somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অগ্নিঝরা মার্চ, আমাদের নয় মাসের ত্যাগ, আর বর্তমান সময়ে আমরা। আরেক মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রজন্ম আন্দোলন!

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ভাতের কষ্ট খুব বড় কষ্ট। যুদ্ধের সময় যখন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলাম- ভাতের চিন্তাটাই ছিল দিন রাত্রীর একমাত্র চিন্তা। শরনার্থী শিবিরে ভাতের ফ্যান পাওয়া যেত বহু কষ্টে। ভাত পেতাম না। বহু কষ্টে মাঝে মাঝে বিস্কুট পেতাম দু একটা। খুব অবাক ব্যাপার কি জানিস? ভাত খেতে ইচ্ছে হলে ত্রিপুরায় জঙ্গলের অনেক ভেতরে চলে যেতাম। সেখানে বিশাল এক ট্রেনিং সেন্টার খুলেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য। হরিণা ক্যাম্প। মনু থানার আন্ডারে ছিল সেটা। জঙ্গলের ভেতরে যে এত বড় একটা ক্যাম্প আছে- বাহির থেকে কেউ কল্পনাও করতে পারতো না। আমাদের ছোট চাচা সেখানে ট্রেনিং করাতো। কমান্ডার ছিল। শরনার্থী শিবির থেকে অবশ্য জায়গাটা বহু দূরে। কিন্তু খিদা বড় কঠিন জিনিস। মাইলের পর মেইল রাস্তাও এতটুকু হয়ে আসতো খিদের জ্বালায়। সেখানে গভীর রাতে গেলে ভাত পাওয়া যেত। ঘর বাড়ী ছেড়ে আসা সেই সব মুক্তিযোদ্ধারা ভাত দিত আমাদের মত ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের। নিজেরা খেতে পারতো না। কদিন আগেই বাবা, মা, ভাই-বোনকে হারিয়ে এসেছে তারা। কারো হয়ত ছেলে মারা গেছে পাকিস্তানীদের হাতে, কারো বোনকে তুলে নিয়ে গেছে ক্যাম্পে, কারো বাবার চোখ উপরে নিয়েছে, মেরে ফেলেছে ছড়ার ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে গুলি মেরে। খুব গভীর রাতে যখন সেই ক্যাম্পে পা টিপে টিপে যেতাম ভাতের জন্য- বিস্মিত হয়ে দেখতাম পুরুষেরাও কাঁদতে জানে, বীরেরা গভীর রাতে কাঁদে। যে সেই কান্নার আওয়াজ পায়নি কানে- সে কোনোদিন বুঝতে পারবে না আমাদের মুক্তিযুদ্ধারা কে ছিল আসলে? আমি নিজের চোখে দেখেছি ক্যাম্পের মূল অংশ থেকে একটু দূরে জঙ্গলের ভেতর দিকে গিয়ে মাটির ওপর শুয়ে কেঁদে আসতো তারা। মাটির ওপর ঘাস খামচে ধরে তুলে ফেলতে থাকতো চাপা কান্নার চোটে। কিন্তু কাউকে টের পেতে দিতে চাইতো না সজন হারিয়ে, ঘর বাড়ী হারিয়ে তাদের শিশুর মত কান্নাটুকু কেউ দেখতে পাক। কিন্তু আমি যখন গভীর রাতে সেখানে হাঁটতাম- অবাক হয়ে শুনেছি রাতের সুনসান নীরবতার মাঝে একে একে অনেক বীরের কান্নার সুর শোনা যেতে থাকে। আমি যখন ভাতের জন্য যেতাম- নিজেদের পেট ভরা আছে বলে আমাকে তাদের ভাগের ভাত দিয়ে দিত। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে কত রাত ভাত খায়নি- কেউ জানে না। যারা নিস্তব্ধ সেই রাতে হেঁটে বেরিয়েছে ত্রিপুরার ভেতরের সেই ক্যাম্পে- তারা হয়ত একটু হলেও বুঝতে পারবে যে সেই কান্নায় কি ছিল যে প্রতি রাতে ভাতের জন্য ঘুরতে গিয়ে তাদের চাপা কান্নায় নিজের চোখে পানি চলে আসতো। ময়লা শার্টের হাতায় সেই পানি মুছতে মুছতে তাদের দেয়া ভাত খেতাম। আমাদের জাতিটাকে আমরা প্রায়ই অনেক ছোট করে দেখি বাহিরের পৃথিবীর অন্যান্যদের থেকে। কিন্তু কেউ কি আর জানে এই দেশের মানুষগুলো কতটা মমতা ধারণ করেছে তাদের এক বুকে? কেউ জানে না। লাশের হিসেবই জানে সবাই। জয় পরাজয়ের হিসেবই জানে। গভীর রাতের নিঃশব্দতা খান খান করে ভেঙে দেয়া কোনো বীরের কান্নার আওয়াজ পায়নি আমাদের এখনকার কেউ। যদি পেত- জনম জনম এই দেশের মাটিকে বুকের সাথে জাপ্টে রাখার চেষ্টা করতো।

আজ সেই রক্ত,ত্যাগ, কষ্ট, মা-বোনের সম্ভ্রম সব বৃথা যাবে? আমরা কি এই ৪০ বছর পরেও স্বাধীনতা বিরোধী পশুগুলোর হাতে বার বার ধর্ষীত হয়ে যাব? আর তারাও ধর্মের দোহাই দিয়ে বার বার বেঁচে যাবে? আর আমারি দেশের কিছু বাঙালির ঘর,বাড়ি পুড়িয়ে উল্লাস করবে? আর কত দিন সহ্য করবো? আর নয়। চলুন সপথ করি দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে নামবো। প্রজন্ম আন্দোলন এর সাথে মিলে বাংলা থেকে তাড়াবো সব ময়লা।
এবারের যুদ্ধ হবে আমাদের আসাম্প্রদায়িক বাংলায় ধর্মের নামে অনাচার করা জামাত-শিবির তাড়ানোর যুদ্ধ। আর কোন পাপীর নিঃশ্বাসে দূষিত হতে দেবো না বাংলার বাতাসকে।

জয় বাংলা।


(কিছুটা সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×