somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেথা বাবার খোঁজ পেলেন, পেলেন না দেখা।

০৮ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রথম আলো ০৮-০৩-২০১১

বাবার খোঁজ পেলেন নেথা ইসলাম। জানলেন বাবার পরিবারের কথা। কিন্তু পেলেন না কেবল বাবার দেখা। পাওয়া আর সম্ভবও নয়। বাবা ফকরুল ইসলাম বেঁচে নেই। গত হয়েছেন ২৭ বছর আগে, ১৯৮৪ সালে। তবে দেখা পেয়েছেন তিনি বাবার চাচাতো ভাইয়ের। জেনেছেন তাঁর বাংলাদেশি স্বজনদের কথা। পেয়েছেন শেকড়ের সন্ধান।
কাকতাল দিয়ে শুরু! কামরুজ্জামান রুমানের বাড়ি সিলেটের কুলাউড়ায়। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছেন। গতকাল সকালে প্রথম আলোয় তিনি পড়েন ‘বাবার জন্য ভালোবাসা’র খবর। বাবার খোঁজে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৪০ বছরের নেথা ইসলাম। সংবাদটি পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন রুমান।
বিকেলে রুমান বাসায় ফেরেন। গল্পের ছলে খবরটি শোনাচ্ছিলেন তালুই (ফুফুর বেয়াই) নিজামউদ্দিন আহমেদকে। একপর্যায়ে মেয়েটির বাবার নাম বলতেই চমকে ওঠেন নিজামউদ্দিন। ফকরুল যে তাঁর আপন চাচাতো ভাই! তিনি জানতে চান, মেয়েটির নাম কী? নাম শুনেই তাঁর মনে হয়, এ বুঝি ফকরুলের মেয়ে নীতা। নেথাকে তাঁরা নীতা নামেই জেনেছেন ফকরুলের কাছ থেকে। এরপর তিনি ইন্টারনেটে প্রথম আলোর সংবাদটি পড়েন। তাঁর আর কোনো সন্দেহ রইল না, এই নেথাই তাঁর চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। কারণ, নেথার ভাই ওমর ইসলামের নামও জানতেন তাঁরা। ইন্টারনেট থেকে প্রথম আলোর নম্বর নিয়ে ফোন করেন। কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
নিজামউদ্দিন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত ২০ জানুয়ারি তিনি দেশে বেড়াতে আসেন। আর নেথা এসেছেন ৪ ফেব্রুয়ারি। নেথার বাবার পরিবারের এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে এই সময়ে দেশে নিজামউদ্দিনের এই সফরটিও যেন কাকতাল। সন্ধ্যায় নেথাকে মুঠোফোনে জানানো হলো, সম্ভবত তোমার এক আত্মীয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নেথা। দুজনকে আসতে বলা হলো প্রথম আলোর কার্যালয়ে।
স্বজন আসবে শুনে একটু আগেভাগে এসে অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন নেথা। রাত নয়টায় আসেন নিজামউদ্দিন। প্রথম সাক্ষাতে বিস্মিত দুজন। নিজামউদ্দিন ইংরেজিতেই সম্বোধন করলেন, ‘নীতা, কেমন আছ?’ শুরু হয় দুজনের কথোপকথন। নিজামউদ্দিন বলতে থাকেন ফকরুলের গল্প। সাগ্রহে বাবার গল্প শুনতে থাকেন নীতা। কিন্তু বাবা কই? আনন্দের এই মুহূর্তেই তাঁকে জানতে হলো—বাবা নেই।
চোখ ভিজে যায় নেথার। ৪০ বছর ধরে যে বাবাকে তিনি মনে মনে খুঁজছেন। মায়ের অনুমতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত চলে এসেছেন বাংলাদেশে। ঢাকায় এক মাস ধরে পড়ে আছেন, যদি কোনোভাবে বাবার সন্ধান পান। শেষ পর্যন্ত তো সে সন্ধান মিলল। কিন্তু বাবা যে নেই! চাচা নিজামউদ্দিনকে প্রশ্ন, ‘কেমন ছিলেন আমার বাবা? কীভাবে মারা গেলেন? তিনি কি আমাদের কথা বলতেন?’
নিজামউদ্দিনের গল্প শেষ হয় না। বলেন, ফকরুল সব সময় নীতা ও ওমরের গল্প বলত। তখন ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। পেটে ব্যথা। আলসার জাতীয় কোনো অসুখ বাধিয়েছে। সব সময় বলত, ‘ভাবি (নিজামউদ্দিনের স্ত্রী), আমার ছেলেমেয়ের খোঁজ কইরেন আপনারা।’
নিজামউদ্দিনের স্ত্রী মীনার কাছে ফকরুল সব সময় গল্প করতেন তাঁর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে। মীনাও গতকাল কথা বলেছেন সেই নেথার সঙ্গে, টেলিফোনে। দীর্ঘ আলাপ, হাসি-কান্নার কাব্য।
ভালো কথা, নেথার মায়ের নাম লিন। চাচা নিজামউদ্দিন সে নাম বলে একটা পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলেন। কারণ, এ দেশে এসে নেথা কাউকেই মায়ের নামটি বলেননি।
নেথা তাঁর পরিবারের আরও অনেক সদস্যের খোঁজ পেয়েছেন। তাঁর বাবা ছিলেন মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তবে তাঁর বাবার পাঁচজন সৎভাইবোন আছেন। তাঁরা হলেন শামসুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম এবং দুই বোন রেনু বেগম ও সেবু বেগম। ফকরুলের আপন চাচাতো বোন হরফুন নেছা। তিনি পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়ে। নেথার খবর পেয়ে তিনিও যোগাযোগ করেছেন নিজামউদ্দিনের সঙ্গে। জানতে চেয়েছেন নেথা কবে আসবে সিলেটে?
নেথার বাবার বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউগ্রামে। বাবার কবরও সেখানে। বাবার কবর দেখতে যাবেন নেথা। বাবার জন্য জমানো আছে তাঁর অনেক কথা।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×