somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলেজ শেষের দিন (আজাইরা প্যাঁচাল)……

১২ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইজ আজাইরা প্যাঁচাল ছাড়া কিছু পাড়ুম না ঠিক কইচ্ছি। সো, গম্ভীর আর ভাববাদীরা এ পোস্ট মাড়াইয়েন না কইয়া দিলাম

তখন ছিল কলেজ কাল। কলেজের নাম মুরারিচাদঁ কলেজ। কেমতে কেমতে কেটে গেল কলেজের দুই দুইটা বছর। টের পাইনি। সত্যই, মাঝি মাঝি ভাবি আর টাসকি খাই। আমার জীবনের সবচেয়ে মজাক সময় কেটেছে এই পাহাড় ঘেরা নয়নকাড়া কলেজটিতে। এই কলেজেরে চার বাইন্ডারির ভেতরেই আমার প্রখম নচিকেতা আর জেমসের ঝাকা-নাকা গানের সাথে মেশা। “লরেল জেল”এ মাখা চুল নিয়া আর ছয় প্যাকেট ওয়ালা জিন্সের ট্রাউজারে পাংকু কায়দায় পেছনের দুই প্যাকেটে হাত ঢুকিইয়া মাঞ্জা মেরে মেয়েদের সামনে দিয়া হেলেদুলে হাটাঁর ত তখন থেকেই শুরু। জীবনের প্রথম কোন রুপসী ললনার “এই উজবুক, রাস্তা মাপ” গালি শুনে টাসকি খাওয়া, প্রথম প্রেম, শেষ প্রেম, জেমস বন্ড সাবের মত সিগারেটে টান দিয়ে দিলদরিয়া হই যাওয়া, পাড়ার ভদ্র (!) পুলাপানগো লগে বইয়া নীল-লাল ছবি দেখা, এই রকম মেলা ঘটনার চাক্ষুস দাবীদার আমার এই কলেজ লাইফ।

মুই ছিলাম বেজায় ভালা (!) ছাত্র। দুই টার্ম ফাইনালের আগে নয়-নয় আঠার দিন আর দুই ইয়ার জেঞ্জের আগে চৌদ্দ-চৌদ্দ আঠাশ দিন, সর্বসাকুল্যে ছেছল্লিশ দিন ছাড়া বইয়ের ছায়ার ধার দিয়েও যেতাম না। কেউ এ নিয়ে টিটকারী মারলে সাথে সাথে রক্তিম চোখে রবীদা আর নিউটনের শিক্ষাজীবনীর দৃষ্টান্ত ঝাড়তাম। রবীদা আর নিউটন না, আমার চোখরাঙ্গানী দেইখা ওরা বলত, “ঠিকই তো, ছেছল্লিশ দিন তো মেলা দি, খাওয়া-দাওয়া কইরবেন নিয়মিত, স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাইখেন। পড়তে পড়তে তো কন্ঠনালী বের হয়ে পড়তাছে”।

সত্যই, ব্যাফক মজাকে মজাক দিন ছিল তখন। শুধু পরীক্ষা, থিসিস, প্রজেক্ট আর টার্ম ফাইনাল এইসব আজেবাজে, ফাউল জিনিসগুরো যদি না থাকত তাইলে লাইফটা আরো জোশ হইত। এইসব বিরক্তিকর জিনিসগুলো জ্বালাইয়া মারত সবসময়। এসবের জন্যি গন্ধরাজ নারিকেল তেল আর স্যান্ডেলিনা ডেইলি সোপের সৌজন্যে প্রচারিত “থ্রি স্ট্রুডিজ” টাও দেখতে পারতাম না নিয়মিত। আফসোস!

আমার কলেজ জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক ছিল মাছুম স্যার। ভাল পড়ানোর জন্যি নয়, ক্লাসে অন্যদের থেকে আমাকে বেশি বেশি সমীহ করেন, সেটাও নয়, ক্লাসে এসে মজার মজার গল্প বলতেন, তাও নয়; উনি ক্লাসে পারসেন্টজ নেন না সেজন্য। আই লাভু স্যার, ইউ আর চো চুইট। অবশ্য পরীক্ষার দিন উনার বৈধ ছাত্র প্রমান দিতে শেষ পর্যন্ত আমাকে অবৈধ পথ নিতে হয়েছিল সেদিন। সে এক বিরাট ইতিহাস। আজ বলা যাবে না।

উড়া-ধোরা মতিলাল প্রফেসর। ডিজিটাল স্যার। ডিজিটাল ভাব (!) ছাড়া তো কথাই বলেন না। মেয়েদের যা বিশেষ পছন্দ ছিল। ক্লাসে পড়ানোর আগে মজার মজার গল্পও বলতেন, তাই ক্লাসে উপচে থাকত পড়া ভিড়। সামলানোই দায়। একদিন ভরা ক্লাসে স্যারের উড়া-ধোরা প্রশ্ন: “বলত, চন্দ্রশেখর জাহাজে বসে কিভাবে বিজ্ঞানী এডিংটনের সাথে যোগাযোগ রাখতেন?” সাথে সাথে ক্লাসের অন্যতম তুখোর ছাত্র তানভীরের ডিজিটাল উত্তর: “ইমেইলে স্যার”। পরে, স্যারের ডিজিটাল ঝাড়ি। “এত বেরেন লইয়া ঘুমাস কেমনে?”। মেয়েদের সামনে কঠিন ঝাড়ি খাইয়া তানভীর তো এক্কেবারে তব্দা। পরে এনালগি কায়দায় বেশি বেশি মার্ক দিয়া ডিজিটাল স্যার তার দিল-খুশ করাইছিলেন।

ফ্যাপড়া উত্তর দেয়া শুরু করেছিলাম সেকেন্ড ইয়ারের বায়োলজি প্র্যাকটিকেল ক্লাস থেকে। এক্সামিনার মাহবুব আখন্দ। প্রশ্ন দেইখা তো আমার মাথা ছানা-বাড়া। চোখে আন্ধার দেখতিয়াছি। কিছুই তো পারিনা। তাও নাছোড়বান্দা, উত্তর ছাড়া যাবে না। প্রশ্ন ছিল, উদ্ভিদের বিবর্তনবাদ ত্রিভুজাকার ছকের মাধ্যমে প্রদর্শন করে দেখাও। আর যাই কোথায়! সাথে সাথে কাঠপেন্সিল ভালভাবে সার্প করিয়া সুন্দর করে তিনটা ডান্ডি দিয়ে একটা ত্রিভুজ আকঁলাম আর মাঝখানে একটা হেইলা-দুইলা লতাগাছ একেঁ নিচে চিত্রের নাম দিলাম। “বিবর্তনবাদ: দুর্বাঘাস টু লাউগাছ”।

তখন চৈত্র মাস। কেমিস্ট্রি পরীক্ষার চারদিন আগের রাত। সবে নতুন বই খুললাম। ঘষামাজা নাই। চকচকে ঝকঝকে সব পাতা। পরীক্ষা আসলে আমার এমনিতেই অসুখ-বিসুখ শুরু হইয়া যায়। তারমধ্যে পুরা একদিন কেমিস্ট্রি নিয়ে ডুবে থাকা ওইদিন। বুঝেন অবস্থা। ফলাফল: প্রচন্ড মাথা-ধরা। ধরা মানে যেই-সেই না, যদু-মধু না, একেবারে রাম ধরা। অতিপঠনে শইল তো অভ্যস্ত না! মানবে কেমতে বলেন? মা মধুমাখা মুখে সাজেশান দিলেন, “যা বাইরে থেকে একটু হেটে আয়, ভাল লাগবে”। মাতৃ আজ্ঞা শিরোধার্য। পালন করতেই হবে। হাটার আগে তুমুল পড়োয়া ছাত্রের মত দশটা রাসায়নিক যৌগের নাম একটি ছোট্ট কাগজে লিখে জপতে জপতে যাচ্ছিলাম। সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম নাইট্রেড, এইগুলান। বের হওয়ার আগে দাদু কয়েকটি বিদেশী সিনেমার লিস্টি দিয়েছিলেন। আসার সময় নিয়ে আসতে হবে, তিনি দেখবেন। ভিডিও মামাকে সিনেমার লিস্টি হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পর বেটা কিছুক্ষন কঠিন মুখ করে তাকিয়ে এদিক-ওদিক দেখার পর বিরস মুখে বলল, “ভাই একটাও তো নাই, ছবিগুলা মনে হয় খুব লেটেস্ট”। দিলাম ঝাড়ি। “কি দোকান বসাইছেন মিয়া, এতগুলার মধ্যে একটাও থাকে না!” গৃহ প্রত্যাবর্তনের পর দাদুর টিটকারী, কিরে সিনেমার লিস্টিটা ফেলে গেলি যে? বুঝলাম, চৈত্রের গরম, বেরসের রসায়ন আর রসের মাথা-ধরা মিইল্লা আমার মাথা গেছে আউলাইয়া। আর আউলা মাথায় সিনেমার লিস্টি না দিয়ে দিলাম রাসায়নিক নামের লিস্টিটা। আর সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম নাইট্রেড এর লিস্টিটা দেইখাই ভিডিও মামা বিরস মুখে বলেছিল “ছবিগুলা নির্ঘাৎ লেটেস্ট, তাই একটাও তাদের কালেকশনে নাই”।

আমার আরেকজন টপ ফেবারিট স্যার ছিল, হৃষি কেশ স্যার। বিশাল গিয়ানি নুক। পাগলা কিসিমের, মাথা পুরাই আউলা। জটিল জটিল সূত্র পড়ান শুধূ। “হাইজেনবার্গ ল ইন মেট্রিক্স ফর্ম”- উনার প্রিয় সূত্র। ফেবারিট হওয়ার হেতু হল, উনি পরীক্ষার খাতায় চোখ বুলান না। খাতায় সব প্রশ্নের বিপরীতে কিছু লিখা আছে কিনা সেটাই উনার কাছে বিবেচ্য বিষয়। কি লিখা আছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের সবার কাছে উনি তাই সিম্পলি জোশ স্যার। ফাইনাল পরীক্ষা। চারটি প্রশ্ন। তিনটি পারি, আরেকটা পারিনা। চিন্তা কি? তিন নম্বরটার উত্তরটাই চার নন্বরে আবার লিখলাম। রেজাল্ট? সেকেন্ড হাইঢেস্ট। মারহাবা।

এই ঘটনাটা আমাদের পপুলার পেসাব মকবুলকে (নিক নেম, ভয়ে আসল নাম মাড়াচ্ছি না) নিয়া (একবার এক স্যারের কঠিন ধমক খাওয়ার পর কে একজন তার প্যান্ট ভিজা দেখছিল, সেই থেকেই তার নাম পেসাব মকবুল)। প্রশ্নে বিশাল বড় একটা ঘটনার বিবরন দিয়ে শেষে ইংরাজিতে লিখা: “ড্র দি সিচুয়েশান হয়াট ইউ ওয়াচ..”। এই “ওয়াচ”-কে ঘড়ি আর “ড্র” মানে আঁকা ভেবে সে বড় করে একটা গোল্লা একেঁ চারদিক ঘুরিয়ে ১ থেকে ১২ পর্যন্ত লিখে তিনটা বড় বড় কাটাঁ আঁকল। নিচে ক্যাপশন দিল “দেয়াল ঘড়ি”, ইংরাজিতে “Wall Watch”। সেই ঘড়িতে সে বর্তমান সময়টাও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে একেঁ দিয়ে আসছিল। তারপরও সে কেন এখানে কোন মার্ক পেল না, এটা তার কাছে এখনও রহস্য। —-এরকমই বিচিত্র চরিত্রের Peculiar ঘটনার সমাবেশে বিচিত্রময় সমারোহে সমৃদ্ধ এই কলেজ জীবন। আর না। অনেক হইছে।
অনেক আউল-ফাউল কথা ঝাড়লমি। সময় খাকলে মন্তবাইন, আর পারলে দু’তিনটা কথা শুনিয়ে যাইয়েন। ভালু থাকইন। অনেক অনেক শুকরিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:২৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×