somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপর্যস্ত দল, দিশেহারা সমর্থক

০৫ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আরেকটি রেকর্ড সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা এখন প্রবল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যেভাবে খেললো, সেই ‘ফর্ম‘ যদি বজায় রাখা হয়, তাহলে বাংলাদেশই বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম স্বাগতিক দেশ যে পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হবে।

কিন্তু এই রেকর্ডের দিকে ধেয়ে যাবার পথে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আরেকটি রেকর্ড প্রায় দখল করে ফেলেছিলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাত্র ১৮.৫ ওভার খেলে ৫৮রানে সবাই আউট হয়ে গিয়ে বাংলাদেশ বলতে গেলে কানের কাছ দিয়ে রেকর্ডটা মিস করলো।

এই ম্যাচ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সবচেয়ে কম স্কোরের তালিকায় বাংলাদেশকে চতুর্থ স্থানে নিয়ে এসেছে।

প্রথমে আছে কানাডা ৩৬ রান নিয়ে, দ্বিতীয়তে নামিবিয়া ৪৫ রান, তৃতীয়তে আবার কানাডা ৪৫ রান।

কিন্তু এখানেও একটা কিন্তু আছে।

পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে আছে স্কটল্যান্ড আর কেনিয়া, যথাক্রমে ৬৮ আর ৬৯ রান নিয়ে।

তার মানে, বাংলাদেশের উপরে আর দুই স্থান নিচের দলগুলোর কেউই টেস্ট মর্যাদা সম্পন্ন নয়।


বাংলাদেশের আরেকটি উইকেটের পতন।

অর্থাৎ, এখানে বাংলাদেশ একটা রেকর্ড পেয়েই গেলো – বিশ্বকাপে কোন টেস্ট খেলিয়ে দেশের সবচেয়ে কম স্কোর !

এই রেকর্ড নিয়ে ঢাকায় যে বিজয় মিছিল বের হবে না তা বলাই বাহুল্য।

শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে মিস-ম্যাচের পর ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ক্রিকেট সমর্থকরা রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়।

আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে সমর্থকরা আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলো, খেলোয়াড়দের ‘হিরো‘ বানিয়েছিলো।

আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে রেকর্ড পরাজয়ের পর ঐ একই সমর্থকরা ঐ একই খেলোয়াড়দের নিমেষের মধ্যে ‘ভিলেন‘ বানিয়ে দিলো।

বিপর্যয় কিভাবে হলো, কেন হলো, বলা মুশকিল।

কারণ, বিপর্যয় যেমন মাঠে হয়েছে, তেমনি আরেকটি বিপর্যয় হলো মাঠের বাইরে।

যারা আবেগ দিয়ে খেলা বিশ্লেষণ করে না, তাদেরকে মাঠের ভেতরের বিপর্যয়টা মোটেই অবাক করেনি।

হয়তো মাত্রাটা একটু বেশি ছিলো৻

কিন্তু মূল কথা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এখনো প্রতিটি খেলায় সমান ভাবে নিজেদের এ্যাপলাই করতে অভ্যস্ত হয়নি৻

ধৈর্য ধরে এক রান-দুই রান করে ইনিংস তৈরি করতে যে মেজাজ-মানসিকতার প্রয়োজন সেটা সব ব্যাটসম্যানের মধ্যে এখনো দেখা যায়না৻


স্টেডিয়ামে হতাশ দর্শক

সবার মধ্যে কিছুটা ‘বাহাদুরী‘ ভাব লক্ষ্য করা যায়৻

মনে হয়, দু‘একটা চার-ছয় মারতে পারলেই তারা দর্শকদের মন জয় করে নিচ্ছেন, রাতারাতি ‘হিরো‘ হয়ে যাচ্ছেন৻

আর যখন সেই চার-ছয়ের সুযোগ থাকে না, বা বোলাররা লাইন-লেংথ ঠিক রেখে বল করেন, তখন ব্যাটিংয়ে নামে ধ্বস৻

কারণ, কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য আর পরিশ্রমের মাধ্যমে ইনিংস তৈরির করার পারদর্শিতা দু‘একজন ছাড়া আর কারো আছে বলে মনে হয়না৻

আর থাকলেও ঢাকার দর্শকদের উচ্ছ্বাস আর চাপের মুখে সেই ইনিংস তৈরি করা সম্ভবও না৻

কাজেই, শুক্রবার ঢাকার শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে যে ব্যাটিং বিপর্যয় হলো, সেটা ছিলো সময়ের ব্যাপার মাত্র৻

তবে মানসিকতা, মেজাজ, নৈপুণ্য – এই সবই অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব৻

কিন্তু, সমর্থকদের মধ্যে যে অস্থিরতা দেখা গেল এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিনটি খেলার পর, সেটার চ্যালেঞ্জ আরো বেশি৻

দর্শকরা নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী খেলোয়াড়দের এই ভারসাম্যহীনতার জন্য৻

দলে কোন ধৈর্যশীল ব্যাটসম্যান দর্শকদের মন জয় করতে পারে না৻

বাংলাদেশ দলে সুনীল গাভাস্কার বা জেফরি বয়কটের মতো ব্যাটসম্যান তৈরি হবার সম্ভাবনা কম৻


ঢাকায় বিক্ষুব্দ সমর্থক

কারণ, সবাই শহিদ আফ্রিদীর মত চার-ছয়ের ব্যাটিং দেখতে চান৻

কিন্তু প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের অনেক সময় ধরে ক্রিজে থাকতে হয়, অনেক বল রান না করেই ছেড়ে দিতে হয়, এক-দুই করে রান সংগ্রহ করতে হয়৻

দর্শকদের সেরকম পেশাদারি ব্যাটিং উপভোগ করার মত মানসিকতা এখন আর নেই৻

বাংলাদেশের ক্রিকেট দলে মনে হয় ভারসাম্যের অভাব, ধৈর্যর অভাব, পরিশ্রম করে ফল আনার প্রয়াসের অভাব৻

ঠিক তেমনি, সমর্থকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় আবেগের ভারসাম্যের অভাব এবং একই সাথে বাস্তবসম্মত মানসিকতার অভাব।

খেলায় জিতলে – সেটা যত ছোট দলের বিরুদ্ধেই হোক - খেলোয়াড়দের মাথায় তোলা হয়।

আবার পরাজিত হলে প্রতিক্রিয়া খেলোয়াড়দের কুশপুত্তলিকা দাহ থেকে শুরু করে সহিংসতার হুমকি পর্যন্ত গড়ায়।

হয়তো দশ বছর আগে হলেও এই বিপর্যয়ে এরকম ভয়ানক প্রতিক্রিয়া হতো না ।

কিন্তু দলের যত উন্নতি হয়েছে, সমর্থকদের প্রত্যাশা তত বেড়েছে।

বাংলাদেশের সমর্থকরা স্বপ্ন দেখে ভারত আর পাকিস্তানের সাথে একই কাতারে ক্রিকেট খেলতে।

কিন্তু ভারত বা পাকিস্তানের পর্যায়ে যেতে হলে যে সময় প্রয়োজন, সে সময় তারা দলকে দিতে রাজি নন।

সমর্থক আর প্লেয়ার, দু‘পক্ষই হয়তো ভুলে গেছেন যে - খেলাটা ৫০ ওভারের, ৫০ রানের নয়।



সূত্রঃ বিবিসি বাংলা থেকে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×