somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একরাশ হিংসা

১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
জানো, আমি ছোট থাকতে বিড়ালের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতাম। আমি যেখানে পড়তে যেতাম সেখানে একটা বিড়াল থাকতো। কয়েক মাস পরপরই বিড়ালটা কতগুলো ইঁদুরের মতো বাচ্চা দিতো। জন্মের পরপরই ক্যাঁচকোঁচ শুরু করে দিত। সপ্তাহখানেক পরে গায়ে লোম গজালে কি সুন্দর ফুটফুটে লাগতো বিশ্বাস করবা না। আমি ওগুলোর গলায় অনেক আদর করতাম। আর আদর পেয়ে ওগুলো চোখ বন্ধ করে ফেলত।

ছেলেটা যে বিড়াল পছন্দ করে, মেয়েটা তা অনেক আগে থেকেই জানতো। এভাবে বিড়ালের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর ঘটনাও জানতো। কিন্তু প্রতিবারই যখন ছেলেটা এই কথা বলতে যায়, মেয়েটার যেন রাগ ওঠে। তারা দু'জন ঠিক করেছিল তারা বাসায় দু'টো বিড়াল পালবে। কিন্তু বিড়াল দু'টো হলে বাচ্চাকাচ্চা দিয়ে ভরে ফেলবে এই ভয়ে শেষে একটা বিড়াল পালার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ছেলেটার মুখে বিড়ালকে এতো আদর করার কথা শুনে মেয়েটার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

'আমাদের বাসায় বিলাই পালা নিষেধ,' রুল জারি করে যেন মেয়েটা।
'ওমা! কেন? বিলাই কী দোষ করেছে?' X((
'বিলাই কোনো দোষ করেনি, দোষ করেছ তুমি,' দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে বলে মেয়েটা। X((X((
'আমি আবার কী করলাম?' :-*
'আমাদের বাসায় বিলাই থাকলে তুমি সারাদিন বিড়ালের পেছনেই কাটাবা। আমাকে তোমার আর চোখে পড়বে না। এ জন্য বিড়াল পালা আমাদের ঘরে নিষেধ। আমি বিলাই একেবারে ঘরের বাইরে ফেলে দিব।' X((
'আমি কি বলেছি নাকি যে আমি তোমাকে ভুলে গিয়ে বিলাই নিয়ে থাকবো?' X((
'না, আমি এতোকিছু জানিনা। বিলাই পালা নিষেধ ব্যস নিষেধ।' X(
'না আমি বিলাই পালবো,' ছেলেটা যেন কাঁদো-কাঁদো গলায় বলে। তা দেখে মেয়েটার মন নরম হয়। সে বলে, 'আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু ততোটুকুই আদর করবা যতটুকু না করলেই না।'

ছেলেটা যেন খুশি হয়ে ওঠে আবার। 'আচ্ছা ঠিক আছে। প্রতি বেলা খাবার দেয়ার সময় বিলাইটার গাল চুলকে দিবো। গলায় চুলকে দেব। আর যদি কোলে আসতে চায় তাহলে কোলে নিব।' B-)

বিলাই কোলে নেয়ার কথা শুনে মেয়েটার মেজাজ আবার খারাপ হয়ে যায়। সে বলে, 'আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তোমার বিলাই নিয়ে তুমিই থাকো। আমি থাকবো না তোমার সাথে।' :P /:) X((
'সে কি! তাহলে বিলাই থাকবে কই?' বিচলিত হওয়ার ভান করে ছেলেটা। মেয়েটা রেগে বলে, 'কেন? আমি বুঝি সারাদিন বিলাই কোলে নিয়ে থাকবো? X( '
'না, তা না। কিন্তু বিলাই তো তোমার আর আমার সংসারে থাকবে, তাই না? তুমিই যদি না থাকো, তাহলে তো আমাদের সংসারও হলো না। আমাদের সংসারই যদি না হয়, তাহলে বিলাই আসবে কোত্থেকে?' :((:((

কিন্তু তার এই কথার জবাব দেয় না মেয়েটা।

২.
কথাগুলো শুরু হয় একটু অন্যভাবে। ছেলেটা প্রথমে বলে, সে আজ দোকানে খরগোশ দেখেছে। কিউট কিউট দেখতে খরগোশগুলো তাকে দেখে খাঁচার ভিতর থেকেই এগিয়ে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। ছেলেটার এই কথা শুনে মেয়েটারও মনে পড়ে তার ছোটবেলার কথা।

সে অনেক ছোট থাকতে খরগোশ নিয়ে খেলত। খরগোশ নিয়ে আবার কীভাবে খেলে, এমন প্রশ্ন করে ছেলেটা। মেয়েটা বলে, খরগোশ কোলে নিত। খরগোশ ছেড়ে দিলে খরগোশ দৌড়াতো, মেয়েটাও পেছন পেছন দৌড়াতো। খুব অল্পবয়সের ছিল তখন মেয়েটা। ছেলেটা মনে মনে কল্পনা করে এই দৃশ্য। বাচ্চা একটা মেয়ে একটা সাদা খরগোশের পেছনে ছুটছে। আচ্ছা, খরগোশটা তখন বেশি কিউট ছিল, নাকি মেয়েটা? মেয়েটার দিকে তাকায় সে। সে নিশ্চিত, মেয়েটা বেশি সুন্দর ছিল।

খরগোশ নিয়ে খেলার কথা বলার পর ছেলেটারও বিড়ালের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর কথা মনে পড়ে যায়। তখনই সে কথাগুলো মেয়েটাকে বলে।

৩.
'কী হলো কথা বলছো না কেন?' ছেলেটা জিজ্ঞেস করে।
'না, ঠিক করেছি তুমি বিলাইকে বেশি আদর করলে আমিও দু'টা খরগোশ ধরে আনবো। ওগুলোকে আদর করে আর ওদের সাথে খেলে সময় কাটাব।' 8-|
রেগে যায় ছেলেটা, 'আমি খরগোশকে কান ধরে বের করে দিব। X((X((X(( খরগোশের কান বড় আছে, বের করতে সমস্যা হবে না।' :D:D

'তাহলে তুমিও বিলাই পালতে পারবানা।' মেয়েটা বলে, 'পাললেও খুব বেশি আদর করতে পারবানা।'
'আচ্ছা ঠিক আছে বললাম তো। তোমাকে বেশি সময় দেব।'
মেয়েটা খুশি হয়।
তার হাসিমুখ দেখে ছেলেটাও খুশি হয়।

সেই মুহুর্তের পূর্ব পর্যন্ত ছেলেটার মনে খরগোশ নিয়ে আর মেয়েটার বিড়ালের প্রতি একরাশ হিংসা বাসা বাঁধে। এই হিংসাও যেন অনেক সুইট, অনেক ভালোবাসার, অনেক স্বপ্ন আর অভিমানে ভরা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:২৬
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×