somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি তোমাদের বাংলাদেশের জাতিসত্তা বিবর্জিত,আজন্মপাপী,বঞ্চিত,লাঞ্ছিত এক সংখ্যালঘু হতভাগা হারাধন বলতেছি .....

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি জানি সেই সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পরিক্রমায় তোমাদের এই ভূখন্ডে আমার জন্মটাই আজন্মপাপ আর অভিশপ্ত । আমার এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আর গ্লানি আমি যুগ থেকে যুগে বয়ে চলছি। বিশ্বাস কর অনেক ঝড় তুফানের পরেও নাড়ির টানের ভালবাসায় এই মাটির অন্ধমোহ তবু ছাড়তে পারি নি। বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি নি আমার অভিশপ্ত জন্মের রক্তের ঋণের সাথে । সাতচল্লিশের দাঙ্গায় ওরা ধর্মের দোহায় দিয়ে আমার পূর্ব পুরুষদের অনেককে পিটিয়ে মেরেছিল । বাধ্য করেছিল জন্মভূমির দাবি ছেড়ে আজানা মরুভূমির যাযাবর বাসিন্ধা হতে । সেইবার সবকিছু হারিয়েও আমি দেখেছি আমার পরিবার সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের আলিঙ্গন ত্যাগ করেছিল শুধু জন্মভূমির প্রতি ভালবাসার দায়বদ্ধতার তাড়নায় । আর এই ভালবাসার প্রতিদানে একাত্তরে ওরা আবারো আমার কপালে সিল লেগে যাওয়া সিঁদুরের দোহায় দিয়ে আমার চোখের সামনেই আমার পিতামহকে জবাই করে মেরেছিল। জ্বালিয়ে দিয়েছিল আমার পূর্বপুরুষের শেষ সৃতি ও মাথা গোঁজার একমাত্র সম্বল বাড়িটা । সেইবারও জন্মভূমির এমন অমোগ সংকটে চোখ বুঝে সহ্য করতে পারি নি। হাতে তুলে নিয়েছিলাম অস্ত্র । মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক বুক আশায় নতুন একটি স্বপ্নের মোহ নিয়ে ফিরে আসতেই দেখি আমার স্বপ্নের জোড়া তালি দেয়ার মত কোন কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা । ধর্মীয় পুরানো হায়েনারা আমার পরিবারের সদস্যদের সারিবদ্ধ বৃভৎস লাশ শকুনের খাবার বানিয়ে রেখেছিল । নিজ হাতে এত গুলো প্রিয় মানুষের চিতাই আগুন দেয়ার পর হয়ত রক্তের বন্ধনের শূন্যতা বেশ পীড়া দিয়েছিল, কিন্তু আমি হারাধনের তবু কোন অক্ষেপ ছিল না, সংকোচ ছিল না, ক্ষোভ ছিল না কারণ এত রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আমি একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি । কিন্তু কে জানত এই রক্ত আর ভালবাসার অশ্রু জড়িয়ে থাকা মাতৃভূমি কোন দিনও আমার হবে না ।

যে চেতনা আর আদর্শে বলিয়ান হয়ে এতটা বছর এই মাটি কামঁড়ে ধরে ছিলাম । নিজের স্বার্থ আর ভবিষ্যতের মোহ জলাঞ্জলি দিয়ে মাতৃভূমিকে ভালবেসেছিলাম অথচ আজ এতটা বছর পরে এসে সেই ট্র্যাজেডি বিদ্ধ প্রশ্ন আমাকে আঘাত করতেছে। কেন , কি জন্য, কিসের মোহে, তিলে তিলে নিজেকে উৎসর্গ করেছে তুমি হারাধন ?? কি পেলে তুমি ? তোমার মাথার উপরে চেয়ে দেখ কোন আকাশ নেই আছে এক ধুঁ ধুঁ মরূদ্যান । তোমার কোন দেশ নেই । কোন সীমানা নেই । সংবিধানে তোমার কোন অস্তিত্তেই নেই । যে দেশের জন্য তোমার এত গর্ভ এত অহংকার সে দেশের ত্রি সীমানাই তুমি একজন আগন্তুক মাত্র ।

এই যে সেই দিন পুরানো শকুন গুলো আবারো তুমি হারাধনের বাড়িতে আগুন দিল,লুটপাত করল,বেদম প্রহার করল । ভেঙ্গে দিল তোমার স্বাদের প্রতিমা,জ্বালিয়ে দিল মন্দির । কই তোমার সাহায্যে তো কোন দরদী বন্ধু এগিয়ে আসে নাই ? দুই একটা সংবাদের শিরোনামে তোমার অসহায়ত্ত্ব নিয়ে ওরা রাজনীতি করেছে মাত্র হয়ত কিছু দায়ছাড়া সহানুভূতি তোমার কপালে জুটেছে । কিন্তু ওরা কি খবর নিয়েছে কিভাবে আজকে চারটা দিন তুমি তোমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশে রাত্রি যাপন করতেছ ? কিভাবে এত গুলো অসহায় মুখের খাবার যোগান দিচ্ছ? কতটা নিরাপত্তাহীনতাই, ভয় আর আতংকে তুমি সময় কাটাচ্ছো কেউ কি খবর নিয়েছে? তুমি মরলে প্রধানমন্ত্রী শোক জ্ঞাপনের সময় নেই । মানবতাদরদীদের কোন এনজিও অর্থায়ন করবে না তাই তাঁদের ও তুমি পাশে পাবে না। দেশে প্রয়োজনে আরো দশটা বিনোদন পার্ক হবে কিন্তু তোমার আর নতুন ঘর তোলা হবে না হারাধন। শাহবাগে প্রয়োজনে আরো কোটি মোম জ্বালানো হবে কিন্তু তুমি হারাধনের আজন্ম আধাঁর ঘরের বাতি কখনো জ্বলবে না । তিন মিনিটের নিরাবতা পালনের শান্তির মহীসোপানে তলিয়ে যাবে দেশ কিন্তু তোমার ষার্ট উর্ধ বৃদ্ধ মা যে এই হায়েনাদের থাবায় চির স্তব্দ হয়ে নিঃশব্ধ বিদায় নিল এই খবর পৃথিবী জানবে না । একদিন হয়ত এই বহু হিসেব নিকেশের গণজাগরণ বিদ্ধেষী ধর্মাদ্ধ পেতাত্তাদের ত্রাসের অগ্নিকুণ্ডে তুমি নিজেই হারিয়ে যাবে, কিন্তু তুমি সংখ্যালঘু হারাধনের এই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম, এই মমতা, এই ত্যাগ আমাদের আয়েশী ইতিহাসের বইয়ে কখনো চাপা হবে না। হয়ত কেউ জানবেও না। শুনে রাখ হারাধন, এই দেশে রাজাকারের মুক্তিযোদ্ধা হওয়া খুবই সহজ কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেমিক হয়ে বেঁচে থাকাটা বেশ কঠিন । দুই চারটা বড় বড় কথা লেখা ছাড়া তোমার জন্য আর কিছুই করতে পারলাম না, পারলে আমায় ক্ষমাকর হারাধন ।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×