somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাজীহা
Quazi Hassan’ World of Writings

১৯৭১

০৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিছু শব্দের অপেক্ষায় আনোয়ারা খালা
ভাত, ডাল, আলু ভর্তা রাধা হয়েছে সেই কখন।
উঠোনে অবশেষে শোনা গেলো কিছু পায়ের শব্দ,
দরজায় মৃদু টোকা ।
“খালা, দরজা খোল, আমরা, আমরা তুমার মুক্তিযোদ্ধা ছাওয়াল গো খালা”।
আনোয়ারা খালা দরজা খুলতেই, চার শিশু যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো মায়ের বুকে।
নিজের দুই ভাগ্নে মানিক, রতন আর তাদের বন্ধু
শ্যামল, কিরণ।
ওরা মুক্তিযোদ্ধা, দেশকে স্বাধীন করতে লড়ছে,
নিজের জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ।
“খালা খাওন দাও, বড় খাটনি গেছে আইজ, এক্কেরে সামনা সামনি যুদ্ধ
পাঁচ হানাদারদেরকে শেষ কইরাই তবেই না ব্রিজটা মাইন দিয়া উড়াইছি আইজ।“



গোগ্রাসে খেতে থাকে বাংলার চার দামাল ছেলে।
খেতে খেতেই বলে, “খালা আমরার হাতিয়ার আর গ্রেনেড গুলান লুকাইয়া রাখো”।
হাতিয়ার খালা চালাতে জানেনা, তাই লুকিয়ে রাখার কাজটাই তার কাছে যুদ্ধ।
রাত জেগে পাহারা দেন খালা,
প্রচণ্ড স্নেহে বারে বারে দেখে যান, ঘুমন্ত সন্তানদের মুখ।

ভোর হওয়ার আগেই, বাড়ী থেকে বেরিয়ে পরে চার মুক্তি।
যাবার সময়ে বলে, “আগামী কয় দিন আর আমুনা খালা,
শুক্রবারে দশ জন আসুম আমরা, মাটিত মিশামু পাক সেনাদের ক্যাম্প
ঐ খানেই উড়াইয়া আসুম বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা, ইনশাল্লাহ”।



মোরগ ডাকার আগে আনোয়ারা খালা বিছানা ছাড়ে।
আজ দশ অতিথি আসবে, ঘর দোর পরিস্কার, রান্নাবান্না অনেক কাজ।
সব কাজ সারতে হবে পাড়া-পড়শিদের অগোচরে,
যদি কেও জানিয়ে দেয় শান্তিবাহিনী কিংবা পাক হানাদারদের।

দোকানি রহিম মোল্লা অবাক হয়ে জানতে চায়, “এক ডজন ডিম দিয়া কি করবা গো খালা?”
“ভাইগনারা আইবো কইছে, খিচুরি আর ডিম রান্ধুম”।
বিস্ময়ে দোকানি বলে, “হেরা মুক্তিযোদ্ধা না?”
প্রশ্ন খালার মুখটাকে রুদ্ধ করে দেয়।
আজানা আশংকায় প্রান কেঁপে ওঠে আনোয়ারা খালার।




রাতের গভীরে ভয়ানক গোলা-গুলির শব্দ,
কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠান থেকেই দেখা যায়, আগুনের লেলিহান শিখা।
গ্রামের মানুষ ভয়ে পালায়, বুঝি ক্যাম্প হারানোর ক্ষোভে, প্রতিহিংসায়,
শহর থেকে এখনি বুঝি ছুটে আসবে আরো অনেক পাক হানাদার।
প্রবল আক্রোশে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ছাড়খার করবে সমস্ত গ্রাম।

অতিথিরা আসলো, সবার ইস্পাতের শক্ত চোয়াল
মূখ তাদের মলিন, কিন্তু শরীরে, মুখে, চোখে প্রচণ্ড দৃঢ়তা।
“খালা পাক হানাদেরদের ক্যাম্প তো ধ্বংস করসি......
কিন্তু মানিক, কিরন আর দুই জনরে যে আনতে পারলামনা খালা?”।
খালার বুক ফেটে চৌচির হল নাম জানা আর না-জানা সন্তানদের মৃত্যুতে।
দুই চোখে অশ্রুর সাগর..., না এখন কান্নার সময় না,
বললেন, “খাও বাজানেরা, তোমরারে দেশ স্বাধীন করতেই হইবো............”



ক্লান্ত ছ জন মুক্তিযোদ্ধা নিরাপদ আশ্রয়ে ঘুমের জগতে,
খালা বলেছেন, তিনি রাত জেগে পাহারায় থাকবেন।

বিদ্যুৎ চমকে, গর্জে এলো তুমুল বৃষ্টি মুষলধারে,
আনোয়ারা খালা, ওদের হাতিয়ার লুকিয়ে, দরজার পাশে বসে আছেন ঠায়।
উঠোনে মনে হলো কোন শব্দ?
দোকানি রহিম মোল্লার চাপা গলায় উর্দু কিছু কথা,
স্পষ্ট হল, পাক হানাদারদের বুটের শব্দ, আর তার পরেই দরজায় লাথি।
খালা ঝাঁপিয়ে পড়ে, ধাক্কা দিয়ে মুক্তিদের ঘুম ভাঙ্গালেন।
“ বাজানেরা, পালাও, তাড়াতাড়ি...।ঐ যে ঐ জানালা ...”

পাক বাহিনী গুলি চালিয়ে ঝাঁঝরা করলো।
শুধু রতন, শ্যামল জানালা দিয়ে লাফিয়ে, পুকুরে ডুব সাঁতার দিয়ে পালিয়ে বাঁচল।
বাকীদের নিথর শরীরের উপরে আনোয়ারা খালা।
একজন মায়ের রক্তাক্ত শরীর হল বাংলার দামালদের বর্ম।

ঘন, কালো মেঘে ঢেকে ছিল বাংলার আকাশ,
এক চমক বিদ্যুৎ ছরিয়ে পড়লো
এক মাথা থেকে আরেক মাথায়, যেন
বাংলার সব মায়েদের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হল,
“বাছারা আমারা আছি তোমাদের রক্ষী হয়ে”।

সহযোগিতায়ঃ মারুনা হাসান
মার্চ, ২০১১
টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
http://www.lekhalekhi.net
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×