এখনও আমি ক্রিকেট ভক্ত। কিন্তু এক সময় এই ভক্তি উম্মাদনার পর্যায়ে ছিল। এছাড়া কিছু ক্রিকেট খেলার সুবাধে ক্রিকেট নিয়ে আমার উৎসাহের অন্ত ছিল না। বাংলাদেশ তখনো টেষ্ট স্টাটাস পায়নি। ইল্যান্ড এ দল এসেছে বাংলাদেশ সফরে। অনেকের মনে থাকতে পারে ইল্যান্ডের ঐ সফরের সময় আমিনুল ইসলাম বুলবুল সেঞ্চুরী করেছিলেন। এছাড়া ইল্যান্ডের ঐ দলে ছিলেন, মার্ক রামপ্রকাশ। সে সময়ে ইল্যান্ড এ দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয় দলে এখনকার জনপ্রিয় ভাষ্যকার আতাহার আলীও ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি আতাহার আলী আমার চোখে বাংলাদেশ দলের সর্বকালের একজন সেরা অল রাঊন্ডার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থায় উপনীত হওয়ার পেছনে আতাহার আলীর মত ক্রিকেটারেরা অগ্রনী ভৃমিকা পালন করেছিলেন। পরে আতাহার আলীকে জাতীয় দল থেকে অহেতুক বাদ দেয়া হয় এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই ক্ষত আতাহার আলীর মন থেকে শুকিয়েছে কিনা জানিনা। তবে আমার মনে এটি আজো দুষ্ট ক্ষত হয়ে টিকে আছে।
আমি সবেমাত্র তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ক্রিকেটের উম্মাদনা যেহেতু মোহিত ছিলাম সে কারণে ইল্যান্ড এ দল বাংলাদেশে আসলে খেলা দেখার জন্য মারিয়া হয়ে উঠলাম। আজো মনে পড়ে সেবার পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ দেখেছিলাম প্লেয়ার এনক্লোজারে বসে। আমরা যেখানে বসে খেলা দেখতাম তার পিছনেই ছিল খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম। ফলে খেলা দেখার ফাঁকে ফাঁকে অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথাবার্তা হতো।
ইল্যান্ডের দলের উইকেট কিপারের নামটা এখন আর মনে নেই, আফ্রিকান বংশোভূত। যখন বাংলাদেশ দল ফ্লিডিং-এ তখনও সে মাঠে ব্যাট হাতে নামেনি বা আউট হয়ে ফিরে এসেছে। এই রকম সময় সে মাঠের চারিদিকে চক্কর দিত আর হাতে থাকত একটা বল। ঐ টেস্ট চলাকালীন, পাঁচ দিনের যে কোন একদিন, প্লেয়ার এনক্লোজারের পাশে আরেকজন প্লেয়ারের সাথে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমি তার হাতের বলটা দেখতে চেয়েছিলাম। খুব বিনীতভাবে বলেছিলাম,
"ক্যান আই সি উইর বল, অন ইউর হ্যাণ্ড, প্লিজ?
জবাবে সে বলটা দেয়া তো দূরের কথা বরং বাজে কথা বলে আমাকে প্রত্যাখান করেছিল। পাশেই ছিলেন বাংলাদেশের আতাহার আলী খান। ঐ ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন পুরোটাই। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ইল্যান্ড দলের ঐ উইকেট কিপারকে ভৎসনা করেন আমার সাথে দুর্ব্যবহার করার জন্য। এরপর দেখলাম ইল্যান্ড দলের ঐ উইকেট কিপার বেশ কাচুমাচু হয়ে গিয়েছিল আতাহার আলীর ভৎসনা শুনে। তখনো চমৎকার ইংরেজি বলতেন তিনি।
এর কিছুদিন পরে আতাহার আলীকে আমি ধন্যবাদ দিয়েছিলাম আবাহানী মাঠে এক খেলায় পেয়ে।
কাল যখন ইল্যান্ড দলেকে বাংলাদেশ দল হারিয়ে দিল। তখন আমার এই ঘটনাটা মনে পড়ল। সে সময় আমরা ইল্যান্ড এ দলকে হারাতে না পারলেও এখন আমরা তাদের জাতীয় দলকেও হারাতে পারছি।
পরিশেষে বলব, আতাহার আলীর মত লড়াকু খেলোয়াড় আমাদের জাতীয় দলে যতবেশি থাকবে ততই ক্রিকেট বিশ্বে আমরা এগিয়ে যাব। আজ আবারও আতাহার আলী খানকে ধন্যবাদ জানাব এই ব্লগের মধ্যমে।
ধন্যবাদ আতাহার আলী অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার মত এক অতি নগন্য মানুষের পক্ষে দাড়ানোর জন্য সেদিন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:১৯