প্রকৃতি মাতা এখন মানুষ নামক হিংস্রগুলোর উপড় বিরক্ত। কয়দিন পরপর হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প, সুনামি, বন্যা সবই হয়ত তাঁর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। প্রকৃতি মাতা হয়ত পরম মমতায় গড়ে তোলা সন্তানদের এখন নিজেই ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমনকি আমাদের পাশ্ববর্তী দেশেও ভূমিকম্প হয়েছে। তার রেঁশ আমরা অনুভবও করেছি। কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট বিশাল এবং ভয়ংকর মাত্রার ভূমিকম্পগুলো কেন জানি বাংলাদেশের কাছাকাছি আসলে দূর্বল হয়ে পড়ে। হয়ত এটা প্রকৃতি মাতারই কোন খেয়াল অথবা আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ। এদিক দিয়ে আমরা বেশ ভাগ্যবান বলা যায়। কারন ভূমিকম্পে আমাদের এখন পর্যন্ত তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমার মনে হয় আমরা গরীব বলেই হয়ত ভাগ্যবান। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে নানাভাবে কাজে লাগাচ্ছে। আশীর্বাদসমূহ প্রকৃতি মাতাকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। আমরা গরীব হওয়াতে এখনও খুব একটা আশীর্বাদপুষ্ট হতে পারিনি। কারন আমাদের সেগুলো কেনার জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই। একারনে প্রকৃতি মাতা হয়ত আমাদের উপড় একটু হলেও সন্তুষ্ট। ফলশ্রুতিতে আমরা এখনও বড় কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হইনি। এখন পর্যন্ত যতটুকু ঘটেছে তা পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অংশবিশেষ। এমনও হতে পারে আমাদের মানসিক বিপর্যয় তার থেকেও বেশী, একারনে অনুভূত হয়না। সম্প্রতি জাপানে ঘটে যাওয়া ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলাফল ভয়াবহ। আমার জানামতে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অনুভূত হওয়া ভুমিকম্পগুলো ৪-৬ মাত্রার।
জাপানের মত বড় মাত্রার ভুমিকম্প আমাদের দেশে হলে দেখা যাবে, বড় শহরগুলোর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদসম অট্রালিকাগুলোর দম্ভিত পতন। সেই সাথে সেগুলোর ভেতর বাস করা মনুষ্য জীবগুলোরও। ভূমির সামান্য দোলাতেই আমরা মনের ভেতর যেভাবে দুলে উঠি, বড় মাত্রার দোলায় আমাদের আশেপাশের অনেকেরই হয়ত শরীর ও আত্মার সম্পর্ক দুলে উঠবে। বড় ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও আমরা আবার জেগে উঠবো, নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবও, দাঁত বের করে হাসবো। কারন আমরা সুখী। দুনিয়াতে সুখী জাতি হিসেবে বাঙ্গালির বেশ নামডাক আছে। জীবনের যে কষ্টদায়ক মুহূর্তগুলোতে অন্য জাতির লোকেরা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে বা আত্মহত্যা করে জীবনের সে মুহূর্তগুলোতেই বাঙ্গালিরা মনে সাহস জুগিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। অতএব, আমরা সাহসী।
আর ধ্বংসস্তূপ সরে গিয়ে অথবা ধ্বংসস্তূপের উপড় যে ফাঁকা জায়গা থাকবে সেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম খেলাধুলা করে আবার সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বড় হবে। কারন খেলাধুলা না করলে সুস্থ মানসিকতা গড়ে উঠবে না। আবার আমরা মানসিকভাবে সুস্থ হব। তাই না?