এত বড় শাপলা ফুল জীবনেও দেখেনি মোবারক। কি সুন্দর! মনে হচ্ছে মাত্র ফুটলো ফুলটা। তীব্র সূর্যের আলোতে কি যে সুন্দর লাগছে। পুঁটি মাছের গায়ের মতো চিক চিক করছে যেন। মনে হচ্ছে মোবারকদের বাড়ির পাশের দীঘি-নালা খাল থেকে মাত্র পুঁটিটা মারা হয়েছে।
মোবারক গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে শাপলার দিকে। ওর খুব ইচ্ছে করছে শাপলাটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে। না জানি গাওটা কিরকম নরম হইবো।
মোবারকের মনে পড়ে, যে বছর ও মাদ্রাসায় ভর্তি হলো। অবশ্য ভর্তি হলো বললে ভুল হবে, বাবা মো: আব্দুল কাসেম ওকে জোর করে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল। সেই বছর ওদের বাড়ির সামনে চিতলমারা বিলে শাপলা হয়েছিল প্রচুর। ছোট বোন মুনিয়াকে নিয়ে কত শাপলা তুলেছে সে। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে গোসলের নাম করে চিতলমারা বিলে যেত মুনিয়া ও মোবারক। মুঠো মুঠো শাপলা তুলে ভরিয়ে ফেলতো গামছা আর চেন নষ্ট হওয়া প্যান্টের পকেটগুলো। হাত ভরিয়ে দিত মুনিয়ার। মুনিয়াও কম না, পরনের জামাটা উল্টো করে টেনে নিয়ে খালইও এর মতো বানিয়ে ভরিয়ে ফেলতো শাপলায়। তখন মোবারক আনন্দময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র।
ইসস... মুনিয়াকে এনে যদি এই শাপলাটা দেখানো যেত। মোবারক নিশ্চিত, শাপলা তুইল্যা বাসায় নিয়ে যাওয়ার জেদ ধরতোই মুনিয়া। কতদিন এভাবে শুধু মুনিয়ার জেদের জন্য দূরের শাপলাটা মুনিয়ার খালঐয়ের মতো উল্টো করে ধরা জামাটায় পৌছে দিয়েছে মোবারক, তার হিসেব নেই।
অবশ্য আজ সকালে ঢাকা শহরে আসার পর থেকেই মুনিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে মোবারকের। ওকে যদি সঙ্গে করে আনা যেত, যদি হাত ধরে শহরটা দেখানো যেত কি খুশিই না হতো মুনিয়া। মোবারকের ধারণা সবচেয়ে বেশি খুশি হতো ফারামগেট না কইজানি বিরাট দুইটা মাছ আছে, সেইটা দেইখ্যা। কথা নাই বার্তা নাই রাস্তার মইধ্যে মাছ ফাল দিয়া আছে। মোবারক নিশ্চিত মুনিয়া এই মাছের পেটি দিয়া ভাত না খায়া বাড়িত যাইতো না।
আবার দেখ কারবার। আর একটু আগায়া আসলেও ঘোড়ার গাড়ি। কি সুন্দর দুইজন সাহেব বিবি বইসা আছে। অথচ গাড়িটার চলার নাম নাই। দূর থেইক্যা অবশ্য দেইখ্যা মনে হয় এই বুঝি এহনই গাড়িটা দৌড় দিব। কিন্তু কিসের কি! কাছে আইসা হেই হেই করলেও নড়ার নাম নাই।
মোবারক জীবনের প্রথম ঢাকায় এসেছে। বাবুনগরী কওমী মাদ্রাসার বড় হুজুরের কড়া নির্দেশ সবাইকে ঢাকায় যেতেই হবে। বলগার না ভালগার কারা জানি মহান আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে আজে বাজে কথা লিখছে। ধর্ম-কর্ম মানে না। নাউজুবিল্লাহ! এদের শায়েস্তার দাবীতে সমাবেশ হবে। সেইখানে যেতেই হবে। মোবারক অবশ্য সমাবেশ-টমাবেশ কম বোঝে। ও বিশ্বাস করে ওই সব শয়তানের বিচার আল্লাহ নিজে করবেন। শুধু বড় হুজুরের ভয়ে খানিক পায়ে হেঁটে, খানিক গাড়িতে, খানিক নৌকায় আবার পায়ে হেঁটে সে এসেছে এ মহাসমাবেশে। রাস্তায় মুড়ি আর পানি খেয়েছে। তারপর এই মানুষের মহা সমুদ্রের একজন হয়েছে মোবারক। নিজেকে বিশাল সমুদ্রে ভেসে চলা নৌকার মতো মনে হচ্ছে তার। মোবারক কখনও সরাসরি সমুদ্র দেখেনি। পাশের বাড়ির কেরামত মোল্লার বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়ে একবার সমুদ্র দেখছিল।
মোবারক এখন দলছুট। এতবড় শাপলা দেখে দলছুট না হয়ে উপায় আছে। মুনিয়াকে নিয়ে কতদিন শাপলা তুলতে যায় না মোবারক। এই যে এখন এত বড় বিশাল শাপলা ঘেঁসে দাড়িয়ে ওর মনে পড়ছে মুনিয়ার কথা। ইসস... মুনিয়া সঙ্গে থাকলে কাউকে দিয়ে এই শাপলার সামনে দাড়িয়ে একটা ছবি তুলে নিত। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই মোবারকের কানে আসে মাইকের শব্দ।
‘নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করতে হবে। তারা একসঙ্গে চলতে পারবে না।’
'ঢাকা শহরের মুর্তির নামে যেসব ভাস্কর্য রয়েছে সব ভাঙতে হবে।’
মোবারক আরও কিছু দাবির কথা শোনে। অন্যগুলো ঠিক বোঝে না সে। তবে এই কথা গুলো বোঝে। মোবারক শেষ বারের মতো শাপলাটার দিকে তাকায়। ওর মুনিয়ার কথা মনে পড়ে। সেই ফাল দেয়া মাছ আর ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকা অথচ ভাব ধরে থাকা এখনই মনে হয় দৌড় দেবে এমন ঘোড়ার গাড়িটা দেখতে ইচ্ছে করে।
(এই গল্পের চরিত্রের সঙ্গে বাস্তব ও অবাস্তব কোন ঘটনা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং স্থানের কোন মিল নাই। যারা মিল খুঁজতে যাবেন তারা নিজ দায়িত্বে খুজঁবেন। লেখকের কোন দায়বন্ধতা নেই।)
আলোচিত ব্লগ
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন