somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরুন্ধতী এবং তেলেগু মুভি ইন্ডার্স্টি

০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হরর মুভি দেখার বিপদ হইল, কখন যে ভয় পাবার বদলে হাসি পেয়ে যায়। এটা ভয়কে জয় করার ব্যাপার হইলে খুশি হবার কথা। কিন্তু আপনি চাইলেন টক কেউ দিলো ঝাল, কেমন লাগবে বলেন তো। তাই হরর মুভি শুনলে গায়ে জ্বর আসার মতো অবস্থা হয়। সর্বশেষ মিরর [২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত] মুভিটা দেইখা ভয় পাইছিলাম।

এই সপ্তাহে একখান তেলেগু মুভি দেখলাম। নাম অরুন্ধতী। এর আগে তামিল মুভি দেখছি, তেলেগু মনে হয় এটাই প্রথম [পরে চিরঞ্জীবী আর নাগার্জুন, মহেশবাবুর নাম দেইখা ধারণা পাল্টাইছি। এরা সবাই তেলেগু হিট নায়ক, এদের দুই একটা মুভি টিভিতে হিন্দী চ্যানেলে দেখছি]। কলকাতার মুভি মনে কইরা চালু করেছি। ওহ আল্লাহ কি, বিজাতীয় ভাষা এক অক্ষরও বুঝি নাই। একটা বুঝছি রক্তম মানে রক্ত। আর আল্লাহ তো আমরা বলিই। তেলেগু অন্ধপ্রদেশের ভাষা। একটা বুড়া মহিলারে দেখলাম। তারে মনে হয় মনি রত্মমের কোন মুভিতে দেখছি। ভাবতেছিলাম টেনেটুনে দেখি। কিন্তু দুই ঘন্টা আটার মতো স্ক্রিনে সেটে রইলাম। যেটুকু বুঝি নাই, সেখানে উইকিপিডিয়ার হেল্প তো আছে। পরে উইকিপিডিয়া ঘাইটা মজার সব তথ্য পাইলাম।

অন্ধপ্রদেশে ৩,৭০০টি সিনেমা হল আছে [যদিও উইকিপিডিয়ার অন্য একটি রেকর্ড কইতেছে ৩,৩০০টি]। এইখানে বছরে প্রায় ২০০ মুভি নির্মিত হয়। ইন্ডিয়ার মোট ডলবি ডিজিটাল থিয়েটারের মধ্যে চল্লিশ ভাগই [৯৩০টির মধ্যে ৩৩০টি] এই রাজ্যে। এইখানকার আইম্যাক্স থিয়েটারটি ২০০৭ সালে নির্মিত হয়। এটার নাম প্রাসাডস আইম্যাক্স। সেই সময় এটি ছিলো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্কিনের আইম্যাক্স থ্রিডি হল। এইখানকার মুভি ইন্ডার্টিজকে বলা হয় টলিউড। এখানে ভারতের সবচেয়ে বেশি মুভি নির্মিত হয়। অন্ধপ্রদেশের জিডিপি-তে টালিউড যোগ করে ১%। একসময় তেলেগু মুভির কেন্দ্র মাদ্রাজ হলেও সত্তরের পর থেকে সরতে সরতে এখন পুরোটাই হায়দ্রাবাদে। ফি বছর অনেকগুলা তেলেগু মুভির রিমিক হয় নানা রাজ্যে। তাছাড়া তেলেগু মুভি তামিল, মালায়লাম, উড়িয়া, হিন্দীতেও ডাব হয়।

অরুন্ধতী মুভির কাহিনী একই বংশের দুই নারীকে নিয়া। তারা সম্পর্কে দাদী ও নাতনী। যাদের চেহারা একই শত্রুও একই। অরুন্ধতী বিয়ের আগে তাদের গ্রামে আসে। গ্রামে এসে অদ্ভুত জটিলতায় পড়ে। সে জটিলতা নিরসন করতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়ে তার দাদীর করুন ইতিহাসের সামনে। যে ইতিহাস তার কাছ থেকে গোপন ছিলো। যিনি পিশাচ পশুপতিকে বন্দী করে ফেললেও মারতে পারেন নাই [এই পিশাচ তার চাচাতো ভাই এবং বোনের স্বামী, বিস্তর কাহিনী]। কারণ সে পিশাচরে মারলে প্রেতাত্মা হইয়া রাজ্যের মানুষের উপর অত্যাচার করবে। অরুন্ধতীর দাদী জেসেম্মা ছিলেন রাজা গাডওয়ার মেয়ে। মানে রাজকুমারী। কিন্তু পিশাচরে বন্দী কইরাও শান্তি নাই। দেশজুড়ে বিশ্রী হাহাকার, অভাব। ফকিরগণ কইলেন, সতী জেসেম্মাকে আত্মহুতী দিতে হইবো [সতীরা সব দেশে এই কি করে]। দাদীমা সব মেনে নেন। আত্মহুতি দেন। তার হাড় থেকে তৈয়ার হয় একটা ছুরি। ডেগার বললে ভারিক্কী লাগে…। তারপর অরুন্ধতী এক মুসলমান ফকিরের আস্তানায় গেলে ফকির তারে নানা কথা বলে। সে বিশ্বাস করে না। রাতের বেলায় অরুন্ধতী হবু স্বামী ফেনে কই, পুরানা রাজপ্রসাদে আসো। আসলে ফোন করছিলো পিশাচ পশুপতি…। তারপর শুরু হইলো খেল।

মুভির এডিটিং ভালো। কম পয়সার মধ্যে গ্রাফিকের খেলা ভালো দেখাইছে। যদি সেইসব সিনে মনে হয় কম্পুটারে গেমস খেলতেছি। কিন্তু কাটপিছ তো দেই না। চকচকে তকতকে নির্মাণ। সমালোচকগো কাছে এই মুভি সুনাম কুড়াইছে। যদিও আমাদের দেশে হইলে উল্টা হইতো। বলা হইতো, কোনো জাতের মুভি হয় নাই। বেশ কয়েকটা পুরষ্কারও পাইছে।

নামকরণে ও কাহিনীতে ধর্মের মাখামাখি। তবে মনে হয় না- মূলধারার কোন ধর্মের দেখা মেলে। এই কালী, ফকির, ওঝা, পীরের দরগা টিপিক্যাল লোক সমাজ। এইগুলা আবার কমন এনিমিকে কমন ইন্টারপ্রিটেশনে নিসে। খারাপ না। অন্ধপ্রদেশের জনসংখ্যার মাত্র নয় ভাগ মুসলমান। এটা এইজন্য কইতেছি মুসলমান ফকির দেখে চমকে উঠছিলাম। পরে জানলাম নিজামের মতো রাজাদের ঐতিহ্য আছে সেখানে। সম্প্রদায় সম্প্রতি খারাপ না। বর্ণনাগুলাও সরল-সহজ কিন্তু হাজির হয় চমক নিয়া। আর সামাজিক শত্রুকে চিহ্নিত করার ধরণটা ভালো লাগল।

খুশির কতা, এই মুভিতে বেশি গান নাই। মনে হয় দুইটা। তবে দুর্দান্তু একখান নাচ আছে। বড়ো বড়ো ওড়না নিয়ে নাচা। শূণ্যে নাচন। সেই ওড়না দিয়ে তবলায় তাল তোলা। বাস্তবে এমন কিছু কিনা সন্দেহ আছে। যদি থাকে তবে সেই নর্তকীর প্রশংসা করতেই হয়। ২০০৯ সালে নির্মিত এই মুভির বাজেট ১৩ কোটি রূপী। আয় করে ৬১ কোটি রূপী। তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাটির্জে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়।

এই মুভির পরিচালক Kodi Ramakrishna তার ত্রিশ বছরের ক্যারিয়ারে একশোর বেশি মুভির পরিচালনা করেন। নায়িকা আনুশকা সেটী সেখানকার উজ্জ্বল রত্ম। তবে তাদের যা চেহারা-সুরত মুম্বাইতে জায়গা করে নিতে পারবে না। ভিলেন সোনু শুড দারুন অভিনয় করেছেন। ডাবাং এর ভিলেন যেইটা আর কি।

তেলেগু সিনেমা অনেকগুলা গিনেস বুক রেকর্ডের মালিক। যেমন- Nandamuri Taraka Rama Rao মোট ১৮ বার শ্রী কৃষ্নের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।, Vijaya Nirmala নামের নারী পরিচালক ৪২টি মুভি বানিয়েছেন, D. Ramanaidu ১৩০টি মুভির প্রযোজক, S. P. Balasubrahmanyam সবচেয়ে মুভির গাওয়া গায়ক, Brahmanandam তেলেগু ভাষায় ৭৫০ টি মুভিতে কাজ করেছেন [শাকিব খান কি এই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারবে, মালায়লাম ভাষায় কমেডিয়ান Jagathy ১০০০টি মুভিতে অভিনয় করেছেন]।
অরুন্ধতী আর তেলেগু মুভি ইন্ডাস্টির্জ নিয়া উইকি ঘাইটা আরাম পাইলাম। সময় আর সুযোগ পাইলে আরো কিছু মুভি দেখবো।

বি. দ্র. নামের উচ্চারণ খটরমটর হওয়ায় ইংরেজীতে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:৩৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×