ঘটেছিল সেই ভৌতিক ঘটনাটি। টিপটিপ বৃষ্টিতে রাসেল সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল মূসা স্যারের বাড়ি থেকে দুধ আনতে। প্রথম টিলার বাঁকে আসার পর তার সাথে দেখা হয় আমাদের ক্লাসের অন্য দু'জন ছেলের সাথে যাদের বাড়ি রাসেলদের বাড়ির কাছেই। রাসেলকে দেখেই একজন বলে উঠে, "তুই দুধের জন্য যাচ্ছিস? চল আমরাও যাই....."। রাসেল তাদেরকে পেয়ে মনে মনে খুশিই হয়। তিনজন গল্প করতে করতে হেঁটে যায়।

তারা স্যারদের বড়িতে পৌঁছুতে পৌঁছুতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসছিল। প্রতিদিনের মত রাসেল দুধ নিয়ে চলে আসার সময় অন্য দু'জন বলল, "চল একটা কাজে আমতলি বাজার যাই।"
রাসেল প্রথমে যাবে চিন্তা করলেও পরে ভাবল তিনজন হেঁটে আমতলি বাজার গিয়ে আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে। তার উপর কারো কাছে টর্চও নাই। এই অন্ধকার রাতে টিলার রাস্তায় আমতলি বাজার যাওয়া আসা প্রায় অসম্ভব। সে বলল, "না দোস্ত, আজ না। দুধ জ্বাল না দিল নষ্ট হয়ে যাবে।" তবুও মুসলিম আর আজিজ তাকে সংগে যাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি করতে থাকে। এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে তারা দু'জন আমতলি বাজারের পথে হাঁটা ধরে আর রাসেল সাইকেলে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।

রাসেলের বাড়ির কাছে আসতে আসতে মাগরিবের নামাজ শেষ হয়ে যায়। আর মসজিদের সামনে এসেই আজিজকে দেখে সে খুব অবাক হয়। "কিরে? আমতলি যাস নাই?", রাসেল আজিজকে জিজ্ঞেস করে। আজিজ বলে আমি এখন স্যারের কাছে পড়া শেষ করে নামাজ পড়তে আসলাম, আর এই সন্ধ্যাবেলা আমতলি যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। রাসেল আজিজকে প্রায় ধমক দিয়ে বলে, "এইমাত্র তুই আর মুসলিম একসাথে গেলি না?" আজিজ বলে, মুসলিমের সাথে তার দুই দিন ধরে দেখাই হয় না।

বাড়াবাড়ি করতে করতে দু;জন মিলে মুসলিমদের বাড়িতে যায়, তার মায়ের কাছে জানতে পারে মুসলিম দুই দিন হল চট্টগ্রামে তার মামার বাসায় গেছে। এবার রাসেল ভাবে সে সাইকেল নিয়ে স্যারের বাড়ি থেকে রাস্তা দিয়ে এসেছিল। অন্য দুজনের পায়ে হেঁটে তার আসে আসা কোন মতেই সম্ভব নয়। তার আগে রাতের বেলা টিলা ছাড়া বিকল্প পথে অন্যদের আসাও প্রায় অসম্ভব। তাহলে সে যাওয়ার সময় পুরোটা পথ যাদের সাথে হাসি-ঠাট্টা-গল্প করতে করতে স্যারের বাড়িতে গেল তারা কারা?!

ঐ রাতেই রাসেলের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।

এমন ঘটনা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়না, নিজের খুব কাছের এক বন্ধুর কাছে তার অভিজ্ঞতার কথা অবিশ্বাস করাও যায়না। সম্ভবত কিছু রহস্য রহস্যই থেকে যায় রহস্য হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:০০
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×