somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

”একটি সফল উদ্যোগ, নাবালকিা মমতাজ ফিরে পেল এক নতুন জীবন ।”

১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংক্ষিপ্ত অবতারনঃ
১৪ই মার্চ ২০১১, ফাল্গুনের পড়ন্ত বিকেল বেলায় শিউলীর বাড়িতে যখন উপস্থিত হই ক্যামেরা সহ তখন সবে মাত্র স্কুলের শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে ঘরে ফিরলেন শিউলী বেগম। জানতেন না কেন আমরা হুট করে উপস্থিত হয়েছি। পৌরসভার প্রকল্পের কাজের সুবাদে তার সাথে আমার পরিচয় রয়েছে। তাছাড়াও গত ৮ই মার্চ মরু, চগঙ( টএওওচ-২) ও পৌরসভার উদ্দোগে আন্তরর্জাতিক নারী দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যখন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহন করেন তখন কথা হয় আমার সাথে। তাই নতুন করে বিশেষ কোন পরিচয় দেবার আর প্রয়োজন পরেনি তখন। সাদামাটা ভাবেই জানতে চাই তার সে বিশেষ অবদানের কথা। আমরা জানতে চাই তার প্রতিবাদী মূহুর্তক্ষণ।

ঘটনার বিবরন ঃ
মোতাহার আলী পেশায় জেলে, জামালপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কম্পপুরে বসবাস করেন তিনি। স্ত্রী নূরজাহান চার সন্তানের জননী হয়ে ঘরের হাজারো কাজে ব্যস্ত থাকেন সারা দিন, মোতাহার আলীর সংসার চলে দরিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করতে করতে। অভাবের তাড়নায় মোতাহার আলী মেয়ের ভাল মন্দের বিচার তিনি করতে পারেননি। তিনি ভেবেছেন কিভাবে সংসারে একজন সদস্য কমে যাবে। অভাবের সংসারে বড় মেয়ে মমতাজ প্রতি দিন মায়ের কাজের সাথে সাহায্য করে আর বাড়ির পাশের স্কুলে যায়। ৪র্থ শ্রেণীতে পড়–য়া মমতাজ শারীরিক গড়নে অন্য দশ জন ছাত্রী থেকে আলাদা ও অনেকটা চাপা স্বভাবের।
১৪ই মার্চ ২০০৯ সাল, সকাল বেলায় শিউলী বেগম ক্লাসে ঢুকেই দেখেন প্রতি দিন প্রথম ব্যাঞ্চে বসা মমতাজ আজ ক্লাসে নেই। জানতে চাইলে সহপাঠিরা তাকে জানায় আজ মমতাজের বিয়ে ।
যে মেয়েটি এখনোও নিজেকে জানতে শিখেনি, বুঝতে শিখেনি, আর বিয়ে সে তো অনেক দূরের ব্যাপার বুঝেনা বিয়ে বিষয়টি কি? আর আজ তার বিয়ে! ফুল না ফুটতেই ঝরে যাবে কলি? বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেননি মিসেস শিউলী। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে আছেন বিভিন্ন সমাজ সেবা কাজের সাথে, পৌরসভার প্রকল্পের সুবাদে রয়েছে যোগাযোগ বিভিন্ন মহলে, যোগাযোগ রয়েছে পৌরসভার জেন্ডার কমিটির সাথেও। সমাজ সচেতন শিউলী বিবেকের তাড়নায় চলে যান মমতাজের বাড়ী । তখন বাড়ীতে ছিল আনন্দ মূখর একটি পরিবেশ, মমতাজ বসে আছে কনের সাজে, শিউলীকে দেখেই চিৎকার করে কেঁেদ উঠে ৯ (নয়) বছর বয়সী মমতাজ; কান্না জড়িত কন্ঠে বলে আমি স্কুলে যেতে চাই, লেখাপড়া করতে চাই? মানুষ হতে চাই। বিয়ে করবনা ।
শিউলী বেগম সোজা চলে গেলেন ঘরের বাহিরে, সামনেই বসে আছে বরসহ বর-যাত্রী, প্রথমেই বরের বেশে বসে থাকা গার্মেন্স কর্মী জুবায়েরকে বুঝানোর চেষ্ঠা করে। ব্যর্থ হয়ে চলে আসেন মমতাজের বাবা মায়ের কাছে। বাবা মায়ের এক কথা ”আমাগো মাইয়া আমরা যেইডা বালা বুজতাছি, হেইডা করতাছি, এ ছাড়া এত বালা পোলা হস্তায় মেলেনা। কোন যৌতুক নিবোনা, বিয়ার বেবাগ খরচ হেরাই দেবো, তয় এই বিয়া অইবই”। এসব শুনে শিউলী কিছুটা বিচলিত হলেও হাল ছাড়েননি; তিনি তৎক্ষনাৎ যোগাযোগ করলেন নিজের গড়া হস্তশিল্প কর্মীদের সাথে, স্কুলের অন্য সব শিক্ষকের সাথে, পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও জেন্ডার কমিটির সভাপতির সাথে। মোবাইলে যোগাযোগ করে কয়েক মূহুর্তের মাঝেই সবাই এসে হাজির হন মোতাহার আলীর বাড়ীতে; সাড়া বাড়িতে হৈ চৈ পড়ে যায়।
সকলের উপস্থিতিতে শিউলী বেগম বর বেশধারী জুবায়েরকে পুলিশ ডাকার ভয় দেখালে বর পক্ষ কোন উপায়ন্তর না দেখে বাধ্য হন চলে যেতে।

মমতাজের অনুভুতি ঃ
স্কুল শিক্ষিকা শিউলী বেগমকে সাথে করে মমতাজের বাড়ীতে দেখা করতে গিয়ে মমতাজকে পাওয়া যায় মায়ের পাশে বসে রাতের রান্নায় সাহায্য করতে উনুনে আগুন ধরাচ্ছে; দেখা মাত্রই ছালাম দিয়ে সে শিক্ষিকার পাশে এসে দাড়ায়। সে দিনটির কথা জানতে চাইলে লজ্জায় কিছু বলতে না পারলেও সে তার স্বপ্নের কথা বলেছে। সে স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, সমাজে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। সে যখন কথা বলছিল, আমি দেখছিলাম তার চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।

উপসংহার ঃ
হয়ত এই অভাবের সংসারে মমতাজের ডাক্তার হওয়াটা নাও হতে পারে, নাও হতে পারে তার বুকে লালিত স্বপ্নটি পূরণ, কিন্তু সে আজ প্রতিবাদী হতে শিখেছে, জন্ম নিয়েছে তার বুকে পাহাড় সমান আত্ববিশ্বাস। মোতাহার আলীর দারিদ্রতার টানাপুরনের সংসার মমতাজের জীবনে ডাক্তারী জীবন না দিতে পারলেও শিউলী বেগমের একটি সফল উদ্যোগে নাবালিকা মমতাজ ফিরে পেলো একটি নব জীবন। উন্মোচিত হলো নতুন একটি দিগন্ত। রচিত হলো একটি ইতিহাস।























৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×