ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এখন গরুও খায় না
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আলুর দাম বাড়লে যদি দোষ দেই সরকারকে। তাহলে কিন্তু এই আমজনতাকে আবার দোষ দিয়েন না মাননীয় সরকার। কারন তখন সঠিক কথাই বলবো- কেন বাড়ল দাম?
কি ক্ষতি হতো যদি সরকার কৃষকদের এই বাম্পার ফলনের পর পরবর্তী বিপণন এবং গুদামজাত করনে সুবিধা দেয়ার জন্য পাশে থাকতেন। আলু চাষিদের অবস্থা দেখলে মনে হয়। সরকার বাচ্চা হতে দিয়েছে ঠিকই। বাচ্চার দেখভাল টার অভাব হীনতার জন্য- সব শেষ।
এই সরকার কৃষিতে ভালো করেছেন কি খারাপ করেছেন। তা নিয়ে আসলে চিন্তিত না। চিন্তিত অবশ্যই পুরো কার্যক্রমটাই হয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং হয়েছে। যদি না সঠিকভাবে সামষ্টিক কাজগুলো কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন। প্রয়োজন হলে গুদামজাত করনও সঠিক সময় সঠিকভাবে, একটি নিয়মিত সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়া না করা হয়। আমরা তো চাইবোই সব কিছু সঠিক হোক। তাহলে যে কি হতে পারে। তা তো দেখতেই পাচ্ছি। উৎপাদনকারীদের মুখগুলো সত্যি মলিন হয়েই আছে নিশ্চিত। এইবার আলুর বেলায় তা’ই তো হয়েছে। মাত্র তিন টাকা দিয়ে কেজি প্রতি বিক্রি হয় আলু মাঠ পর্যায়ে! তাও নাকি কৃষক গন বিক্রি করতে পারছেন না। সমস্যা তো তাও যদি হতো তাহলে তো সান্ত্বনা থাকতো। তা যে গুদামজাত করনও করতে পারছেন না কৃষক গন। তার মানে কৃষকের পরিবার তা দুঃখে-কষ্টে গোয়ালঘরের গরুর সাথেই শেয়ার করছে! তা কি কৃষি সংশ্লিষ্ট লোকজন দেখতে পান নি। । সরকারকে তো তাও ভেবে দেখতে হতে পারে। কারন দাম বাড়লে তো আমরা বলবোই- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কেন? জবাব চাই জবাব চাই।
পচে যাওয়ার চেয়ে গরুতে খাবে। তাও মেনে নিয়েছেন সে কৃষক ঘরের গৃহিনী। ঝকঝকে ছবিসহ সংবাদ কার না নজরে গিয়েছে। হায়! কৃষিবিভাগের নজরে আসে নাই! আলু এখন গরুতেও খায় না! অবস্থা দৃষ্টিতে তো তাই দেখতে হবে বলে পরিস্থিতি বলছে। গরুরও তো ক্ষুধা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ। আলুরও জীবন নিয়মমাফিকই রাখতে হয় মানে হিমাগারে শীতল করে সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু কৃষকরা তাও পারছেন না রাখতে। হিমাগারে রাখবেন কিন্তু টাকা কোথায়। এই সমস্যাটাই কি মাথায় আসে নি কৃষি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের! তাহলে আর বাম্পার ফলন এ খুশি হয়ে লাভ কি? শেষ ভালো যার সব ভালো- তা আর হল না মাননীয় কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারি মানূষগন।
তার মানে উদ্ধৃত আলুগুলোর সলিল সমাধি ঘটলো। সাথে সলিল সমাধি কৃষকের মনের। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়াবে কি দাঁড়াবে না। তা না হয় সরকার ভর্তুকি আর ফর্তুকি দিবেন কৃষকদের, তা ঠিক আছে। তার থেকেও বড় কথা। সামনের আলুর মৌসুম হীন সময়টাতে তো আলুর দাম হবে আগুন ধরানো। তার মানে যারা আলু খেতে চান। কিন্তু সামর্থ্য থাকবে না আর কি তখন। এখানেও সলীল সমাধি! অবশ্য চিন্তা কি! গরিবের আলুর তো আরেকটি নাম আছে বড়লোকের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই! এই ফ্রাই খাওয়ার আগেই যে চাষিগন ফ্রাই হয়ে যাচ্ছেন। তা একটু ভাববেন আশা করি মাথাওয়ালারা। ভুলে কি গেলে চলে- বাঙ্গালী চেতলে সত্যি বাঘ! কৃষক চেতলে তো খানেওয়ালাদের একটু হলেও মাথায় হাত!
কি করবেন না করবেন। তা তো আর পুরো করে দেখাতে পারবো না। তবে এতটুকু বাস্তব চিত্রকল্পের বাইরে সত্যিকারের সমাধান হতে পারতো- সরকারের উৎপাদন পরবর্তী সহায়তা কৃষকের উপর বজায় রাখা।
তাহলে কিন্তু একঢিলে দুটি পাখি না। তিনটি পাখি বেচে যেতো। আফসোস তা হয় নি।
যেহেতু এই ব্যাপারটি নিয়ে আমারও খুব আগ্রহ জন্মেছিল এবং সমবেদনা সে চাষিদের প্রতি। খোজ নিয়ে জানলাম এবং ব্যথিত হলাম। কৃষি মন্ত্রণালয় সাধু সাবধান। এই ভুল পরিকল্পনার কারনে ক্ষতি কিন্তু হয়ে গেলো তিনপক্ষের।
১। আলু চাষিদের
২। আমাদের দেশের নিম্নশ্রেণীর ভোক্তাদের।
৩। সরকারের কৃষি উন্নয়ন এর কালিমা লেপনে।
দেখেন তো কষ্ট এই তিনশ্রেনির মধ্যে কাদের বেশি হবে। অবশ্যই প্রথম দুপক্ষের। সরকার তো আর কষ্ট কালীন সবসময় পাশে থাকবে না!
এই পরিস্থিতি ভেবেই এই আমজনতা আসলেই চিন্তিত।
একজন আলু উৎপাদনকারীর কথা দিয়েই শেষ করি, উদ্ধৃত আলু নিয়ে-
“ বাহে টেকা লাগবে তো কোলেষ্টর এ রাইখমু যে। সব তো খেত করবার লাগি খরচ করছি। ধার করছি, বন্দক রাখছেও কেউ কেউ। এহন তো একুলও গেলো ওকুলও গেলো। এহন আমরা রাহুম কই। যে কয় টেকা পাই তাই তো লাভ। মোর বেচতে লাগবে না বাহে! কেমনে যে চলমু সামনে। হেই চিন্তাও তো করন লাগে!” বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে অঞ্চলের আলুচাষিগন।
অবাক লাগে, সরকারী পর্যায়ে কি এইসব আহাজারি পৌছায় না?
কৃষি উৎপাদনে উন্নতি সাবলিল থাকবে না, যদি না কৃষক এর মুনাফা হয়।
সাধু সাবধান।
যে কোন পরিকল্পনারই- শেষ ভালো যার সব ভালো। শুধু উৎপাদনেই বাম্পার ভেবে বসে না থেকে। পরবর্তি অবস্থাটা নিয়েও একটু ভাবেন মাননীয় মন্ত্রনালয়। ভুল থেকেই তো মানুষ শিক্ষা নেয়! যেন ভুল আর না হয়।
কৃষক বাচলেই তো বাচবে দেশ। ভুল করলে তো কৃষক শেষ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার
বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন
মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি
এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)
কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শৈল্পিক চুরি
বহুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন