somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েটের শিক্ষক- রাজনীতিঃ শিক্ষক সমিতির অবিরাম কর্মবিরতির ঘোষণা

১৬ ই মার্চ, ২০১১ ভোর ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনার শুরুটা অনেক আগে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৎকালীন উপাচার্য ড: এ এম এম শফিউল্লাহকে মেয়াদ সম্পন্ন হবার পূর্বেই পদ থেকে সরিয়ে দেবার গুঞ্জন বাতাসে ভাসছিলো। ভিসি হবার জন্য আওয়ামী পন্থী শিক্ষক পুরকৌশল বিভাগের ডঃ জয়নাল আবেদীন, ডঃ হাবিবুর রহমান; যন্ত্রকৌশলের ডঃ নজরুল ইসলাম, ডঃ আমিনুল হক জোর তদবির চালান। এদের মধ্যে ডঃ আমিনুল হক , ডঃ হাবিবুর রহমান, ডঃ জয়নাল আবেদীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। অন্যদিকে ডঃ নজরুল ইসলামের সাথে বুয়েট ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহশিক্ষক হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম এ দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বেশ খানিকটা। যদিও সবার নজর ছিলো উপাচার্য পদের দিকে, পদটিতে বসার পন্থার ব্যাপারে প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ছিলো। বুয়েটের একটা ঐতিহ্য হচ্ছে বিদায়ী উপাচার্য পদ ছাড়ার সময় কিছু নাম প্রস্তাব করে যান, প্রস্তাবকৃত তালিকার প্রথম নামটিই সাধারনত সরকার ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেন। একই এলাকার লোক হবার কারণে উপাচার্যের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার চারমাসের মাথায় বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এ নিয়োগে একই বিভাগের অধ্যাপক তৎকালীন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান অসন্তুষ্ট হন। রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বুয়েটের ষাট বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো হাবিবুর রহমান প্রোভিসি পদে নিয়োগ পান। বুয়েটের এডমিনে প্রোভিসি পদের কোনো অস্তিত্ত্ব ছিলো না, শুধু দলীয় বিবেচনায় হাবিবুর রহমান গ্রুপকে সন্তুষ্ট রাখতে নতুন পদ সৃষ্টি কওরে এ নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ সিনিয়রিটির তালিকায় হাবিবুরের নাম ছিলো ঊনষাট নাম্বারে। সুতরাং দলবাজি করে নতুন পদ সৃষ্টি করে সরকার আটান্ন জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে হাবিবুর রহমানকে নিয়োগ দেন। শিক্ষকদের অরাজনৈতিক অংশটি এর বিরূদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে অনাস্থা দেয়ার উদ্যেগ নেয়। কিন্তু ভবিষ্যতে উপাচার্য পদে নিয়োগের পথ পরিষ্কার রাখতে আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকবৃন্দের হস্তক্ষেপে এ পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে। নানা ডামাডোলের মধ্যে ঠাণ্ডা মাথার শফিউল্লাহ সাহেব তার মেয়াদ সম্পন্ন করেন। বিকল্প যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সরকার উপাচার্য নিয়োগের বয়সসীমা লঙ্ঘন করে ষাটোর্ধ্ব নজরুল ইসলাম কে উপাচার্য নিয়োগ দেয়। পদ বঞ্চিত আমিনুল হককে ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে বুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা এ তিনটি পদেই বর্তমানে সরকারের মোসাহেবদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।


দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্ত উপাচার্য পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগ বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে। যার ফলে বুয়েটের জুনিয়র-সিনিয়র সম্পর্ক খারাপের চরমে উঠে। ছাত্রলীগের জুনিয়ররা সিনিয়র অরাজনৈতিক বা অন্য মতের ছাত্রদের ডমিনেট করার চেষ্টা কওরে। এরকম একটি ঘটনায় বুয়েট কয়েক মাস বন্ধ থাকে; হল খালি কওরে দেয়া হয়। বুয়েটে সেশন জট বাড়তে থাকে।


অন্য মতের ছাত্রদের পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা সম্প্রতি আবার ঘটেছে। ছাত্রফ্রন্টের কর্মীদের উপর দফায় দফায় হামলায় মূমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন ছাত্রফ্রন্টের গৌতম দে এবং মামুন মোর্শেদ খান। ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলার কয়েকদিন পূর্বে তাদের ক্যাম্পাস ছাড়ার হুমকি দেয়, ক্যাম্পাস না ছাড়লে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। হুমকিপ্রাপ্ত ছাত্ররা ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা এবং উপাচার্যের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাইলে উনারা ছাত্রফ্রন্টের কর্মীদের হল ছেড়ে দেবার পরামর্শ দেন এবং ছাত্রলীগের কাছে নিজেদের অসহায় বলে দাবি করেন। পরবর্তীতে আহসান উল্লাহ হলের ক্যান্টিনে নৃশংস হামলা করে গৌতমকে ছাত্রলীগের কর্মীরা শহীদ স্মৃতি হলের বারান্দায় ফেলে রাখে। ছবি এবং বিস্তারিত এখানে ...

এ প্রভাব প্রতিষ্ঠার মূল কারণ চাঁদাবাজি । বুয়েটের নানা সংস্থাপন কাজের টেণ্ডার, হল ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া সব জায়গা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায় ছাত্রলীগের কতিপয় নেতার বিরূদ্ধে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে পলাশী মোড়ে নির্মিতব্য বহুতল বুয়েট বাজারের দোকানগুলোতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়মিত বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা একেকজন সনি হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা হয়।

বুয়েটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ রেজিষ্ট্রার পদে দলীয় নিয়োগ-প্রচেষ্টায় অতি সম্প্রতি আওয়ামীমদদপুষ্ট এ উপাচার্যের আরেকটি কীর্তি বেরিয়ে এসেছে। যার প্রতিকার চেয়ে শিক্ষকরা অবিরাম কর্মবিরতিতে যাবার ঘোষনা দিয়েছেন। শিক্ষক সমিতির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিবৃতিটি এখানে যুক্ত করা হলো

বর্তমান শিক্ষক সমিতিতে উপাচার্য পদবঞ্চিত আওয়ামীপন্থী শিক্ষকবৃন্দ নেতৃত্বে আছেন। সুতরাং তাদের এ বিবৃতি কতটা বুয়েটের স্বার্থে আর কতটা উপাচার্যের প্রতি ক্ষোভ প্রসূত তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। বুয়েট রক্ষায় বুয়েটের বর্তমান-প্রাক্তন সকল ছাত্রছাত্রী এগিয়ে আসুন। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির আগে এ ধরণের শিক্ষক-রাজনীতি বন্ধ হোক; এরপর ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তটা ছাত্রদের হাতেই থাক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১১ ভোর ৪:৫৩
১৫টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×