somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারি কলেজ না দরকারি কলেজ

১৩ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিরোনামটা লোকমুখে প্রচলিত কথা থেকে ধার করা। কথাটা এরকম ‘এটা সরকারি না দরকারি’। মানে সরকারি বিষয়গুলো বেদরকারি বা অগুরুত্বপুর্ণ অন্য সব দরকারি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো এ কথার অবতারণা। ঢালাওভাবে এমন মুখস্থ কথায় (প্রেজুডিস) বিশ্বাস না করলেও, সরকারি কলেজ সম্পর্কে সমকালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো আমাদেরকে সেদিকেই ধাবিত করছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি সমকালের প্রধান প্রতিবেদন ‘সরকারি কলেজের এ কী হাল!’ । এর বাইরেও পত্রিকাটি ঐদিনই সরকারি কলেজ নিয়ে এক পৃষ্ঠার বিশেষ আয়োজন করে। পরেরদিন সম্পাদকীয় ছাড়াও ৩ মার্চ লোকালয় এ ১৯ নাম্বার পাতা জুড়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমকাল।
প্রতিবেদনগুলো কোনটাই সুখবর নয়। শিরোনামই তা বলে দেয়- ‘আবাসিক সুবিধা বঞ্চিত ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী, খন্ডকালীন শিক্ষকই ভরসা, ক্লাস করতে হয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে, ২২০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক’ ইত্যাদি। এখানকার মোট ১৯ টি প্রতিবেদনই বাংলাদেশের ২৫৩ টি সরকারি কলেজের নাজুক অবস্থা একনজরে দেখার জন্য যথেষ্ট।
কলেজগুলোর অবস্থা এখন ’সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা’ এমন। সমস্যার তালিকায় প্রথমই আসবে শিক্ষক। শিক্ষক সংকটের তীব্রতা দুটি প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে অনুমান করা যাক- এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চারজন শিক্ষক, ২২০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। প্রতিবেদনগুলো অবশ্য গ্রাম-এলাকার কলেজের।
তবে খোদ রাজধানীর অবস্থাও ভালো নয়। কলেজ সংক্রান্ত সরকারি ‘এনাম কমিটি’র হিসাব মতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ৪৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা। সেখানে ঢাকা কলেজে ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন ২৪২ জন, গড়ে ৬২ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। সরকারি তিতুমীর কলেজে ৪৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ১৬৫ জন, গড়ে ২৭২ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। ইডেন মহিলা কলেজে এ হার ১৯৩ এর বিপরীতে এক।
কলেজগুলো এ সংকটে খন্ডকালীন শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো এসব কলেজে এত সংকট থাকা সত্ত্বেও গড়ে প্রত্যেক কলেজের ২৫-৩০ জন শিক্ষক ওএসডি হয়ে আছেন। সরকারি হিসাব মতে সারাদেশে কলেজগুলোতে চার হাজার শিক্ষকের পদ খালি আছে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে বর্তমান কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা দেয়া আছে ১০৯৬২ জন।
সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকটের সঙ্গে আবাসন ও অবকাঠামো সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ সংক্রান্ত মোটাদাগে কয়েকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম এরকম- আবাসিক সুবিধা বঞ্চিত ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী, ক্লাস করতে হয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে, আবাসন ও শিক্ষক সংকটে বিঘিœত হচ্ছে লেখাপড়া ইত্যাদি। পুরনো বড় কলেজ ছাড়া অধিকাংশ কলেজেরই নিজস্ব কোন আবাসিক সুবিধা নাই। যেসব কলেজের আবাসিক সুবিধা আছে তা খুবই অপ্রতুল। এক্ষেত্রে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কথা বলতেই হবে। নগরীর হাজী মুহসীন কলেজের ১০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা পাচ্ছে মাত্র ১৬৮ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা পাচ্ছে ৫৬৭ শিক্ষার্থী।
রাজধানীর চিত্রও বেশভালো নয়। ইডেন মহিলা কলেজে ৩৫ হাজার ছাত্রীর মধ্যে ৩ হাজা ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা আছে। কষ্টের বিষয় হলো, যারা আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে তারাও খুব ভালোভাবে থাকতে পারছেনা। থাকছে গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসির মধ্যে। এমনকি পালা করেও থাকছে শিক্ষার্থীরা। কারমাইকেল কলেজে ছাত্রী হলগুলোতে মেয়েদের পালা করে ঘুমাতে হয়।
অবকাঠামোর কথা বললে, অনেক কলেজেই পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষ নেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। বগুড়ার সরকাররি আযিযুল হক কলেজের কথা বলা দরকার, এখানে এমনিতেই শ্রেণী কক্ষ সংকট তারওপর অনুষদ ভিত্তিক আলাদা কোন ভবন না থাকায় ক্লাস রুমকেই ব্যবহার করছে বিভাগীয় অফিস হিসেবে। কোন কোন কলেজে দুই শিফটে ক্লাস হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রায় ছয় হাজার শ্রেণীকক্ষ সংকটের কথা বলেছে। কলেজগুলোর অবকাঠামোতে শ্রেণীকক্ষ ছাড়াও প্রশাসনিক ভবন, পাঠাগার, গবেষনাগার, খেলার মাঠ, ক্যান্টিন এমনকি টয়লেটের সমস্যাও আছে।
কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষক, আবাসন যেমন সোনার হরিন তেমনি দুর্লভ যানবহন। নামে কয়েকটা কলেজের নিজস্ব যানবহন ব্যবস্থা থাকলেও, কার্যত খুবই সামান্য। দুরের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ক্লাস করতে এসে ভোগান্তির শিকার হন। কলেজের এত সমস্যায় উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে শিক্ষার মান।
১৯৭৫ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কলকাতার বঙ্গদর্শনে ’কালেজি শিক্ষা’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেন। প্রবন্ধে তিনি কলেজ শিক্ষার অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। শিক্ষার্থীরা কী শিখছে, কতটা শিখছে, আদৌ শিখছে কীনা বা শিখে কী হচ্ছে ইত্যাদি। তখন হয়তো বাইরের সমস্যা এতটা প্রকট হয়নি। তবে আজকে তিনি যদি থাকতেন এবং প্রবন্ধ লিখতেন, বাইরের বিষয়ের সমস্যায় মানের বিষয়ে তিনি কতটা বলার ফুরসত পেতেন, বলা দায়।
সরকারি কলেজের শিক্ষক সমস্যার কথা বলাটা আবার বলাটা হবে চর্বিতচর্বন। তবে, বর্তমানে যারা আছেন তারা পাঠদানে কতটা মনযোগি তা দেখার বিষয়। আজকের শিক্ষকরা বানিজ্যমুখী। তারা কোচিং করাবেন, গাইড লিখবেন, নাকি শিক্ষার্থীদের মানউন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ভাষায়- শিক্ষকরা ঢাকায় বাইরে যেতে চাননা। সবাই ঢাকায় থাকতে চান। সেক্ষেত্রে বাইরে কারা পড়াবে। আবার সরকারও শিক্ষকদের বিষয়ে কতটা মনযোগি তা বলা মুশকিল। বিসিএসের অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষকদের মর্যদা পিছিয়ে। তাদের মান, সুযোগ সুবিধাও কম।
সরকারি কলেজগুলোর আগের ঐতিহ্য আর নেই। মেধাবী শিক্ষার্থীদের টানতে পারছেনা এগুলো। সমস্যায় জর্জরিত কলেজ নিজের বাঁচাই দায়।
বর্তমান শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা বিষয়হলো নতুন পদ সৃষ্টি। ঢাকা কলেজেই নতুন ৪৮টা পদ বাড়ানো দরকার। শিক্ষামন্ত্রীও সে কথা বলেছেন। নতুন পদ সৃষ্টি করে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে তা পূরন করা যায়। আবকাঠামোগত উন্নয়নে ৭১ টি সরকারি কলেজের জন্য একটি প্রকল্প সরকারের হাতে আছে। তা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরী।
সন্দেহ নেই, সরকারি কলেজগুলোর বর্তমান সংকট সরকারের আগোচরে নয়। একথা ঠিক বহু
বছরের পুঞ্জীভূত সংকট রাতারাতি সমাধান দুঃসাধ্য। সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতাও আছে। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস- ’তবুও বলতে চাই, এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি’, শুধু আশ্বাস নয় বাস্তবে ফলবে বলেই সকলে বিশ্বাস করেন।

সমকালে প্রকাশিত ১৩ মার্চ ২০১১ সমকালে প্রকাশিত ১৩ মার্চ ২০১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×