somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবু সিংহাসনটা মহানায়ক টেন্ডুলকারের

০১ লা মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেঞ্চুরি করেছেন শচীন টেন্ডুলকার। আবার...আরেকবার। ব্যস!
ব্যস নয়তো কী! তিন অঙ্কের জাদুকরী সংখ্যায় পেঁৗছানোটা এখন আর বিশেষ কিছু নয় টেন্ডুলকারের জন্য। মাঠে নামবেন, সেঞ্চুরি করবেন_সে-ই তো স্বাভাবিক। সেঞ্চুরি করতে না পারলেই বরং তার সংবাদমূল্য বেশি!
সেই টেন্ডুলকারের জন্যও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য অন্য রকম। সেটি মার্ক ওয়াহ, সৌরভ গাঙ্গুলী ও রিকি পন্টিংকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক হয়েছেন বলে নয়। বর্ণিল-ঝলমলে ক্যারিয়ারের খেরোখাতায় একমাত্র যে হাহাকার, সেই বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের পথে নিজের ক্ষুধাটা জানান দিতে পারলেন যে! অনুচ্চ ঘোষণার সুরে আরো জানালেন, ভারতের ক্রিকেট আকাশে এখনো তিনিই বৃহস্পতি।
এমনিতে ভারতের বিশেষত ব্যাটিং লাইনটা যাকে বলে 'তারায় তারায় খচিত'। ঝলসানো আলোয় গ্রহ-নক্ষত্রের ঠোকাঠুকি হওয়ার মতো অবস্থা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের পর আলোটা পুরোই কেড়ে নিয়েছিলেন বীরেন্দর শেবাগ। কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৫ রানের ওই অসাধারণ ইনিংস। টেন্ডুলকারের কিছু করতে হবে না! করলেন তিনি। একেবারে নিজের মতো। শেবাগের মতো ঝলসানো সূর্যের প্রখরতায় না, চাঁদের সৌন্দর্যের স্নিগ্ধতায়। ব্যাট হাতে নির্মম কর্কশ বাস্তব গদ্য রচনা করেননি, কবিতার ছন্দজালে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন দর্শকদের। শেবাগ-ধোনিদের ব্যাকরণ বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ের এই রমরমা যুগেও একেবারে কোচিং ম্যানুয়ালের মতো ব্যাকরণসিদ্ধ ক্রিকেটে। তাতেই ব্যাঙ্গালুরু সাক্ষী হলো আরেকটি ধ্রুপদী সেঞ্চুরির। ক্রিকেট বিশ্ব দেখল সকালে সূর্যোদয়ের মতো সেই চেনা দৃশ্য_হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে অনন্ত নক্ষত্রবীথির দিকে তাকিয়ে টেন্ডুলকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
এমনিতে কাল টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরিটি ছিল একরকম পাওনা। বিশ্বকাপের শুরু থেকে দুর্ভাগ্য যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে এমন একটা ইনিংসেরই প্রয়োজন ছিল। প্রথম ম্যাচে হয়ে গেলেন রান আউট। এরপর হাঁটুর পুরনো ইনজুরির খবরটা রং-চং মাখিয়ে এল মিডিয়ায়! ভারতবাসী তাতে বসে যায় প্রার্থনায়। তাদের আশ্বস্ত করতেই যেন কাল ইংল্যান্ডকে বেছে নিলেন টেন্ডুলকার। প্রথম বলটি একেবারে মাঝব্যাটে। তবে শুরুটা কিন্তু তুলনামূলক বেশ ধীরগতির। মুখোমুখি হওয়া ২৪তম বলে মেরেছেন প্রথম বাউন্ডারি। ৪৮তম বলে দেখা গেছে প্রথম আগ্রাসন। গ্রায়েম সোয়ানকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে সোজা ব্যাটে চার। তাতেই বোঝা গিয়েছিল, বড় কিছু করতেই ধ্যানস্থ আজ ঋষি। সেই ধ্যান বৃথা যায়নি। ১১৫ বলে ১২০ রানের ছবির মতো সাজানো এক ইনিংস খেলেছেন টেন্ডুলকার। ১০টি বাউন্ডারি এবং ৫টি ওভার বাউন্ডারির মালায় সাজানো ছিল তা। আফসোস একটাই_কেন তা আরো বড় হলো না...।
ওয়ানডেতে একজনের ব্যাট থেকে ২০০ রান একসময় ছিল অবাস্তব এবং হাস্যকর এক চিন্তা। সেই দুর্লঙ্ঘ্য চূড়াও পদানত হয়েছে টেন্ডুলকারের ব্যাটের শৌর্যে। এর পর থেকেই একদিনের ক্রিকেটে দ্বিশতকের চিন্তাটা অনেক সময় অলক্ষ্যেই খেলা করে দর্শকদের মানসে। আগের ম্যাচে শেবাগ খুব কাছে গিয়েও পারেননি। টেন্ডুলকার কাল যেখানে খেলছিলেন, মনে হচ্ছিল হবে। শুনতে একটু আশ্চর্য শোনাচ্ছে বটে। কারণ আউট হওয়ার সময়ও দ্বিশতক থেকে চার কুড়ি দূরে ছিলেন। কিন্তু ইনিংসটি যেভাবে সাজাচ্ছিলেন, তাতে অমন ভাবনা খেলে যাওয়া অমূলক না। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন পল কলিংউডকে দ্বিতীয় ছক্কা মেরে। ৬৬ বলে। সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন টিম ব্রেসনানকে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে। ৪ ছক্কার সঙ্গে ইনিংসের সেটি অষ্টম চার। বল লেগেছে ১০২। আগে পর পর দুই বলে ছক্কা মারা সোয়ানকে এরপর আরো একবার হতভম্ব করে দিয়েছেন। আউট হওয়ার আগের বলটিতেও তো চার মেরেছেন অ্যান্ডারসনকে। ইনিংসের শুরুর দিকে দু'বার তাঁর বল টেন্ডুলকারের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যাওয়ায় নিশ্চয়ই তখন ভাগ্যকে গালাগালি করছিলেন এই পেসার। আর হাজার চলি্লশেক দর্শকের আশাটাও বাড়ছিল সমান্তরালে! কিন্তু হলো না। অ্যান্ডারসনের বলটিকে অন সাইডে ঘুরাতে চাইলেও লিডিং এজে তা চলে যায় কাভারে। মিলিয়ন ডলার লটারি জয়ের টিকিটের মতো তা হাতে জড়িয়ে ধরতে কী আর ভুল হয় মাইকেল ইয়ার্ডির!
পাহাড়ের গায়ে যেমন সোনা ছড়ায় রৌদ্দুর, ক্রিকেটের জমিনে তেমনি টেন্ডুলকার। রৌদ্দুর তো তাও মেঘের আড়ালে চলে যায় কখনো-সখনো। টেন্ডুলকারের সেই ব্যতিক্রমও নেই বললেই চলে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আলোয় ভাসিয়ে নিয়ে চলেছেন ক্রিকেটের গালিচাকে। বিশ্বকাপে কাল করলেন রেকর্ড পঞ্চম সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে হলো ৪৭তম শতরান। টেস্টে হয়ে গেছে ৫১টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি হতে বাকি মাত্র ২! হবে কি তা এই বিশ্বকাপে!
হবে হয়তো। হলেই যে অমরত্বের নিশ্চিত করা টেন্ডুলকার এগিয়ে যাবেন ক্যারিয়ারের পূর্ণতার পথে। বিশ্বজয় তাঁর হয়ে গেছে সেই কবে! এখন কেবল বিশ্বকাপ জয়ের প্রতীক্ষা। সেই প্রতীক্ষার মধুর সমাপ্তি না হলে শুধু তো টেন্ডুলকারের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হবে না ক্রিকেট ভুবন, অনন্ত এক হাহাকার সঙ্গী হবে বিশ্বকাপেরও। সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের অতি ক্ষুদ্র তালিকাতেও চিরকাল থাকবে যাঁর নাম, তাঁর স্পর্শধন্য যে হওয়া হবে না বিশ্বকাপ ট্রফির!
টেন্ডুলকারের পর পরশু সেঞ্চুরি করেছেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসও। রানের সংখ্যায় তা ভারতীয় ক্রিকেট-ঈশ্বরের চেয়ে ৩৮ বেশি। অমন পাহাড়সম রান তাড়া করতে নেমে চাপের মুখে দুদার্ন্ত ইনিংসটির জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছেন তিনি। আর সংবাদ সম্মেলনে তো বললেনই, এটি তাঁর ক্যারিয়ারসেরা ওয়ানডে ইনিংস। টেন্ডুলকারের ইনিংসটি ক্যারিয়ারসেরা নয়; সেটি ক্যারিয়ারে অমন আরো ভূরি ভূরি ধ্রুপদী ইনিংস খেলেছেন বলেই। সংবাদ সম্মেলনে তাই যখন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে জিজ্ঞেস করা হলো টেন্ডুলকারের ইনিংসটি নিয়ে কিছু বলতে, দারুণ জবাব দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক_'গত ২০ বছর ধরে সবাই তো ওর ইনিংস নিয়েই কেবল কথা বলছে! সে কারণেই অমন অসাধারণ ইনিংস খেলার পরও, অমন পাহাড়সম করা তাড়া করে প্রায় জিতে যাওয়ার পরও, ক্যারিয়ারসেরা ওয়ানডে ইনিংস খেলার পরও, এমনকি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার পরও পরশুর ম্যাচে স্ট্রাউস কেবলই পার্শ্বনায়ক। নায়কের সিংহাসনটা যে মহানায়ক টেন্ডুলকারের।'
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×