somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়তু দি কিংস স্পিচ, জয়তু কলিন ফার্থ

১১ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এবারের অস্কারে এককভাবে কোন চলচ্চিত্র আধিপাত্য বিস্তার না করতে পারলেও সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য এ চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পুরস্কার জিতে ‘দি কিংস স্পিচ’ শ্রেষ্টত্বের ঘোষণাটা ভালো ভাবেই জানান দিয়েছে। গত বছরের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে মুভিটি সমালোচকদের গ্রহণযোগ্যতা পেলেও সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা পরিচালক এ দুটো বিভাগে সবাই এগিয়ে রেখেছিলেন ফেসবুক নিয়ে নির্মিত ডেভিড ফিঞ্চারের ‘দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ চলচ্চিত্রটিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে ১২টি বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পাওয়া টম হুপারের দি কিংস স্পিচই।

ব্রিটেনের রাজা ষষ্ঠ জর্জ কীভাবে লায়নেল লগ নামের একজন স্বশিক্ষিত চিকিৎসকের সহায়তায় কথা বলার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেন তা নিয়েই এ চলচ্চিত্রের গল্প। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচয়িতা ডেভিড শিডলার ছোটবেলা থেকেই স্পষ্টভাবে কথা বলার সমস্যায় ভুগছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তার মধ্যে চরম হতাশা কাজ করতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি রেডিওতে রাজা জর্জের বক্তৃতা শুনতেন এবং জানতে পারেন রাজা নিজেও এ সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু রেডিওতে তার স্পষ্ট ও দৃপ্ত কন্ঠের ভাষণ শুনে অভিভূত হোন ডেভিড। পরবর্তীতে নিজেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারেন রাজা জর্জের কথা বলার প্রতিবন্ধকতা জয়ের ইতিহাস। ডেভিড কথা বলেন লায়ন লগের ছেলে ভ্যালেন্টাইন লগের সাথে। ব্রিটেনের রাণীর অনুমতিক্রমে ভ্যালেন্টাইন তার সাথে কথা বলেন । কিন্তু জানিয়ে দেন রানীর জীবিত থাকা অবস্থায় এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশিত হতে পারবেনা। ২০০৫ সালে শরীরে ক্যান্সার নিয়েই ডেভিড লিখতে বসেন দি কিংস স্পিচের চিত্রনাট্য। আর ২০১০ সালে টুম হুপারের হাত ধরে রূপালী পর্দায় দি কিংস স্পিচ সৃষ্টি করে ইতিহাস । চলচ্চিত্রটিতে লায়নেল লগের ভূমিকায় অভিনয় করা অস্কারজয়ী শক্তিমান অভিনেতা জিওফ্রে রাশ (শাইন, পাইরেটস অব দি ক্যারিবিয়ান) চিত্রনাট্য পড়ে এতটাই মুগ্ধ হন যে নিজেই চলচ্চিত্রটি প্রযোজনায় অংশীদার হন।

দি কিংস স্পিচ ছবিতে তোতলা রাজা ষষ্ঠ জর্জের ভূমিকায় অভিনয় করে অস্কার জিতেছেন অভিনেতা কলিন ফার্থ। এ বিভাগে কলিন পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি একরকম নিশ্চিত ছিলো। এর আগে গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা পুরস্কার জিতে জানান দিয়েছিলেন অস্কার এবার তার ঘরেই যাচ্ছে।

কলিন এন্ড্রু ফার্থ ১৯৬০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ার অঞ্চলের গ্রেশটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডেভিড নরম্যান লুইস ফার্থ এবং মা শার্লে জিন ছিলেন বর্তমান উইনচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাক্রমে ধর্মীয় শাস্ত্র ও ইতিহাসের শিক্ষক।
ফার্থের অভিনয়ের হাতেখড়ি হয় লন্ডনের ড্রামা সেন্টারে। ১৯৮৩ সালে মঞ্চে ‘অ্যানাদার কান্ট্রি’ তে অভিনয়ের মাধ্যমে তার পেশাদার অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু হয়। পরের বছর মঞ্চনাটকটির টিভি সিরিয়াল নির্মিত হলে সেখানেও তিনি অভিনয় করেন। টিভি সিরিয়ালের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে টুকটাক অভিনয় করলেও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তাই কলিনের অভিনয় জীবনের প্রথম দিককার সময়টা গেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ফার্থ প্রথম পরিচিতি লাভ করেন জেন অস্টেনের সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস’ অবলম্বনে নির্মিত বিবিসির টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের মাধ্যমে। তবে ২০০৯ সালে ‘এ সিঙ্গেল ম্যান’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। তার আগ পর্যন্ত গায়ে পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতার তকমা লেগে যাওয়া কলিন এ চলচ্চিত্রটির জন্য বাফটা পুরস্কার জিতে নেন। এছাড়া সে বছর সেরা অভিনেতার অস্কার, স্ক্রিন গিল্ড পুরস্কার সহ সম্মাজনক সব পুরস্কারের জন্যই মনোনীত হোন। আর গত বছরের দি কিংস স্পিচ এর চলছে জয়জয়কার । তাই অস্কার পুরস্কার পেয়ে কলিন ফার্থ বলেই ফেললেন, ‘যাক, এবার ক্যারিয়ারে বুঝি গতি এলো ।’

এ দু’টি ছাড়াও ফার্থ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- দি ইংলিশ পেশেন্ট (১৯৯৬), শেক্সপীয়ার ইন লাভ (১৯৯৮), ব্রিজিত জোন’স ডায়েরী (২০০১), মামা মিয়া (২০০৮), লাভ একচুয়ালি (২০০৩) ইত্যাদি। ২০০৭ সালে দি লাস্ট লিজিয়ন চলচ্চিত্রটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন বলিউডের বিউটি কুইন ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন

অভিনয়ের পাশাপাশি একজন লেখক ও কন্ঠশিল্পী হিসেবেও কলিন সমাদৃত। ২০০০ সালে তার লেখা ছোটগল্পের সংকলন ‘স্পিকিং উইথ দ্যা অ্যাঞ্জেল’ প্রকাশিত হয়।

মামা মিয়া চলচ্চিত্রে তিনি ‘লেডি কাম ডাউন’ গানটিতে রুপার্ট এভারেটের সঙ্গে কন্ঠ মিলান।

দুইবার বিবাহিত জীবনে কলিন তিন পুত্রের জনক। বর্তমান স্ত্রী ইটালিয়ান চলচ্চিত্র প্রযোজক লিভিয়া জিওগিয়লির সঙ্গে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। #

(১০ মার্চ ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:০৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×