somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেগুণ বাণিজ্য

০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে দুঃসংবাদ আর ইস্যুর শেষ নাই। এরই মধ্যে গোপনে বা নিরবে আরেক ঘাতক এই দেশের কৃষিতে আঘাত করার জন্য তৈরি হচ্ছে। জিএমও শস্য বিটি বেগুন আসছে! সবারই এই বিষয়ে সজাগ থাকা প্রয়োজন। কৃষি না বাঁচলে কিন্তু এই দেশটা বাঁচানো কঠিন। বিটি বেগুন নিয়ে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছে বণিক বার্তায়।

ব্লগের পাঠকদের জন্যও দিয়ে দিলাম:


প্রতি বছর রোজা এলে বেগুন আলোচনায় আসে। বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়াই এর আলোচনায় উঠে আসার মূল কারণ। সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরে প্রায় ৩ দশমিক ৫ লাখ টন বেগুন উত্পাদন হলেও এই গুণবতী সবজিটি সাধারণত নীরবেই মানুষকে পুষ্টি দেয়ার কাজটি করে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এই নিরীহ কিন্তু ব্যাপক উপকারী সবজিটি নিয়ে নতুন ধরনের এক বাণিজ্য তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিটি বেগুন নামের এক ধরনের জাত বাজারজাতকরণের প্রস্তুতির খবরে সৃষ্টি হচ্ছে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। কেউ কেউ অবশ্য উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) সরকারের কাছে আগামী আগস্ট থেকে এই বিটি বেগুন বাজারজাতের জন্য আবেদন করেছে। বলা হচ্ছে, দেশে প্রচলিত বেগুন চাষ পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। একটি শস্য মৌসুমে একজন বেগুনচাষীকে প্রায় ৫০ বার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়, যেখানে অনুমোদিত মাত্রা মাত্র ২৫। ফলে বেগুন বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে, পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে আমাদেরকে মুক্ত করবে নতুন উদ্ভাবিত বিটি বেগুন, অন্তত এর সমর্থকরা এ কথাগুলোই বলছেন। বলা হচ্ছে, এই বেগুনের জাতটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, এতে পোকা আক্রমণ করতে পারবে না। ফলে কীটনাশক কম লাগবে। আর এতে উত্পাদন খরচ কমবে, পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি কম হবে।
অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, এটি আসলে কয়েকটি কোম্পানির বাংলাদেশের বেগুনের বাজার দখল করার পাঁয়তারা। এ বেগুনের ফলে কীটনাশকের ব্যবহার তো কমবেই না বরং বাড়বে। এটি পরিবেশের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করবে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, এর মাধ্যমে আমাদের দেশের বহুল প্রচলিত একটি সবজি পুরোপুরি ভিনদেশী একাট কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং আমাদের কৃষক হয়ে পড়বেন তাদের কাছে জিম্মি।
বিটি বেগুন কী? কী তার পরিচয়?
জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন এ বেগুনটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। সাধারণ বেগুনের মধ্যে ইঃ বা ইধপরষষঁং ঃযঁত্রহমরবহংরং নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করানো হয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে আছে পত্ু১অপ নামের জিন। এ জিনটিই বেগুনের মধ্যে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য তৈরি করে, যাতে এতে পোকামাকড় আক্রমণ করতে না পারে। পত্ু১অপ এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করে, যা বেশকিছু পোকামাকড়ের জন্য বিষাক্ত। এটি বেগুনের অন্যতম শত্রু লেদা পোকার জন্য ক্ষতিকর। এই বিষ লেদা পোকা খেলে সেটি একপর্যায়ে মারা যায়। বিটি বেগুন উদ্ভাবন করে ভারতের বৃহত্তম বীজ কোম্পানি মাহিকো, আর সঙ্গে আছে মনসান্তো। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই পরিচালিত হয়েছে এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি সাপোর্ট প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্পের আওতায়, যার প্রধান অর্থসহায়তাকারী হচ্ছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডি। এর সঙ্গে আবার কৃষিবিষয়ক বহুজাতিক কোম্পানি মনসান্তোর রয়েছে নানাবিধ সম্পর্ক।
অন্য কোনো উপায় কি আছে?
বিটি বেগুনের প্রথম ও প্রধান দাবি হচ্ছে, এটি বেগুন চাষে কীটনাশকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেবে। আসলেই কমাবে কিনা, সে বিষয়ে আলোচনার আগে অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মীমাংসার দিকে যাওয়া যাক। বেগুন চাষে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর জন্য বিটি বেগুনই কি একমাত্র উপায়? নাকি এর চেয়ে নিরাপদ কোনো উপায় আছে? বর্তমানে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব অনেক কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, যার সাফল্য নিয়ে প্রায়ই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এই পরিবেশবান্ধব কীটনাশক নিয়ে কাজ করে। তারা গবেষণা করে দেখিয়েছে যে, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় একজন কৃষক তার ৪০ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষের জন্য প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার করতেন। সেই কৃষক সেক্স ফেরোমন নামের একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র ১ হাজার ৪০০ টাকা খরচ করে বেগুন চাষ করছেন। বছরে তার মুনাফা হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এই সেক্স ফেরোমন পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। কোস্টের টেকসই কৃষি উন্নয়নবিষয়ক প্রকল্প সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান জানান, পরিবেশবান্ধব এ রকম পদ্ধতি ব্যবহার করছেন ভোলারই প্রায় ৩ হাজার সবজিচাষী। দেশজুড়ে এখন এ রকম অনেক উদাহরণই যে পাওয়া যাবে, সেটা নিশ্চিত। সুতরাং কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর জন্য বিতর্কিত কোনো নতুন জাতের প্রচলন করার আগে এ পদ্ধতিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
নজর এবার বাংলাদেশে!
২০০৫ সালে উদ্ভাবন করলেও ভারতীয় বীজ কোম্পানি মাহিকো এখন পর্যন্ত তার নিজের দেশে বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন পায়নি। ভারতে এই বেগুনের বীজ বাজারজাতকরণের চেষ্টা চালানো হলে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সরকার বাধ্য হয়ে দেশব্যাপী জাতীয় পরামর্শ সভার আয়োজন করে। হাজার হাজার কৃষক, বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদসহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার সে দেশে এই বেগুনের বাজারজাতকরণ বন্ধ করে দেয়; নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এখনো। এতই যদি গুণাগুণ সম্পন্ন হয় এই বিটি বেগুন, তাহলে মাহিকো কেন তার দেশের মানুষ আর সরকারকে এর সম্পর্কে বোঝাতে পারল না? সেটা একটা বড় প্রশ্নই বটে! ভারতের পর ফিলিপাইনেও এই বেগুন গণপ্রতিরোধের মুখে পড়ে। অনেক মনে করেন, ভারতে বিটি বেগুনের বাজার তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েই মাহিকো এবার বাংলাদেশকে তার মূল ঘাঁটি বানাতে চায়। এক্ষেত্রে মাহিকো যে বাংলাদেশের কৃষির একজন দরদি বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হবে, সেটা ভাবা বোধহয় ঠিক হবে না।
তথ্য গোপন করেছে মাহিকো!
বিজ্ঞানের বাইরে গিয়েও খুব সাধারণ একটা প্রশ্ন করা যায় বিটি বেগুনকে নিয়ে। যে বেগুন খেলে পোকা মারা যায়, সে বেগুন মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ? ভয়াবহ বিষয় হলো, খোদ মাহিকোর গবেষণায়ই দেখা গেছে, বিটি বেগুন লিভার ক্ষয়সাধন করে এবং এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমাতে পারে। দিল্লির ইনডিয়া টুডে পত্রিকায় ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাহিকো ইঁদুরের ওপর বিটি বেগুনের প্রভাব জানার জন্য ৯০ দিন ধরে একটি পরীক্ষা করে। সেখানে দেখা যায়, এ বেগুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং যকৃতের ক্ষয় সাধন করে। পত্রিকাটি দাবি করে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক অনুমোদন কমিটির (ঊেঅঈ) কাছে কোম্পানিটি যে প্রতিবেদন জমা দেয়, সেখানে তারা এ তথ্যটি গোপন করে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিউজিল্যান্ডের একজন রোগতত্ত্ববিদ লুই গালাঘার মাহিকোর গবেষণা প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখেন, বিটি বেগুন ইঁদুরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি সাধন করছে, জরায়ুর ৫০ শতাংশ ওজন হ্রাস করছে, বিলিরুবিনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা ৩০-৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি ইঁদুরের প্রজনন স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে।
জিএমওর বিপদ
জিন পরিবর্তন করে যেসব পণ্য বা শস্য তৈরি করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম বা জিএমও। বিটি বেগুন একটি জিএমও শস্য। বিশ্বব্যাপী জিএমও নিয়ে চালু আছে নানা আশঙ্কা, পাওয়া যাচ্ছে বেশকিছু নেতিবাচক উদাহরণও। জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত শস্য চাষ করলে যে ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, সেগুলো হলো—
এসব চাষে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়, ফলে জমির উর্বরতা কমে যায়
উপকারী বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে
প্রচুর আগাছানাশক ব্যবহার করতে হয়, ফলে একসঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে
এসব শস্যের বীজ কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হয়
অনেক সময় এগুলো চাষের সঙ্গে জড়িতদের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়
আশপাশের অন্যান্য সাধারণ শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইত্যাদি।
এসব সমস্যার আশঙ্কা যে অনেকটাই সত্যি, তার প্রমাণও আছে অনেক। দু-একটি উদাহরণ দেয়া যাক—
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে দেখা গেছে, জিএম জাতের তুলা চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষকদের গায়ে বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
অন্ধ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কিছু এলাকায় যেখানে এ ধরনের তুলা চাষ হয়, সেখানে পশু-পাখির রোগের প্রকোপ ও মৃত্যুহার বেড়ে গেছে।
ভারতে বিটি তুলা চাষে কৃষকদের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফলন না হওয়ায় প্রচুর কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ প্রচুর ফলনের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছে বীজ বিক্রি করা হয়েছিল এবং তারা অনেক ঋণ করে জমিতে সেই তুলা চাষ করেছিলেন।
কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনের উদাহরণ:
১৯৯৩ সালে ব্রাজিলের এক ধরনের সয়াবিনের ওপর গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার কিছু গবেষক। এই সয়াবিনে বাদামের কিছু জিন প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। তারা দেখতে পান, যেসব লোকের বাদামের প্রতি এলার্জি আছে, তারা ওই সয়াবিনের সংস্পর্শে এলে মারাত্মক এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। অর্থাত্ এলার্জির মাত্রা বেড়ে যায়।
১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের নিউট্রিশন ও টক্সিকোলজি বিজ্ঞানী আপ্রাড পুত্সাই জিএম টমেটোর ওপর একটি গবেষণা চালান। তিনি দেখতে পান, এই টমেটো খাওয়ানো হলে ইঁদুরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে এবং সেগুলোয় অস্বাভাবিক কিছু দৈহিক পরিবর্তন হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে জার্নাল অব মেডিসিন ফুডে ড. মার্ক লেপ্পের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, কিছু উপাদান যেগুলো ক্যান্সার ও হূদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে, সেগুলোর উপস্থিতি সাধারণ সয়াবিনের তুলনায় জিএম সয়াবিনে অনেক কম।
জিএম শস্য ও খাদ্যের অন্যতম প্রধান কোম্পানি মনসান্তো। ২০০৪ সালে তাদেরই পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জিএম ভুট্টা ইঁদুরের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
২০০৫ সালে কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (অস্ট্রেলিয়া) পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, এক ধরনের জিএম মটর ইঁদুরের ফুসফুসে মারাত্মক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করছে।
বিশ্ববিখ্যাত টেলিগ্রাফ পত্রিকায় কিছুদিন আগে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে জিএম সয়াবিন চাষের বিপর্যয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে লুইস গ্রে বলছেন, সবুজ স্বর্ণ হিসেবে পরিচিত এই সয়াবিন এখন বিষে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, জিএম সয়াবিন চাষের ফলে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে এর চাষী ও আশপাশের মানুষ নানা ধরনের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কয়েকজন এ ধরনের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন বলে ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। লুইসের আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিএম সয়াবিনের কিছু উপাদান শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
বিটি বেগুন কি আসলেই কীটনাশকের ব্যবহার কমাবে?
বিটি বেগুন আসলেই কীটনাশকের ব্যবহার কমাবে কিনা, সে ব্যাপারটিতেও রয়েছে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ। কারণ এর আগে অন্যান্য জিএমও শস্য কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এর ব্যবহার প্রকারান্তরে বেড়ে গেছে বলেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ২০১২ সালের ১ অক্টোবর বার্তা সংস্থা রয়টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জিএমও শস্য চাষ বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক কীটনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহারও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহার ৪০৪ মিলয়ন পাউন্ড বেড়েছে! ফলে নতুন ধরনের আগাছাসহ পোকামাকড়ের মধ্যে কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়। বেনরুক নামের আরেকজন মার্কিন কৃষি অর্থনীতিবিদের মতে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৩ মিলিয়ন পাউন্ড আগাছানাশকের ব্যবহার বেড়ে গেছে (বিস্তারিত দেখা যেতে পারে তার লেখা বইয়ে, শিরোনাম: ইমপ্যাক্ট অব জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড ক্রপস অন পেস্টিসাইডস ইন দি ইউনাইটেড স্টেটস: দ্য ফার্স্ট থারটিন ইয়ার্স)। এ রকম অনেক উদাহরণই দেয়া যায়, যেখানে দেখা যাবে জিএমও শস্য কম কীটনাশক ব্যবহারের কথা বললেও আসলে সেটা এই কীটনাশকের ব্যবহার আরো বাড়িয়ে দেয়। এমনকি অনেক সময় দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির কীটনাশক ছাড়া অন্য কীটনাশক ব্যবহার করলে তাতে কোনো ফলও পাওয়া যায় না।
জিম্মি হওয়ার আশঙ্কা
অভিযোগ উঠেছে, বিটি বেগুন বা এ রকম জিএমও শস্য প্রচলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিকে মুনাফা তৈরির নিরাপদ ক্ষেত্র বানানোর সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত করছে কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি। এসব শস্যবীজের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে কয়েকটি কোম্পানির কাছে। চড়া দামে সেই বীজ কিনতে হবে কৃষককে। তাছাড়া কিনতে হবে তাদের নির্দেশিত কীটনাশক। ফলে কৃষক পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়বেন কয়েকটি কোম্পানির কাছে। যদিও বলা হচ্ছে, বিটি বেগুনের বীজের নিয়ন্ত্রণ কৃষকের কাছেই থাকবে। এ ধরনের প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে প্রবল। কারণ এটি জিএম প্রযুক্তির বেগুন হওয়ার এর বীজের নিয়ন্ত্রণ কৃষকের কাছে থাকা প্রায় অসম্ভব। অন্যান্য জিএম শস্যের অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে। আর যদি এর নিয়ন্ত্রণ কোম্পানির হাতে থাকে তবে পেটেন্ট রাইট আর আন্তর্জাতিক নানা চুক্তির বাস্তবায়নের ফলে বীজের মূল্য হবে চড়া।
সিদ্ধান্ত আসুক কৃষির স্বার্থে
মুনাফার লোভ-লালসায় কৃষি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার প্রমাণ এরই মধ্যে বাংলাদেশের কৃষি দেখছে। বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কোনো কোম্পানি যদি বীজ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে তবে তার বিচার তারা পায় না। এই একটি মাত্র কারণেই পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা ছাড়া এ দেশের কৃষিতে নতুন আগন্তুককে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে আত্মঘাতী।
বিটি বেগুনকে বাংলাদেশের কৃষিতে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে কিনা, সেই বিতর্কের কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়তো এই প্রতিবেদনে পাওয়া গেল না। তবে একটা জিনিস নিশ্চয়ই স্পষ্ট, সেটা হলো— নতুন এই বেগুনটিকে ভালোভাবে জেনে-শুনে নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের কৃষির উন্নয়নের লোভ অনেক সময় অনেকেই দেখিয়েছে। তার ফল সবসময়ই আমরা ভালো পাইনি। কখনো নিজের কৃষির ক্ষতি আমরা নিজেরাই করেছি। তাই আপাতদৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়া এই বিটি বেগুনকে আমাদের কৃষির আরো কিছু ক্ষতি করার সুযোগ করে দেব কিনা, সেটা বোধহয় ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বারি অবশ্য বলেছে, বিটি বেগুন বাজারজাত করার আগে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হবে। সেটা হলে খুবই ভালো হয়। কিন্তু আশা করি, মতামত নেয়ার আগেই বাইরে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হবে না! সিদ্ধান্তটা যেন হয় কৃষির স্বার্থে, কোনো বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে নয়। নিরীহ বেগুন নিয়ে যে বাণিজ্যের লালসা রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর, সেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করাই যেন মুখ্য হয়ে না দাঁড়ায়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×