somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাহার জন্য প্রযোজ্য..........

০৫ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আশিক, সজল ও তুষার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়–য়া ছাত্র। ওরা তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

আশিক রাজধানীতে প্রচলিত ও তথাকথিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদক সেবন ও প্রেমঘটিত অবক্ষয়ের শিকার। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সমূহ, নামকরা প্রাইভেট স্কুলসমূহ এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া কোটিপতি বড়লোকের ছেলে-মেয়েরা যেন সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাই ঐসব প্রতিষ্ঠানের কৌতুহলী কিশোর-কিশোরী প্রেমের নামে নানা প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত। তারা পরস্পর নিয়ত শেয়ার করছে ভাল-মন্দ, জৈবিক-মানষিক প্রেষণা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয় বর্তমানে হাইস্কুলের ৭ম-১০ম শ্রেণীতে পড়–য়া কোমলমতি ছেলেমেয়েদের মাঝেও চলছে প্রণয় নামক অবৈধ দেহিক সম্পর্ক। প্রেম মানে পরিচয়, সুন্দর সম্পর্ক অতঃপর পরিণয় বলে জানি কিন্তু বর্তমানে প্রেম মানেই যেন আদিম অবৈধ খেলাখেলা। এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা আশিক মন্দের ভাল নয় বরং বিশ্ব প্রেমিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে যার প্রেমিকার সংখ্যা অগণিত। সে নিয়মিত রুটিন মাফিক মোবাইল ফোনে মেয়েদের পটিয়ে অবাধে চুটিয়ে প্রেম করে এবং প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে যোগ-বিয়োগের অংক কষে।

তুষার পড়াশুনায় মনযোগী, মিতব্যয়ী (বন্ধু মহলে কৃপণ বলে খ্যাত), চরিত্রবান এবং মেয়েদের প্রতি উদাসীন প্রকৃতির ছেলে। তুষার বন্ধু মহলে কোন কাজেই টাকা খরচ করতে চায়না।

সজল অত্যন্ত নিরীহ, সৎ ও সহজ-সরল প্রকৃতির ছেলে। আশিকের বন্ধু হিসেবে সে তার সকল কর্মযজ্ঞের নিরব স্বাক্ষী।

কাহিনীর স্থিরচিত্রে আশিকের প্রেম সাগরের মোহনায় প্রথমা নামে একটি মেয়ের সাথে জীবনে প্রথমবারের মত প্রেম হয়। তারপর তার সাথে কিছুদিন সম্পর্ক রেখে তাকে পটাতে না পেরে তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আশিক অন্যান্য বান্ধবী প্রভা, নীলুদের সাথে নিয়মিত প্রেম খেলা খেলতে থাকে। প্রথমা আশিকের চরিত্র সম্পর্কে অবগত হয়ে রাগে-ক্ষোভে ও ঘৃনায় তাকে অভিশাপ দেয়। আশিককে বলে যায়- তুমি বুঝবে সেদিন কোথায় তোমার সুখ ছিল একদিন- সেদিন আর পাবেনা ফিরে একটিবার।

ইতোমধ্যে সুচনা নামে একটি মেয়ের সাথে আশিকের ফেইসবুকে পরিচয় হয়। তারপর ইন্টারনেটে চ্যাটিং, মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলা, দেখা করা চলতে থাকে। এদিকে সুচনার অভিভাবক ঘটনাটি জানতে পেরে তারা অবিবাহিত অবস্থায় তাদের এ সম্পর্ক দীর্ঘায়িত করার ব্যপারে আপত্তি করে। একদিন তাদের দুজনকে তারা প্রশ্নের সম্মুখীন করে, আশিককে বলে সুচনাকে বিবাহ করবার জন্য। কিন্তু আশিক প্রেমে বিশ্বাসী বিবাহে নয়- তাই সে একটি নির্দিষ্ট সময় চেয়ে সেদিন উক্ত প্রস্তাবটিকে এড়িয়ে যায়। এভাবে সুচনা-আশিক জুটির পতন হয়। আশিক অন্যান্য আরও কতিপয় নতুন নতুন বান্ধবীদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে।

সজল ও তুষার আশিকের সকল পরিস্থিতি উপলব্দি ও পর্যবেক্ষণ করে। তবে তারা প্রথমাকে কোন দিন দেখে নাই।

এহেন পরিস্থিতিতে একদিন গভীর রাতে আশিকের মোবাইলে একটি ফোন আসে। ঘুম ঘুম ভাব ভঙ্গিমায় অন্তরঙ্গ প্রেমময় সুরে একটি মেয়ে কথা বলে। আশিক মেয়েটির এহেন মায়াময় আবেগী কন্ঠে পুলকিত হয় এবং যেন জীবনে এই প্রথমবারের মত ঐ মেয়েটির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সত্যিকারের মায়ার জালে জড়িয়ে ফেলে নিজেকে। যেন এই প্রেম প্রেম খেলা বন্ধ করে মেয়েটিকে সে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবে সেই আশায় বুক বাঁধে। দীর্ঘক্ষণ কথা হয়।

আশিক পরদিন সকালে উক্ত ঘটনাটি সজল ও তুষারের সাথে শেয়ার করে। জীবনে সবকিছুর বিনিময়ে উক্ত মেয়েটিকে পাবার আশা ব্যক্ত করে।

সজল ও তুষার তার অতীত জীবনের প্রেমিকা প্রথমা, সুচনা, প্রভা, নীলু সহ একে একে সকলের নাম ধরে তাদেরকে ফাকি দেবার কারণ জানতে চায়। আশিক প্রেমিকা আর স্ত্রীর মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরে বলে- প্রেমিকা আর স্ত্রী এক কথা নয়- সবার সাথে প্রেম করা যায় কিন্তু যাকে ইচ্ছা বিবাহ করা যায় না। আমি চাই যে মেয়েটি কাল রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গালো তাকে- ওর নাম বিন্দু। আমাদের প্রেমবৃত্তের মাঝখানে একটি বিন্দু আর আমি তার পরিধি- দুইয়ে মিলে হব একটি আলোকিত বৃত্ত।

এভাবে দিনের পর দিন রাতের পর রাত আশিক-বিন্দুর ফোনালাপ চলতে থাকে। তাদের বন্ধুত্ব অত্যন্ত নিবিড় হতে থাকে। আজ রাতে বিন্দুর সাথে আবার আশিকের কথা হয়। উভয়ে পরস্পরকে দেখার ব্যাকুলতা প্রকাশ করে সিদ্ধান্ত হয়- কাল সকাল ১১.৩০ মি. নন্দন পার্কে তাদের দেখা হবে। আশিকের হাতে থাকবে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা আর বিন্দুর খোপায় থাকবে বেলী ফুলের মালা।

পরদিন সকালবেলা ১১.০০ ঘটিকায় আশিক সংগত কারণে তার বন্ধু সজল ও তুষারকে সাথে নিয়ে নন্দন পার্কের গেইটের সামনে উপস্থিত হয়। আশিক তুষারকে ৩টি টিকেট (টিকেট ফর অল ইভেন্ট) নিতে বলে। তুষার তার স্বভাব সূলভ আপত্তি জানায়। বলে- তোমার বিয়ার পাত্রী দেখনের লাইগা আইছি- সব খরচ তোমার। এহেন ব্যবহারে আশিক অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তুষারের নিকট একটি শপিং ব্যাগে গচ্ছিত রজনীগন্ধা গুচ্ছ না নিয়েই ২টি টিকেট কেটে সজলকে নিয়ে দ্রুত ভিতরে চলে যায়। তুষার অবাক বিস্ময়ে বোকার মত গেইটের বাইরে দাড়িয়ে থাকে। রজনীগন্ধা গুচ্ছ বের করে দেখতে থাকে। এমন সময় পিছন দিকে থেকে বিন্দু তার নিজের গাড়ী থেকে নেমে তুষারের নিকট এসে তুষারের পরিচয় জানতে চায়- তুষার আশিকের উপর ভিষণ ক্রোধে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে নিজেকে আশিক বলে পরিচয় দেয়। বিন্দু আশিককে খুব করে চেনে। কারণ সেতো বিন্দু নয় সে সেই প্রথমা আজ এসেছে বিন্দু নামে আশিককে তার পুরনো দেনাপাওনা ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিতে। বিন্দু তুষারের প্রকৃত পরিচয় জানতে চায় এবং আশিকের অবস্থান কোথায় প্রশ্ন করে। তুষার অকপটে সব বলে দেয়। বিন্দু ও তুষারের কিছু কথার মাঝে হঠাৎ কেমন করে যেন ওদের চার চোখের মিলন হয়, প্রেম যেন হঠাৎ বৃষ্টি, প্রকৃতির অনুপম কৃষ্টি। ওরা একে অন্যের প্রতি আসক্ত হয়। বিন্দু এটাকে আরও চরম প্রতিশোধ হিসেবে নিতে চায়। বিন্দু তাই তুষারকে সরাসরি প্রেমের অফার করে। তুষার পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই বিশ্বাস করে তাই সে সরাসরি বিন্দুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। দুজনই হ্যাঁ বলে গাড়ীতে উঠে।

আশিক ও সজল ভিতর থেকে বের হয়ে পিছন দিক থেকে দেখে- তুষার ও বিন্দু গাড়ীতে পাশাপাশি বসে হাত ধরে চলে যাচ্ছে। আশিক সজল কে মোবাইল ফোনে এ নাটকের অর্থ জানতে চায়- তুষার তাকে বলে রাতে বাসায় এসে তোর ভাবী বিন্দুকে দেখে যাবি, ওকে ? এবার আশিক বিন্দু কে ফোন করে- বিন্দুর কন্ঠে গান- যেতে যেতে পথে হলো দেড়ি....................... তাইতো আমি পারিনি। বিন্দু আশিককে বলে আমার কি দোষ বল ? তোমার চাইতে তুষারকে আমার জন্য পারফেক্ট মনে হলো তাই- দেখো জীবনে হয়তবা কাউকে না কাউকে তুমি এভাবে ঠকিয়েছো- তাই আজ তোমার পালা- ভোগে সুখ নাই ডার্লিং ত্যাগেই সব সুখ শান্তি।

তুষার ও প্রথমা আজই কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে। মোবাইল ফোনে সকল বন্ধু-বান্ধবদের দাওয়াত করে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা জানাবার জন্য। সেখানে নতুন পুরাতন সকল বন্ধু বান্ধবদের মিলন মেলা জমে। আশিক তুষারকে বেঈমান বলে আখ্যায়িত করে। তুষার আশিককে বলে- তুমিতো জীবনে কত প্রেম করলা- ধরলা আর ছাড়লা- অর্জন করতে পারলা না বন্ধু- আমিতো এই মাত্র একটা- এই শুরু এই শেষ- দুঃখ করনা বন্ধু। সরি! আশিক এবার ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নতুন বউয়ের মুখটা দেখতে চায়- তাকে তিরস্কার করে- ছলনাময়ী, প্রতারক বলে গালমন্দ করে- বিশ্বাসঘাতক বলে ধিক্কার দেয়। তাকে কষ্ট দিয়ে অপাত্রে নিজেকে সপিয়ে দেবার ভৎসনা করে। প্রথমা দাড়িয়ে ঘোমটা খুলে আশিকের সামনে দাঁড়ায়। আশিক প্রথমাকে চিনতে পেরে তার অতীত জীবনের ভুল বুঝতে পারে।

মুহুর্তের মধ্যে ফ্লাশব্যাকে অতীতের টুকরা টুকরা স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে। আশিক প্রথমার দিকে দ্বিতীয়বার তাকাবার সাহস করে না আর নিজেকে খুবই নীচ ও জঘন্য ভেবে তার সকল ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য উম্মাদের মত দৌঁড়ে পালিয়ে যায় বন্ধুদের ঐ আসর থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:৫৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×