somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইন করে, টিভি চ্যানেল বন্ধ করে, কনসার্ট বন্ধ করে, ব্লগে পোস্ট দিয়ে, ভারত/হিন্দি বিরোধী প্রচার চালিয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ করা যাবে না

০২ রা মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে বলে আমরা সবাই মোটামুটি একমত। আমাদের স্ত্রী-কন্যারা হিন্দি সিরিয়ালে ডুবে রয়েছে, আমাদের ক্রিকেট ফ্যানরা ক্রিকেট ম্যাচ দেখার ফাকে ফাকে পরিচিত হচ্ছে ভারতীয় পন্যের সাথে, আমরা দেশি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নাম না জানলেও হালিখানেক ভারতীয় কোম্পানির নাম জানি, আমাদের তরুনরা ভারতীয় রিয়েলিটি শো দেখে কিভাবে কুল হতে হয় সেটা শিখছে, মার্জিত হওয়ার চেষ্টা করা যেখানে ব্যাকডেটেড, আমাদের স্বামী-স্ত্রীরা এখন আরো আত্মবিশ্বাসের সাথে পরকীয়া চালাতে শিখে গেছে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে আমাদের শিশুরা বাংলা শব্দের চেয়ে হিন্দি শব্দ শিখছে বেশি করে।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে একটা দেশের এমন অনেক কিছুই দখল করে নেয়া যায়, যেটা যুদ্ধ করেও যেতা সম্ভব নয়। সংস্কৃতি বলতে অনেকেই শুধু পার্ফর্মিং আর্ট বুঝে থাকে, যদিও আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু করছি সবই সংস্কৃতির আওতাভুক্ত। সংস্কৃতি এমন একটি বিষয় যা মানুষ জন্মগতভাবে নিয়ে আসে না, বরং পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শিখে। মানুষের সংস্কৃতির কিছু অংশ বৈশ্বিক, কিছুটা আঞ্চলিক, আবার কিছুটা একান্তই স্থানীয়। ভারতের সাথে একই অঞ্চলে অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে আমাদের অনেক মিল রয়েছে (ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা, গলাবাজির রাজনীতি, কত্থক/মনিপুরী নৃত্য, ধ্রুপদী সংগীত, প্রাচীন মহাকাব্য, রক্ষণশীল সমাজ, পরিবার এবং পরিবারে সদস্যদের ভুমিকা ইত্যাদি)। আবার বৈশ্বিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবেও অনেক কিছুতেই মিল রয়েছে। আবার কিছু রয়েছে আমাদের নিজস্ব। এই নিজস্ব সংস্কৃতিতেও আবার দেশের ভিতরে এলাকাভেদে বিভিন্নতা রয়েছে।

ভারত বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অনেক মিল থাকলেও কিছু অমিলও রয়েছে। সবচেয়ে বড় অমিল ভাষার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ বাংলা ভাষা প্রধান, ভারত হিন্দি ভাষা প্রধান। লোক সংস্কৃতিতে দুদেশের তেমন কোন বড় পার্থক্য নেই। তবে বড় পার্থক্য রয়েছে মিডিয়ার সংস্কৃতিতে (মূলধারার সিনেমা ছাড়া)।

মানুষের সংস্কৃতি শেখার ক্ষেত্রে বর্তমান যুগে পরিবার বা নিকটবর্তী সমাজের চেয়েও বড় ভুমিকা রাখে মিডিয়া। বাবা-মার সান্নিধ্য বঞ্চিত শিশুটির সংস্কৃতিবোধ-মূল্যবোধ তৈরী ও বিকাশ সবই হচ্ছে মিডিয়ার কল্যাণে। ভারত ও বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতি কাছাকাছি হলেও মিডিয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই আলাদা। আমাদের মূল ধারার সিনেমা যেমন বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অশ্লীলতা নির্ভর, ভারতেরটাও তাই। আমার ভারতীয় বন্ধুরা বলিউডের সংস্কৃতিকে তাদের জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসেবে মানতে নারাজ, ঠিক যেমন আমরা এফডিসির বাংলা সিনেমার সংস্কৃতিকে আমাদের সংস্কৃতি বলে মানতে পারি না। বড় একটা পার্থক্য রয়েছে টিভি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে। আমাদের টিভি অনুষ্ঠান অনেক বেশি লোকসংস্কৃতির কাছাকাছি রয়েছে ভারতীয় টিভি অনুষ্ঠানের চেয়ে। ভারতীয় টিভি শুধুমাত্র তাদের ধনিক শ্রেণীরই প্রতিনিধিত্ব করে। আর সেই টিভিই প্রমোট করে চলে তাদের অশ্লীলতা নির্ভর সিনেমাগুলোকে। সিনেমার সবচেয়ে অশালীন অংশ যে আইটেম গান, ভারতীয় টিভি গুলো সারাদিন অবলীলায় সেগুলো প্রচার করে চলে। আর এই বলিউডি সংস্কৃতিই আমাদের সংস্কৃতি ও ভাষার ওপর আগ্রাসনের জন্য দায়ী।

আমাদের সুশীল সমাজ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। তারা অশ্লীলতা বিরোধী আন্দোলন করেন, টিভি চ্যানেল বন্ধ করার জন্য চেচামেচি করেন, কিন্তু সাধারণ লোকের বিনোদনের অধিকার নিয়ে কোনকিছু ভাবেন না।

প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে আমি চিন্তিত নই। ২০/২১ বছর বয়সের পর প্রায় সকল মানুষই ভালো-মন্দ যাচাই করার ক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু শিশু কিশোর, যারা সামাজিকিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের ওপর মিডিয়ার প্রভাব অনেক অনেক বেশি। আমাদের সংস্কৃতির স্বকীয়তা ধরে রাখতে হলে এই স্বকীয় দিকগুলো আকর্ষনীয়ভাবে তরুনদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রদর্শনি বন্ধ করে বা তরুনদের আকর্ষণ করার জন্য নিজেদের সংস্কৃতির বিকৃতি ঘটিয়ে বলিউডিকরণ করে প্রচার করে স্বকীয়তা টিকিয়ে রাখা যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:১৭
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×