somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধ্যাপক ইউনুস ও কিছু কথা

০৮ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অধ্যাপক ইউনুস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী নাগরিক। তিনি বয়ে এনেছেন দেশের জন্য প্রভূত সন্মান। বর্তমানে তাঁর পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী ব্যক্তিবর্গ। এটাও কম গৌরবের বিষয় নয়। কিন্তু, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষজন সব কিছুকে খুব দ্রুত গুলিয়ে ফেলেন এবং এর মধ্যে থেকে ভাল আর মন্দের প্রভেদটুকু ঠিকভাবে করতে পারেননা। এর ফলে, আমাদের দেশের মানুষগুলো, যারা দেশের জন্য ভাল কাজ করেন, তারা সর্বদাই তাদের প্রাপ্য সন্মান থেকে বঞ্চিত হন। প্রথমেই এ বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার।

বাংলাদেশের যে মানুষটি বিশ্বের দরবারে সবচেয়ে বেশী পরিচিতি লাভ করেছেন, তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তাঁর জীবনের দুই তৃতীয়াংশ সময়ই জেলখানার অন্তরালে কাটিয়েছিলেন, এদেশের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলার অপরাধে। এই মানুষটি যখন ক্ষমতায় গেলেন, তখন কিছু ভুল করলেন। আর, আমরা, তার সেই ভুলগুলো তো ক্ষমা করলামই না, শেষ পর্যন্ত উনি কি করেন, তা দেখারও ধৈর্য ধারণ করতে পারলাম না। সপরিবারে তাঁকে হত্যা করলাম। অথচ, দেশে তখন বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে বিরোধীশক্তি হিসেবে ন্যাপ ভাসানি এবং বাম ফ্রন্টগুলোর একটি ভাল এবং শক্ত অবস্থান ছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচন মেয়াদ পূর্ণ হলেই নতুন নির্বাচন দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষতা হস্তান্তর করা যেত। পাশাপাশি, আরও সত্য কথা হচ্ছে, মানুষ মাত্রই ভুল, সুতরাং, আমরা বঙ্গবন্ধুর ভুলগুলোর সমালোচনা করতেই পারি, কিন্তু, বাংলাদেশ গড়ার পিছনে তাঁর যে অবদান, তা আমরা কিভাবে অস্বীকার করবো?

অধ্যাপক ইউনুস বাংলাদেশ এর জন্য অনেক বড় কাজ করেছেন, নোবেল বিজয়ের মাধ্যমে। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু, তাঁর যে উত্থান, সে উত্থানের পটভূমিকা কি, তাও নিশ্চই আমরা আলোচনা করতেই পারি। তিনি নোবেল জয় করেছেন, আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাই, কিন্তু, তিনিও তো সমালোচনার উর্ধ্বে নন। আমরা বাঙ্গালীরা কেন যেন এই বিষয়টি খুব দ্রুত ভূলে যাই? যদি নোবেল পাবার উসিলায় ড. ইউনুসের সব অতীতকে ভুলে যেতে বলা হয়, তাহলে তো এই দাবীও করা যেতেই পারে, দেশ স্বাধীন হবার নের্তৃত্ব দেবার কারণে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সংগঠিত সকল ভুল ও আমরা ভুলে যাব! যুক্তির নীতি তো সেটাই বলে, আর এক যাত্রায় তো পৃথক ফল হতে পারে না। যারা আজ ড. ইউনুসের পক্ষে এত কথা বলছেন, তাঁরা এই ব্যাপারটি ভেবে দেখেছেন কি?

আমি '‌ক্ষুদ্র ঋণ' সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলবো। আমি নিশ্চিত করে এটা বলতে পারি, যারা ড.ইউনুস-এর পক্ষে এত অভিমত দিচ্ছেন, তাঁদের ৯৫%-এর ও বেশী মানুষের কাছে '‌ক্ষুদ্র ঋণ' সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। আমি ব্রাক-এর '‌ক্ষুদ্র ঋণ' বিভাগের একটি প্রকল্পের ৩টি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ছিলাম। আমি জানি, '‌ক্ষুদ্র ঋণ' কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি? এবং এগুলো প্রদান করতে এবং অর্থ উত্তোলন করতে কি রকম অমানবিক রকমের অন্যায় কাজ করতে হয় স্থানীয় '‌ক্ষুদ্র ঋণ' ম্যানেজারদেরকে। এইভাবে সুদের টাকা আদায়কে শুধু অমানবিক বলাটাই ভুল হবে, এই পন্থাটা রীতিমত বে-আইনী এবং এই সব ম্যানেজারদের জেল সহ সশ্রম কারাদন্ড হওয়া উচিত। এটা শুধু বাংলাদেশ বলে তা হয় না, গরীব লোকগুলো আদালতে যেতে ভয় পায়। আর, এই '‌ক্ষুদ্র ঋণ' প্রকল্পের কাজ সফলভাবে সম্প্রসারণ সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে, কারণ, দেশদুটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত এবং এদের কাছে টাকার কোন উৎস নেই। আর, শিক্ষার হার ও খুবই কম সেখানে। তাই, এদেরকে যা অফার দেয়া হয়, তাই তারা গ্রহণ করে, কিছু না বুঝেই। একই ব্যাপারটা ঘটেছিল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। আর যারা বুঝে গিয়েছে, '‌ক্ষুদ্র ঋণ'-এর নামে শুভঙ্করের ফাকিবাজি, তারা ইতোমধ্যেই পশ্চাতদেশে লাথি মেরে ব্র্যাক আর গ্রমীন-এর '‌ক্ষুদ্র ঋণ' প্রকল্প কে তাদের দেশ থেকে হটিয়েছে। ভারতে হটিয়েছে গত বছর, আরও ২-৩ বছর এর মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও হটাবে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কেন এর জন্য নোবেল দেয়া হল? এর মূল কারণ হল, '‌ক্ষুদ্র ঋণ' প্রকল্পের যে প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় বিশ্বে রয়েছে, সেগুলোই মূলতঃ পশ্চিমা দেশগুলোরে ডেভেলপমেনট প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার। পয়সার কাছে ব্যক্তি মানুষের বিক্রি হয়ে যাওয়াটা খুব সহজ, কিন্তু, গোটা ১ টা সরকারের বিক্রি হওয়াটা খুব কঠিন। দাতাগোষ্ঠী'র শর্তগুলো খুব ভালোভাবেই পূরণ করতে পারে এই সব '‌ক্ষুদ্র ঋণ'-প্রকল্পের ব্যক্তিবর্গ। এই '‌ক্ষুদ্র ঋণ' প্রকল্পের মধ্যে সবচাইতে ভালো লবিং রয়েছে ড.ইউনুস এর ই। আর, দাতাগোষ্ঠীর প্রধান শর্তগুলোর মধ্যে ১ নং হল নারীর ক্ষমতায়ন। যত বেশী নারী কোটার মাধ্যমে চাকুরীতে ঢুকবে, ততই পুরুষের চাকুরীক্ষেত্র সংকুচিত হবে, ততই যোগ্য পুরুষেরা তৃতীয় বিশ্বে ছেড়ে পেটের ধান্দায় ১ম বিশ্বের কাছে গিয়ে ধরণা দিতে বাধ্য হবে। এরফলে, যোগ্য কর্মী পাবে ১ম বিশ্বই, তারাই সর্বদা এগিয়ে থাকবে। আর কোটা দিয়ে সাবসিডি এর মাধ্যমে কম যোগ্যতা সম্পন্ন নারীদের দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের চাকুরী স্থানগুলো পূরণ করা হবে।

তবে হ্যাঁ, এটা সত্যি, ড.ইউনুস ভালোভাবেই পান আর মন্দভাবেই পান, নোবেল, নোবেলই। তাই, উনার ব্যাপারে এত তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়াটা প্রশ্নসাপেক্ষ অবশ্যই। আর, একজন নোবেল ব্যক্তিত্ব অবশ্যই একজন আন্তর্জাতিক সম্পদ। সুতরাং উনার বিষয়ে কিছু ভাবনা-চিন্তা করার আগে একটু ভেবে নেয়া উচিত ছিল বৈকি। আর, আইনের কাজ আইন করবে, এটা নিয়ে সরকারের সরাসরি জড়িত হবার কোন দরকারই ছিল না। বরং এখন জড়িত হকে গিয়ে তা অনেক প্রশ্নের ই জন্ম দিচ্ছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×