somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আব্বার অন্তিম সময়টা

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আব্বার অন্তিম সময়টা (৩ জুন ১৯৩৯- ২৩ জুলাই ২০১৩)
(রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস ছাগিরা)

২৩ জুলাই ২০১৩। তখন আকাশে সূর্যটা প্রায় অস্তমিত হয় হয় ।কিছুটা আলো ছড়াচ্ছে ।হালকা আবিরে প্রকৃতি খানিকটা রক্তাভ ।সারাটা দিন আমি হাসপাতালে আব্বার পাশে ।আব্বার পেটে পানি (এসাইটিস) বেড়ে যাওয়ায় আব্বার কষ্ট হচ্ছে ,সে কষ্ট আমি যেন মর্মে মর্মে টের পাচ্ছি ।গতকাল আব্বার পেট থেকে ২ লিঃ পানি বের করার পরও আজ আবার জমে গেছে ।তাই আমি একবার মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট একবার ডাক্তার করছি ।একজন অঙ্কোলজিস্ট পেলাম সে আশাব্যাঞ্জক কিছু না বলে বললো কাল পানি বের করে দেবে । আশায় থাকলাম । ডাক্তার অবস্থাটা মেনে নিতে বললেন ।
- কোন সন্তান বাবার কষ্টের অবস্থাটা মেনে নিতে পারে ? আমিও পারিনা ।আব্বার থেকে লুকিয়ে থাকি, একটু দূরে দূরে থাকছিলাম ।দুপুরে আব্বাকে বসিয়ে আমি আর আমার ভাবি ৩/৪ চামচ স্যুপ খাওয়ালাম। তখনো জানতাম না এই তার শেষ খাওয়া ।
গত ৩ তিন ধরে আব্বা আমাদের সাথে তেমন কথা-টথা বলেননি, শুধু একটাই জিকির করেছেন- -''লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ '' পরে বুঝেছিলাম যে, কোন একটা ইশারা তিনি পেয়েছেন । দুপুর নাগাদ নিশসাসে কষ্ট হওয়া শুরু হলে ওয়ার্ডের HDU তে নিয়ে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হলে একটু বেটার মনে হলেও ICU (HDU-2) তে নেয়া হল ।ওখানে ফের অক্সিজেন মাস্ক , মনিটর,স্যালাইন লাগানো হল ।তখনো আব্বার নিশসাসে কষ্ট হচ্ছিল । ICU র ওরা বল্লো ঠিক হয়ে যাবে ।
আব্বা বিড়বিড় করে জিকির করে চলেছেন ,আমরা তাকিয়ে আছি তার দিকে --সময় যেন থমকে আছে । আব্বার মুখটা ডান দিকে (পশ্চিম)ফেরানো ।বোঝা যাচ্ছে নিশসাস নেয়াটা সহজ হচ্ছেনা । হটাৎ আব্বার ব্লাড প্রেশার দ্রুত কমতে থাকলো ।মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট বললো -লা ইলাহা পড়েন । আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়!! আব্বা তখনো মুখ নাড়ছেন ,-লা ইলাহা পড়ছেন যা তিনি গত ৭২ ঘ ন্টা ধরে এক নাগাড়ে করে চলেছেন । মূহুর্তেই আব্বার ৭৩/৭৪ বছর ধরে বয়ে চলা নিশসাস বন্ধ হয়ে গেল ।(ইন্না লিল্লাহি- - - রাজেউন )। আমি স্থানুর মত দাঁড়িয়ে রইলাম ।যেন পায়ে আমার আশি মন পাথর বাঁধা । আমি মুক আর বধির হয়ে গেলাম ।পুরো ব্যাপারটা আচানক ঘটে গেল ।
মা ডুকরে উঠল। ভাবি কেঁদে উঠল ।আমার মধ্যে কান্নার বন্যা বয়ে গেল । বিশসাসই করতে পারছিলাম না যে আব্বা আর নেই, তিনি খুব সাভাবিকভাবেই চলে গেলেন ।আমি অসহায়ের মত আশা নিয়ে লাগানো যন্ত্রপাতির দিকে তাকিয়ে আছি ।মনে হচ্ছিল আব্বার নিশসাস আবার চালু হবে ।আব্বার গা তখনো গরম ! সবখানেই জীবনের ছাপ অথচ আব্বাই নেই ।
এভাবেই আমার আব্বা আমাদের চি র দিনের ম ত ছেড়ে চলে গেলেন ।
এভাবেই আব্বাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম !

মাত্র ৪ মাসের মধ্যে লিভার সিরোসিস ধরা পড়লে,সেখান থেকে লিভার ক্যান্সার ।গত ৪ মাসে আমাদের শত প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ল।শেষ হয়ে গেল তাকে বাঁচানোর যুদ্ধ !আমরা হেরে গেলাম ।এটাই সাভাবিক কারন মহান আল্লাহ তায়ালা যা নির্ধারন করে রেখেছেন তা ঘটবেই ।পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের আগে যখন আল্লাহ সকল দোয়া কবুল করে থাকেন তখন আব্বা কালেমা পড়তে পড়তে আল্লাহর কাছে চলে গেলেন ।
এরপর সারা সময়টা আব্বার সাথে ।আব্বার শেষ গোসল, তাঁর হজ্জের ইহরামের কাপড় দিয়ে কাফন পরানো ,ঢাকা থেকে এক গাড়িতে গ্রামে যাওয়া,জানাজা এবং সবশেষে আমরা ৩ ভাই মিলে আব্বাকে পরম মমতায় গ্রামে আব্বার পরিচিত মাটিতে (কবরে) শুইয়ে দিলাম অশ্রুজলে ।যেন ঘুমন্ত একটা মানুষকে আলতো করে শুইয়ে দেয়া ।
তারপর শুধু চোখ ঝাপসা স্মৃতি -- - - --
তারপর শুধু অসীম কষ্ট,দুঃখ, শূন্যতা -- ---- -- -- -
তারপর শুধু পিতার জন্য পুত্রের আজীবন হাহাকার- - - - -

''আব্বা ,মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে জান্নাতবাসী করুন ,আমিন ।''
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×