somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা(প্রাথমিক স্কুলের সহপাঠী , বন্ধু)

১২ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুর পথে বন্ধু তোর হাত
ছিন্ন করে অন্ধকার রাত
জাগিয়ে তোলে রক্তিম প্রভাত ।

আমার প্রথম স্কুল ময়মনসিংহের মিশনারী স্কুল ।আমার ওই স্কুলের তেমন স্মৃতি নেই ।শুধু মনে আছে একজন ম্যাডাম তবে বিদেশী ছিলেন চোখে ভাসে ।সেই মিস কে সবাই ভয় পেতো কিন্তু আমি তাঁর অনেক আদর পেয়েছিলাম ।ক্লাশে কাঁদতাম বাপির জন্যে আর তখুনি আমাকে মিস কোলে নিয়ে ঘুরতেন ।আরেকটা দৃশ্য চোখে ভাসে আমি জল খেতে যেতাম টিউবওয়েলে একটা মেয়ে আমাদেরই ক্লাশের মাথায় ঝাঁকড়া চুল ,ভাসা ভাসা চোখ আমাকে কল চেপে দিতো । সবচেয়ে যা কষ্টের কখনোই তার নাম জানতে চাইনি । কিন্তু মেয়েটি আমার পাশে পাশেই থাকতো । আরেকটা মজার ব্যাপার হলো ফেসবুকে এসে পেয়ে গেলাম আমাদেরই ক্লাশের বিপুল কে । আমাকে চিনতে পেরেছে , আমি পারিনি ।এই বন্ধুটাকে ফেসবুকে পেয়ে কি যে ভালো লেগেছে ।ছোটবেলার কথা মনে নেই , তবে গেলোবার দেশে যাবার পরে ওর সাথে দেখা , আনন্দ-আড্ডা ভুলবো না কোনোদিন ।

যাক অবশেষে ময়মনসিংহের পাট চুকিয়ে বাপির বুকে ফিরে আসা । আহ্ , কি যে অনুভূতি , বাপির কোলের ওম । কানিহাটী চা' বাগানের সবুজে গড়াগড়ি । ওদিকে বাপি - মামনির চিন্তা কোথায় ভর্তি করানো যায় আমায় । সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শমশেরনগর রামচিজরাম সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া দ্বিতীয় শ্রেণীতে ।বাপির হাত ধরে স্কুলের দ্বোরে । আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক জসীমউদ্দীন স্যার আমায় নিয়ে
গেলেন ক্লাশে , পরিচয় পর্বের পর আমার আসন হলো প্রথম সারিতে । স্যার চলে যাবার পরই সবগুলো চোখ আমায় ঘিরে ধরলো ।
গীতা (চরম ভয়ংকর দুষ্টু ) , বিথী (অহঙ্কারী ) , ফাতেমা (যার মাধ্যমে আড়ি শব্দের সাথে পরিচয় , এখন পর্যন্ত জানা হলোনা কেন সে আমায়
আড়ি দিয়েছিলো , খুব কেঁদেছিলাম ) , স্বপন ( চাপা দুষ্ট ) , পারভেজ , শান্ত শ্যামলী ( সার্বক্ষণিক সঙ্গী ) , মেরী (টিফিন থেকে শুরু করে কলম
কাগজ অদল - বদল করা সঙ্গী ) , প্রদীপ ( শান্ত - ভদ্র ) , দুষ্টের শিরোমণি চা' বাগানের শ্যামলী ।
সময়ের দ্রুততায় আরো কিছু নাম হারিয়ে গেলো ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক থেকে ।
ওখানেই জানলাম ভাষাগত সমস্যার এবং ধর্মের জন্য কতোটা অত্যাচারিত হওয়া যায় । গীতা ছিলো নেত্রী দুষ্ট দলের । আমি সিলেটি হয়েও ওখানকার ভাষা বলতে পারতাম না । তাই স্যার চলে গেলেই আমার আসন হতো মাটিতে , তাও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হতো আমায় ।
চোখ থেকে নিঃশব্দে গড়িয়ে যেতো বিন্দু । আর সম্পূর্ণ ক্লাশ অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো , যেনো আমি এক হাস্যকর জীব ।
এর চেয়ে জঘণ্য প্রশ্ন : "ওই তুই কুন (কোন) ধর্মের বে ? ক সাইন (বলতো) ? কইলে পরে সিট দিমু ।"
আমার উত্তর : "মানব ধর্ম ।" আর আমি শিখেছিলাম আমার মামনির থেকে । খুব ছোটবেলা থেকে এখনো মন্দির - মসজিদ - গীর্জা - প্যাগোডা দেখলেই হাত উঠে আসে , মাথা নুয়ে প্রনাম করি ।
আমার এ উত্তরে সন্তুষ্ট হয়না ওরা । আবার প্রশ্ন : " হিন্দু না মুসলমান ? মানব ধর্ম কিতাবে (কি রে ) ? কইরে না কিতার লাগি ?"
একই উত্তর আবারো । শাস্তিও দীর্ঘ হয় স্যার না আসা পর্যন্ত ।
বাসায় ফিরেই মামনিকে জিজ্ঞাসা আমি কি হিন্দু , না মুসলমান ? মামনিরও সেই একই উত্তর । পরেরদিন আবারো সেই একই প্রশ্ন ক্লাশে ।
তবে সেদিন বাঁচিয়ে দিলো শান্ত শ্যামলী । বিথীর টাইটেল চন্দ , আমারও । তার মানে আমি হিন্দু ।
নিঃসঙ্গ সময় টিফিন এর পর খেলার সময়টুকু । কেউ নিতো না তাদের দলে । একা দাঁড়িয়ে শুধু দেখেই যেতে হতো ।আমার খুব প্রিয় বন্ধু মেরী যে আমার সাথে বেশী মিশতো ।খুব ভালো একটি মেয়ে ।তবে মজার ব্যাপার হলো একবার আমি একটা কলম নিয়ে গিয়েছিলাম দাদু আমাকে কিনে দিয়েছিলো ।মেরী বললো আমার কলমটা ওকে দিয়ে ওর একটা বলপেন নিতে ।চাইবার সাথে সাথেই দিয়ে দিলাম ।বাসায় ফিরে সেই কলম দিয়ে লিখছিলাম মামনি বললো সেই কলম কোথায় ?বললাম যখন তা ভালো করেছি কিন্তু কখনো কেউ যদি ভালোবেসে দেয় সে যা-ই হোক দিতে নেই ।সেই কথাটা আমি এখনো মেনে চলি ।তাইতো দোলনদার দেয়া একটা পাতা আমার কবিতার ডায়েরীতে এখনো আছে ।

তবে সেরা সময় ছিলো ক্লাশ ফাইভের বৃত্তির কোচিং এর দিনগুলো । প্রদীপ , স্বপন , আমি , শ্যামলী , বিথী, পারভেজ -- এই কয়জন । তবে একদিন ঠিকই অঘটন ঘটলো । জসীমউদ্দীন স্যার আমাদের অঙ্ক দিয়ে নামাজ পড়তে গেলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই অঙ্ক করা ও শেষ ।স্বপন বললো পাশের জঙ্গলে বেতফল আছে । আমার শত না সত্ত্বেও সবাই মিলে গেলাম । সত্যি এমন মধুর ফল জীবনে আর কোনোদিন খাওয়া হয়নি ।
হাতে করে ফল নিয়ে এসে দেখি স্যার বসে আছেন । ভয়ে কুঁকড়ে গেলো সবাই , আমি ছাড়া । দৃঢ় বিশ্বাস , আমায় তো জোর করে নেয়া হয়েছে । অথচ স্বপন দোষ দিলো আমার । জীবনের প্রথম বেতের দাগ , ফুলে ঢোল সঙ্গে সঙ্গেই ।

হাত কাউকে দেখাইনি , জীবনের প্রথম গোপনীয়তা শেখা । ভোর পাঁচটায় জসীম স্যারকে দেখে আঁতকে ওঠা । স্যার আমায় জড়িয়ে ধরে
বললেন : "নীলাঞ্জনা মা , ভুল করে ফেলেছি রে মা ।" অবাক হয়ে ভালোবাসায় নত হলাম । এই স্যার , আশিক স্যার , বুড়ি আপার যে
ভালোবাসা পেয়েছি , তাই হয়তো রেকর্ড করলাম সম্পূণ সিলেটের মাঝে প্রাথমিক সমাপণী পরীক্ষায় প্রথম হয়ে আর মেধাবী গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে ।
নাহ্ বন্ধুত্ত্ব কি তা তখনো বুঝে উঠতে পারিনি । শুধু এখনো শান্ত শ্যামলী , মেরী আর আড়ি পাতানো ফাতেমাকে মনে পড়ে । হ্যা , স্বপন ,
পারভেজ আর শান্ত প্রদীপকেও । প্রদীপ এখন ফার্মেসী চালায় , কবিতাও লিখে । দুষ্ট শ্যামলী সিলেট , বিথী শমশেরনগরেই আছে প্রাথমিক
স্কুলের শিক্ষিকা হয়ে , স্বপন শমশেরনগরে , অন্যরা কোথায় , জানিনা । জানতে ইচ্ছে করে গীতা ওরা সবাই মিলে কেন এমন করেছিলো ?
বন্ধুত্ত্ব কি তা বুঝলাম আরো অনেক পরে , থাক পরেই নয় বলবো সে কথা ..........

নীলাঞ্জনা নীলা
ক্রমশ-----
ল্যুভেন-লা-ন্যুউভ,বেলজিয়াম
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×