somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ইরি মৌসুমে মজুদদারির শঙ্কায় সংসদীয় কমিটি" (শীর্ষ কাগজের ৭ মার্চের সংথ্যায় প্রকাশিত)

১৩ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাতাল বা চাল কল মালিকদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রিত না হলে আগামী ইরি মৌসুমেও মজুদদার ব্যবসায়ীরা সরকারকে বিপাকে ফেলবে। এমনটাই আশঙ্কা করছে খাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আর এ শঙ্কার কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুক্ত বাজার অর্থনীতির দোহাইয়ে হতাশ এ কমিটি। এই দোহাই দিয়ে তারা চাল ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রণে অপারগতা প্রকাশ করায় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ছায়েদুল হক নিজেই এ হতাশা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি (গত ২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের নিজ কার্যালয়ে কমিটির ২২তম বৈঠক নিয়ে আলাপকালে তিনি এ হতাশা ব্যক্ত করেন।
শীর্ষ কাগজ প্রতিবেদকের সাথে ওই একান্ত আলাপচারিতায় ছায়েদুল বলেন, চাতাল বা চাল কল মালিকদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে বিদ্যমান মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ঋণ নীতির আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে ঋণ ঝূঁকি যাচাই করেই গ্রাহকদের ঋণের পরিমাণ নির্ধারন করে। ওই ঋণ ব্যাংকার-কাস্টমার সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রাহক প্রদত্ত জামানতের বিপরীতে প্রদান করা হয়। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নির্দেশনা দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এরপরও কমিটির পক্ষ থেকে আমি মন্ত্রীকে (খাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক) বলেছি- আপনি মন্ত্রী হিসেবে ব্যাক্তিগত ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের সাথে দেখা করে তাকে এই ঋণ সীমা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলেন। তারপরও যদি তিনি এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সমাধান না দিতে পারেন, তবে আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করুন। তাকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলুন। তিনি যদি বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা বোঝেন তবে অবশ্যই এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলে সবই সম্ভব। নয়ত আগামী ইরি মৌসুমে অসাধু মজুদদার ব্যবসায়ীরা আবার সমস্যা কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি আরো বলেন, এটা আমার বলা উচিত না- কিন্তু গত আমন মৌসুমে মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আর তাদের ঋণ সীমা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আসন্ন ইরি মৌসুমেও মজুদদারি প্রতিরোধ করা যাবেনা।
এর আগে এই কমিটির ২১তম বৈঠকে চাতাল বা চাল কল মালিকদের ঋণ সীমা নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনার সুপারিশ করা হয়। এসময় মিলের মোট উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঋণ সীমা নির্ধারণেরও পরামর্শ দেয় কমিটি। এছাড়া ওই বৈঠকে চাতাল মিল মালিক ও ধান-চালের বড় ব্যবসায়ীরা যাতে ১ মাসের বেশী সময় ধান-চাল মজুদ না রাখতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে কমিটি। গত ১৯ জানুয়ারির ওই বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি ছায়েদুল শীর্ষ কাগজকে বলেছিলেন, চালের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকার প্রধান কারণ- চালের বাজার সিন্ডিকেট। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকেই আমরা (সংসদীয় কমিটি) বলে আসছি- এই সিন্ডিকেটের চালাত ও মিল মালিক এবং অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে আনলিমিটেড লোন (সীমাহীন ঋণ) নিয়ে ধান মজুদ করে রেখে নিজেদের ইচ্ছে মতো চাল উৎপাদন করে। এভাবে তারা চালের বাজারটাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। ওই দিন সভাপতি আরো জানান, সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমেদ হোসেন সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছেন- উত্তরবঙ্গের প্রতিটি চাতাল মালিক ৪-৫ হাজার মেট্রিক টন ধান মজুদ করে রেখেছে।
এদিকে, কমিটির সর্বশেষ (২২তম) বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ছায়েদুল শীর্ষ কাগজকে জানান, বোরো মৌসুমের হিসেব অনুযায়ী সারাদেশে ১৬ হাজার ৩শ ৫৮টি চাতাল বা চালের মিল রয়েছে। এর মধ্যে বড় চাল কলের সংখ্যা ১শ ১৩টি। এ সময় তিনি বলেন বলেন, সংসদীয় কমিটি মনে করে চালের দাম কমেনি; তবে দামের উর্ধ্বগতি থেমেছে। এবার চালের দাম কমিয়ে আনতেই খোলা বাজারে চাল বিক্রির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারণ বর্তমানে সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন চালসহ মোট সাড়ে ৯ লাখ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। আগামী এপ্রিল-মে নাগাদ এই মজুদ সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ৯ লাখ টনসহ মোট ২১ লাখ টনে গিয়ে দাঁড়াবে। তিনি আরো বলেন, খোলা বাজারে চাল বিক্রির আওতা ও পরিমাণ আরো বাড়ালে মজুদদার ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারবে না।
ছায়েদুল বলেন, বর্তমানে প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে ৭ জন করে ওএমএস ডিলার রয়েছে। তাছাড়া হাওর এলাকার প্রতি ইউনিয়নেও ওএমএস ডিলার রয়েছে। এবার আমরা (সংসদীয় কমিটি) সারাদেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নেই একজন করে ডিলার নিয়োগ করতে বলেছি। তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এই ডিলার নিয়োগ সম্পন্ন করতে বলার প্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রী বলেছেন- ২/১ দিনের মধ্যেই তারা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে প্রতিদিন কমপক্ষে ১টন করে চাল বিক্রির জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি
গত বুধবার (২ মার্চ) খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সভাকে মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওএমএস কার্যক্রম পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীতে খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) কাজে আরও ৫০টি ট্রাক নেমেছে। এ নিয়ে এই কাজে ট্রাকের সংখ্যা দাঁড়াল ২শ ৫০। এছাড়া এখন থেকে মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহের সব দিনই এ কার্যক্রম চালানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুক্রবার (৪ মার্চ) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয়, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিজন ডিলার এক টনের পরিবর্তে দেড় টন করে চাল বিক্রি করবে। আতপ চাল বিক্রি হয়- এমন জেলাগুলোর ডিলাররা এই সুযোগ পাবেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও সিলেট বিভাগের সব জেলা এবং খুলনা ও সাতীরা এর আওতাভুক্ত। তবে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দেশের সব ইউনিয়নে ওএমএস ডিলার নিয়োগের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া চাতাল বা চাল কল মালিকদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় নতুন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×