somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফতোয়া নয় “ডগমা” নিষিদ্ধ করা হোক

০২ রা মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মধ্যে যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পরি তখন দেখা যায় আমাদের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে অনেকেই আমাদের কাছে বিভিন্ন ঔষধ,পথ্য,চিকিৎসক,কবিরাজ এবং পানিপড়া নিয়ে আসেন। তাদের কারো উদ্দেশ্য অসৎ নয় বরং এক বোবা মমত্তবোধতাড়িত হয়েই তারা এসব করে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায় এসব করতে গিয়ে মূল রোগটি চিহ্নিত হয় না কিংবা সুচিকিৎসা মেলে না। আবার অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে অনেকের অঙ্গহানি এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমরা সেই সব চিকিৎসা বা কবিরাজি পদ্ধতিকে সামাজিকভাবে মূলোৎপাটন করতে সরব হয়ে উঠি না। অনেক সময় সেই চিকিৎসক বা কবিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, অনেক সময় তাও হয় না। আবার, জ্বর হলে আমরা অনেকেই প্যারাসিটামল খাই। জ্বরের প্রাবল্য কিংবা ব্যথা থাকলে অনেক সময় দু’টো ট্যাবলেট খেতে হয়। এই ট্যাবলেটই যদি কেউ ১৫ থেকে ২০ টি খেয়ে ফেলেন, তার জ্বর বা ব্যথার উপশম তো হবেই না বরং তার বৃক্ক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে এবং তিনি মৃত্যমুখে পতিত হবেন। এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, একটি জীবনরক্ষাকারী ঔষধও কেবল মাত্র প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় বিষ হয়ে যেতে পারে।
এখন আমরা ফতোয়ার দিকটি বিবেচনা করি। ইসলাম যেহেতু শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়,বরং একটি জীবনবিধান, তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমধান খুঁজতে প্রথমেই দ্বীন ইসলামের দ্বারস্থ হতে হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশ ও তার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-র বিভিন্ন নির্দেশনা, আদেশ-নিষেধ এবং তদপরবর্তী বিভিন্ন জ্ঞানী আলেম-ওলামা (যাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি রয়েছে) এবং বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ্গণ যা বলেছেন তাঁর আলোকে যথাপযোগ্য ব্যক্তি যখন কোন সমাধান দেন তখন তা ফতোয়া হিসেবে পরিগণিত হয়। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষনীয়। যখন কেউ ফতোয়া দেন তখন প্রথমেই প্রশ্ন আসে তার ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা আছে কি না। আমরা যে কেউ কয়েকটি ঔষধের নাম মুখস্ত করে উপসর্গ অনুযায়ী যে কাউকে খেতে বলতে পারি। সেই ঔষধ খেয়ে যদি তার খারাপ কিছু হয়ে যায়, তাহলে কে দায়ী? আমাদের সমাজে দেখা যায় যে সব ফতোয়ার কারণে বিতর্ক হয়েছে, মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে তার বেশীরভাগই গ্রাম্য মোড়ল, সুযোগসন্ধানী প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষনবঞ্চিত গ্রাম্য হুজুর দিয়েছেন। যাদের ফতোয়া দেওয়ার কোন অধিকারই নেই। বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় অনুপযুক্ত লোকের ফতোয়া তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয় এবং তারপর পুরো ঘটনাটি ব্যাপক প্রচার লাভ করে।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তালাক এবং হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে ফতোয়া নিয়ে জল ঘোলা করা। ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। তালাক দেওয়ার প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ করা হয়েছে এবং অনুৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলাম কখনও বলেনি একসাথে তিন তালাক বলে তালাক দিয়ে দিতে। ইসলাম কখনও গ্রাম্য মোড়লের উপর দায়িত্ব চড়ায়নি হিল্লা বিয়ে দেওয়ার। হিল্লা বিয়ের মত জঘন্য একটি পরিণতির কথা ভেবেও যদি অসহিষ্ণু দু’জন মানুষ পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের সংসার টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট হয়, এতে তো খারাপ কিছু নেই।
ব্যভিচার এবং দোররা মারার ব্যপারটি নিয়েও কিছু জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসলামে কোন গ্রাম্য হুজুরের হাতে দোররা মারার অধিকার দেয় নি, বরং বয়োঃপ্রাপ্ত মেয়ের সাথে বাবাকেও সংজত আচরণ করতে বলা হয়েছে।
সব কথার শেষ কথা হল কিছু মানুষ ইসলামের কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে দূর্বলের ওপর অত্যাচার করবে তা আমরা কেউই সমর্থন করি না। ইসলামে বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে এবং তা শুধুমাত্র যথাযোগ্য ব্যক্তি দ্বারাই প্রয়োগ করা যেতে পারে। দু’পাতা আরবী পড়ে, একটা পাঞ্জাবী আর টুপি পড়ে, মুখে ক’গাছি দাঁড়ি রেখে যারা শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থরক্ষায় ইসলামের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে তাদের শাস্তি হোক এটাই সবার কাম্য। কিন্তু তাদের শাস্তিকে পাশ কাটিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কোন ব্যক্তি,সমাজ বা সরকারকে শোভা পায় না যেখানে সেই ভূ-খন্ডের সার্বভৌমত্বের দলিল সংবিধানে ইসলাম স্থান পেয়েছে। তাছাড়া, সংবিধানের ৪১(১) ক-তে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। তাহলে একথা সুনির্দিষ্ট হয়ে যায় যে কেউ যদি চায় ইসলামের আলোকে বিচার পেতে,তাহলে সে ব্যবস্থা করার দায়িত্ব বর্তায় রাষ্ট্রের। তাই ফতোয়াকে বিচারব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করাটাই যৌক্তিক হয়। যখন কেউ আইনী সহায়তা চাইবেন তখন তাকে প্রচলিত বিচারব্যবস্থা এবং এক্ষেত্রে ইসলামী বিধান তথা ফতোয়া কি তা উল্লেখ করা হলে তিনি তার যেটা পছন্দ তা বেছে নেবেন। কিংবা বিচারকার্যের শুরুতেই বেছে নেবেন তিনি কিভাবে বিচার চান।
তাই আমরা যদি সংবিধান, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং সুস্থমানসিকতার বিকাশ চাই তাহলে ফতোয়া নয় “ডগমা”-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করি। ডগমা- সাধারণত অন্ধ-ধর্মীয় গোঁড়ামীপূর্ণ মতামতকে বোঝালেও বর্তমানে যুক্তিতর্কের তোয়াক্কা না করে যে কোন রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক দর্শন বা মতবাদকে বিশ্বাস করা বোঝায়। যদি আমাদের জন্য ডগমা বা অন্ধবিশ্বাস নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় তবে একই সাথে ফতোয়ার অপব্যবহার,জঙ্গীবাদ সহ ঝাড়-ফুঁক,তাবিজ-কবজ,পানিপড়া ইত্যাদি মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব। তা না করে, প্রকৃত দোষীদের শাস্তি বিধান না রেখে, উপযুক্ত শিক্ষার আলো না ছড়িয়ে এবং আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তিবর্গকে তৎপর না করে শুধুমাত্র ফতোয়া নিষিদ্ধ করা এই ভূ-খন্ডের তথা এই পৃথিবীর একটি অত্যন্ত আধুনিক ধর্ম তথা জীবনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ বলেই বিবেচ্য।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×