somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা(মাধ্যমিক স্কুলের সহপাঠী , বন্ধু !)

১৬ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শমশেরনগর এ.এ.টি.এম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় - এ শুরু হলো শিক্ষাজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় । প্রথম ক্লাশ মওলানা স্যার নিতে এলেন । যাঁকে আমি কোনোদিনও সম্মান করতে পারবো না । পরে আসছি সে প্রসঙ্গে । ওখানে আমার একমাত্র বন্ধু শান্ত শ্যামলী । মেয়েটাকে নিয়ে সবাই এতো হাসাহাসি করতো , খুব খারাপ লাগতো আমার । এই স্কুলে বেশীদিন থাকা হয়নি আমার । কারণ মওলানা স্যার প্রতিদিন আমার ভাষা নিয়ে বিদ্রুপ করতেন । আমার বড়ো মামা বৃত্তি পাবার পর একটা ডিজিটাল ঘড়ি প্রেজেন্ট করে ,যার ডায়ালে একটা কার্টুন আঁকা ছিলো । সেই ঘড়ি নিয়ে যতোটা কৌতুকের শিকার হয়েছি , ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে পড়তো বইয়ের পৃষ্ঠায় । আর একবার আমার মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছিলো ।আমার এক মাসীর বিয়েতে গিয়েছিলাম ,সেখানে কারা জানি আমার মাথায় কি রঙ ঢেলে দেয় । এরপরে মাথার সব চুল পড়া শুরু হলো আর মাথার চামড়া ফেঁটে ফেঁটে রক্ত ।কোনোভাবে চুল ফেলে দেয়া হয় । তো স্কুলে স্কার্ফ পড়ে গিয়েছি স্যার সবার সামনে খুলে দিলেন । লজ্জ্বায় বসে পড়লাম মাটিতে । এখনো ভেবে পাইনা কেন এমন করেছিলেন উনি ।

তবে প্রেম শব্দটা শুনলাম ক্লাশ সিক্সে । আমার বাপির বন্ধুর ছেলে দিলুদাকে নিয়ে গীতা , শ্যামলী , বিথী আমায় এসে বললো দিলুদা নাকি আমায় ভালোবাসে । আমিও সহজভাবেই বললাম , আমিও তো দাদাকে ভালোবাসি । তারা বললো : "নীলা তুই তবে চিঠি লিখ ।" কিন্তু ভেবে পেলাম না ভালোবাসলে চিঠি লিখতে হবে কেন ? বলেই ফেললাম এ কথা তো সামনেই বলা যায় , লিখতে হবে কেন ? এতোটাই বোকা যে তাদের বুদ্ধির কাছে মাথা নামিয়ে তাদের ভাষাতেই প্রথম প্রেমপত্র । স্কুল শেষ হবার পর বেড়িয়ে পোষ্টাফিসের রাস্তায় চিঠি ছুঁড়ে দিতো গীতা । ভাগ্য ভালো যে কোনোদিন দাদার হাতে পৌঁছায়নি তার বোকা বোনটির এসব
লিখিত পত্র । তবে পড়েছিলো ছোট মামার হাতে । তারপর বাপির হাতে । না বাপি বুঝেছিলো তার নীলমনকে ফাঁসানো হয়েছে । আর ওটাই সত্যি । তাই ভুল করেও বা কারুর যুক্তিতে কখনো প্রেম করিনি । অতো স্বাধীন জীবনকে বেড়ি পড়ানোর ইচ্ছে জেগেছিলো একবার , সেটা অন্য ঘটনা ।

ক্লাশ সেভেন-এ চলে এলাম মামনির স্কুল শমশেরনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে । প্রথম ক্লাশ মামনির । রোল কল হচ্ছে , বলে ফেললাম - ইয়েস মামনি । ভ্রূ কুচকে মামনি জিজ্ঞাসা করলো : "মামনি কে ?" থমকে গেলাম , বললাম ভুল হয়ে গেছে । সবাই মুখ চেপে হাসলো । মনোয়ারা মনি , ঊষা , তারাবতী , শেফালী , সবচেয়ে দুষ্টু এবং মজার মেয়ে নামটা রেহানা । আহ্ , সময়ের রেলগাড়ী কোথায় নিয়ে গেলো সবাইকে ।

তবে সেখানে সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ত্ব হয়েছিলো কুমকুম আপার সাথে । আমার সিনিয়র , তবুও আমায় খুব বুঝেছিলো কখনো বন্ধু , কখনো বড়ো বোন হয়ে । এতো ভালোবাসা ছিলো বলেই মধ্যে একবার বিশাল ঘটনা ঘটে গেলো । আবার মিথ্যে প্রেম ঘটিত । কুমকুম আপার চাচাতো ভাইয়ের কাছেই ভালো করে ব্যাডমিন্টন খেলা শিখি । প্রতিদিন রুহুল ভাই , আমি , কুমু আপু খেলা করতাম । একবার কুমু আপুর ফুফাতো ভাই বাবলু ভাই বেড়াতে এলেন । আমি কবিতা লিখি সেই ক্লাশ টু থেকে । তাই সাদা কাগজ পেলেই লিখে ফেলতাম কবিতা । তো এমনি এক কবিতা পড়লো বাবলু ভাইয়ের হাতে । সেই কবিতা হাত বদল হয়ে গেলো বাবলু ভাইয়ের মায়ের হাতে । তারপর সোজা আমার বাপির কাছে । সেইবার বাপি এতোটাই রেগে গেলেন , অথচ তখনো প্রেম কি সেটাই বুঝিনি । শুধু একটাই প্রশ্ন করেছিলাম : চিঠি লিখলে নাম থাকে , এখানে বাবলু ভাইয়ের নাম কোথায় ? দীর্ঘ অনেক বৎসর প্রিয় কুমু আপুর সাথে কথা বলিনি । অনেকটাই নিঃসঙ্গতা এবং কষ্ট নিয়ে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো । আহ্ প্রিয় বন্ধু ছাড়া জীবনযাপন সত্যিই বড়ো যন্ত্রণাদায়ক । আর আমি এমনই ছিলাম যে মিথ্যের সাথে বসবাস আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা ।একবার সরে গেলে নিজেকে আর হাজার কষ্ট হলেও সেখানে নিয়ে যেতে পারতাম না ।সেই আমি এখন আর নেই , তাই হয়তো আমাকেই হারাতে হয় , ভুল না করেও শাস্তি পেতে হয় ।আবার ভালোবেসে কাছে টানলেও সেই ভালোবাসা কে খেলা বলে সরিয়ে দেয়া হয় ।

তবে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতের সময়টা সত্যিই আনন্দায়ক । নাম মনে করতে পারছিনা আমাদের ক্লাশেরই একটা মেয়ে যার কন্ঠে ছিলো না সুর , প্রায় প্রতিদিনই তাকে ডায়াসে ডাকা হতো । আমি তো প্রতিদিন থাকতামই , ওর জন্য্ খারাপ লাগতো , বেচারী ওই কন্ঠে গান গাইতো -- প্রতিদিন নীরব হাসির স্ট্যাচু বান্ধবীটি । আর আমাদের হেড স্যারের পিরিয়ডে এমন কেউ নেই যে কাঁপেনি । ঈশ্বর কৃপায় বেতের পিটুনী একদিনই খেয়েছিলাম । স্যারের মতে : "হিদল - হুকুইন(সিদল - শুটকি)জিগুইনতে খায় , হিগুইনতের মাথাত কুন্তা থাকেনা "। দুষ্টু বান্ধবী রেহানা বলেই ফেললো :"ও স্যার আফনের বাসাতই তো বেশী বেশী হিদল - হুকুইন রান্ধা হয় , মন্নাফ (পিয়ন) তো হক্কল দিনই বাজারো যায় ।"
আর কোথায় যায় ! পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে । একচোট হবার পর খুব বড়ো মুখ করে স্যার বললেন আমার দিকে চেয়ে :"এইটার মাথা অখনো ঠিক আসে । ইগুর মা - বাপ শিক্ষিত্ , ইগুর বাড়ীত হিদল - হুকুইন রান্ধা হয়না । এই ক সাইন তুই "? কাঁপতে কাঁপতে উত্তর উল্টাপাল্টা । জীবনের দ্বিতীয় এবং শেষ বেত -- আবার হাত ফুলে ঢোল ।

কুমু আপার বান্ধবী বহ্নি এবং শিখা আপু খুব ভালো বন্ধু ছিলো আমার । জীবনের প্রথম কেক বানিয়ে খাইয়েছি , যদিও সেই ঘটনা আরেক প্রান্তের । ময়মনসিংহ ভারতেশ্বরী হোমসে সুযোগ পেয়েও ভর্তি না হয়ে জীবনকে সাজিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গলের বি.টি.আর.আই স্কুলে । কারণ মামনির স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ ছিলোনা । বাপির আর আমার স্বপ্ন ডাক্তার হবো । আহ্ , এই ডাক্তারি আমার জীবনে বড়ো দাগ , অনেক কষ্টের দাগ । নাহ্ , এখন আর কোনো স্বপ্ন দেখিনা আমার কোনো প্রিয়জন ডাক্তার হোক কখনো ।

নীলাঞ্জনা নীলা

ক্রমশ---------------
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×