somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাল্যবিবাহ

০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার কত?
ভাবছেন হঠাৎ এই প্রশ্ন? আসলে আমরা জীবন ব্যস্ততার চরকি ঘুরতে ঘুরতে বাস্তবের অনেক কিছুর দিকেই চোখ ফেরানোর সময় পাইনা।আর সময়ের আবর্তনের সাথে সাথে আমরাও আবর্তিত হতে থাকি সব অদ্ভুত কুৎসিত বাস্তব গুলোর ভেতর দিয়ে।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলছি।আমাদেরই গ্রামে গিয়েছিলাম জনৈক আত্নীয়ের বিয়েতে।ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলা সদরের কয়েক কিলো ভেতরে আমাদের গ্রাম।বিয়ের দিন সাতসকালে ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে।প্ল্যান ছিল দুইদিনব্যপী বিয়ের সব অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফেরার।
ফুপুর বাসায় গিয়ে জানা গেল আমার ফুপাত ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে!বয়স হবে ১৪-১৫,পড়ছে ক্লাস এইটে।অবশ্য বিয়ে ঠিক হয় এত অল্প সময়ের ভেতরে যে আমাদের পরিবারের কারোরই তেমন কিছু জানার সুযোগ ঘটেনি।সুতরাং,আমরা বলতে গেলে অন্ধকারের মদ্ধে ছিলাম।
গ্রামে এই ধরনের ঘটনা ঘটে অহরহ,সুতরাং তাজ্জব হওয়ার মত কিছু নয়।কিন্তু আমার কাছে খুব খটকা লাগলো ব্যাপারটা।মনে মনে খুব পীড়িত হচ্ছিলাম।এই রকম একটা ঘটনার নীরব সাক্ষী হব আমি?মন থেকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না।যাই হোক,যথাসময়ে বরযাত্রী গেলাম আমরা।একই গ্রামে অনতিদূরে মেয়েদের বাড়ি,পায়ে হেঁটেই গেল সবাই।শুধু বরের জন্য ছিল প্রাইভেটকারের ব্যবস্থা!যথাসময়ে ভোজনপর্ব শুরু হলো।এরই মধ্যে আমি বউকে দেখে এসেছি একবার।খুব সাজানো গোছানো একটা কচি মেয়ের অসহায়-ক্লান্ত মায়াবি মুখ ভেসে উঠেছিল আমার চোখের সামনে।মেয়েটা ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল নিচের দিকে।ওর বোবা চোখের চাহনিতে যেনো মিশে ছিলো ক্লান্তি আর বিষণ্নতার অবসাদ।



এতটুকু কচি বয়সে ঘটনার মর্মার্থ উপলব্ধি করবার মত মানসিক পরিপক্বতা নেই তার,আর তাইত খুব স্বাভাবিক!তবু সে জানে,বিয়ের পর মেয়েদের বাপ-মা ছেড়ে থাকতে হয় শ্বশুরবাড়িতে।মাকে ছেড়ে যাবার নিদারুণ মর্মবেদনায় তার শিশুমন ভারাক্রান্ত।আর তাই গত দুইদিন শতচেষ্টাতেও মুখে একফোঁটা দানাপানি তোলেনি সে।
বিয়ের কলমা পরার আগে কাবিনে স্বাক্ষর দেয়ার সময় নির্দ্বিধায় পুরোনাম লিখে দিলো মেয়েটা।যেন দ্বিতীয়বার চিন্তাকরার মত সময় নেই তার।তাই বিয়ের কাজিও বলেই ফেললেন,মেয়েটা বোঝেইনি যে কিসে স্বাক্ষর দিতে যাচ্ছে!আর সেই বিয়ের নীরব সাক্ষী আমরা,জানতাম প্রতিবাদ করে বিয়ে ঠেকাতে পারবনা।তাই নিজের অসহায়ত্বকে মেনে নিয়ে হয়ে রইলাম বোবা সাক্ষী!
আমাদের মত শিক্ষিত(!)লোকেরাই নিজেদের শিক্ষার যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে পারিনা ক্ষেত্রবিশেষে।তার কারণ,অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষা আমাদের মাঝে গতানুগতিক শিক্ষিত চিন্তাধারার অস্থিমজ্জা গড়ে তোলে,কিন্তু মর্মমূলে গিয়ে অনুভুতিপ্রবণ করে তুলতে ব্যর্থ হয়।পাশ করে ডিগ্রি অর্জনের শিক্ষাটুকু নিতে পেরেই আমরা যারপরনাই খুশি,তাই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বেআইনি আর অনৈতিক ঘটনাগুলো নির্বিকারচিত্তে মেনে নেই,অথচ সাহসী প্রতিবাদ করতে হই ব্যর্থ।
পৃথিবীব্যপি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো ব্যাপক হারে প্রচলিত আছে বাল্যবিবাহ।বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে বিবাহিত কন্যাশিশুর সংখ্যা ৬০ মিলিয়নেরও বেশি(ICRW)।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইসব দেশের মোট সংখ্যার অর্ধেক পরিমাণ মেয়েদের বিয়ে হয় শিশুবয়সে(১৮ এর নিচে)।আমাদের দেশে এই সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ। UN State of World’s Children এর মতে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৬৪%।যার মধ্যে ৫৮% ঘটে শহুরে এলাকায়,আর ৬৯% গ্রাম্য এলাকায়।
বাংলাদেশের অশিক্ষিত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি।এর পেছনের মূল কারণ হয়তো তাদের অসচেতনতা এবং বাল্যবিবাহের ক্ষতিকরদিকগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতা।তাদের এই সীমিত জ্ঞানের দায়ভার শুধুই তাদের একার নয়।জীবনের মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণতার প্রতি অজ্ঞতা ও অসচেতনতা তৈরি হওয়ার পেছনে কাজ করছে তাদের অশিক্ষা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা।আর অশিক্ষিত এই জনগোষ্ঠীকে অজ্ঞতার হাত থেকে মুক্তি দিয়ে জীবন সম্পর্কে সচেতন করার দ্বায়িত্ব আমাদের মত শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর উপরেও বর্তায়।তাই লেজগুটিয়ে বসে না থেকে প্রতিবাদের দৃঢ় চেতনা আর সংশোধণের প্রয়াস অর্জন করা একান্ত কাম্য।
ওইদিন ফুফুর বাড়িতে মেয়েকে উঠিয়ে দেয়ার পর আমার আর কিছুই বলবার ছিলনা।শুধু রাতে বাসায় ফেরার আগে ফুফুকে বলেছিলাম,”মেয়েটাকে একটু দেখে রাইখেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১১ রাত ২:৫৩
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×