somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা এবং আমার ধর্ম-বিশ্বাস

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একবার এক বিনয়ী ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি এতটা ভদ্রতা শিখেছেন কার কাছ থেকে। তিনি মুচকি হেসে জবাব দিলেন, “অভদ্রের কাছ থেকে”। তাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হল যে তিনি কিভাবে অভদ্রের কাছ থেকে ভদ্রতা শিখলেন, সে তো ভদ্রতা জানে না বলেই অভদ্র। তখন তিনি জানালেন, একজন চরম অভদ্র ব্যক্তির যে সব আচরণ মানুষের কাছে তাকে অপ্রিয় করে তোলে,তিনি সযত্নে তা নিজের চরিত্র হতে সরিয়ে ফেলেন। আর অভদ্র ব্যক্তির যে সব দিক মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করে, তিনি সে সব দিক পুনর্বিবেচনা করে দেখেন।

নাস্তিক-আস্তিক বাদানুবাদ অতি সুপ্রাচীন। ধর্ম, যুক্তি আর বিজ্ঞানের মিশেলে আমরা সবাই অদ্ভূত এক জীবন-যাপন করে চলি। যেখানে আমরা নিজেরাই অনেক সময় বুঝিনা আমরা কোন মতবাদকে সমর্থন করছি, কোন মহাপুরুষকে আদর্শ মানছি।

একজন মুসলমান হিসেবে আমার যাপিত জীবন অনেকখানি সাধারন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরা,কাজে বেরিয়ে যাওয়া,দুপুরে খাওয়া শেষে নামাজ,তারপর বই/খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বিশ্রাম,বিকেলে নামাজ পরে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়া,সন্ধ্যায় নামাজ,তারপর কখনো দাওয়াত বা ব্যক্তিগত কাজ কিংবা বাজারসদাই করা,রাতের খাবার পর নামাজ তারপর ঘুম। এভাবেই নামাজ কে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। এখানে না আমি কারো সমস্যা দেখি,না নিজে কোন সমস্যা বোধ করি। ইসলামের অন্যান্য কর্মকান্ডগুলোতেও আমি অন্যায় কিছু দেখি না।

জীবনের বিভিন্ন ধাপে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তার বেশীরভাগ সমাধান আমি আমার ধর্মবোধ থেকে বের করে নিই। আর আদর্শ হিসেবে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নেতা,পথপ্রদর্শক আর বন্ধু হিসেবে পাই। অনেক মহামনীষীর জীবনী পড়ে দেখেছি। কিন্তু প্রিয় নবীর মত করে কাউকে পাই নি। তাঁর কোন সিদ্ধান্তকে আমার অমূলক মনে হয় নি, তাঁর কোন পদক্ষেপকে ভুল মনে হয় নি।

বিভিন্ন জায়গায় যখন দেখি আমার প্রিয় নবী বিরুদ্ধে কথাবার্তা হচ্ছে, চর্চা হচ্ছে, তখন তাতে দৃষ্টিপাত করি। নবীর জীবনের অনেক দিক নিয়ে অনেক নাস্তিক/আধা-আস্তিক/পরিচয়-প্রতিবন্ধী মানুষ অনেক কিছু বলে থাকেন, লিখে থাকেন। যেহেতু এই উপমহাদেশে আমাদের ইসলামের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কখনও লড়তে হয় নি, তাই আমাদের অনেকেরই দেখি এসব দেখে কোন প্রতিক্রিয়া হয় না, অনেকে নিজের বিশ্বাসের দূর্বলতার কারণে সেই সব চর্চাকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে ফেলেন। তবে সত্যি কথা বলতে কি, আমার ধর্ম-বিশ্বাস এতে আরও পোক্ত হয়।

প্রিয় নবীর অনেক কিছু নিয়ে অনেকের উগ্র মন্তব্য শুধুমাত্র বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা বলে মনে হয়। অনেকে তার বহু বিবাহের দিকটি অত্যন্ত উৎকটভাবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু আমরা এটা ভুলে গেলে চলবে না যে শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার ভিত্তিতে প্রিয় নবী এই কাজটি করেন নি। তাঁর প্রতিটা বিবাহের পটভূমি আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ। তিনি শুণ্য থেকে শুরু করে সর্বময় ক্ষমতা পেয়েছিলেন। তিনি পারতেন বৈবাহিক সম্পর্কের ধার না ধরে নিজের মত জীবনযাপন করতে। কিন্তু তা তিনি করেন নি। তিনি ধর্মীয়,রাজনৈতিক,সামাজিক বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এই বৈবাহিক সম্পর্কগুলো স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ সাক্ষ্য দেয় যে তিনি তাঁর স্ত্রীদের সাথে কোন অসদাচরণ করেন নি, কারো প্রতি অবিচার করেন নি। তাই তাঁর অত্যন্ত ব্যক্তিগত এই দিকটি নিয়ে যখন কেই কটুক্তি করে তখন সেই ব্যক্তির চিন্তার সীমাবদ্ধতা ফুটে ওঠে। কারণ, শুধুমাত্র যৌনতা বা দৈহিক সুখের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ বিয়ে করে না আর যাদের সে উদ্দেশ্য থাকে তাদের বিবাহ বহির্ভূত যৌনজীবনের বিশাল উপাখ্যান থাকে যেটা আমরা পশ্চিমা অনেক মহান নেতাদের জীবনে দেখে থাকি।

যুদ্ধপরবর্তী সহিংসতা নিয়েও অনেকে জল ঘোলা করেন। অনেকে বলে থাকেন আমাদের প্রিয় নবী বিভিন্ন যুদ্ধ জয়ের পর বিজিত দলের উপর যেভাবে খুশি,সেভাবে ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছেন। অনেকে নারীদের মালে গণিমত বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অনেকে এটাও বলে থাকেন যে বিজিত দলের নারীদের প্রতি যথেচ্ছাচার করতে বলে হয়েছে। কথাটা সম্পূর্ন ভুল। আমাদের প্রিয় নবী বিজিত দলের নারীদের প্রতি কোন অন্যায় আচরণ কখনও সমর্থন করেন নি। যদি তাই হত, তাহলে মক্কা জয়ের পর মক্কার কোন নারী নিরাপদ থাকতেন না। বিজিত দলের প্রতি ইসলাম যে সম্মান প্রদর্শন করে, তা আর কোন জাতি বা ধর্ম করে থাকে কিনা, করার নির্দেশ দেয় কিনা তা ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই বুঝতে পারবেন।

আমাদের অনেকেই ধরে নিয়ে থাকেন ইসলামের সাথে পাকিস্তানপন্থী হওয়ার একটা গূঢ় সম্পর্ক আছে। ধারনাটা সম্পূর্ন ভুল। পাকিস্তানীদের ধর্মবোধ আমাদের তুলনায় অনেক কম কিন্তু তাদের আনুষ্ঠানিকতা অনেক বেশি। মুক্তিযুদ্ধে তারা এই দেশের মানুষের প্রতি যা করেছে, তা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম সম্মুখ সমরের কথা বলে, প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের কথা বলে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মত অস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া, প্রতিপক্ষের নারী ও শিশুদের প্রতি পাশবিক আচরণ ইসলামের শিক্ষা নয়।

আমার ধর্মবোধ নিয়ে আমি সুখী। আমার এই সুখ ততক্ষনই স্থায়ী থাকে যতক্ষন না পর্যন্ত কেউ তর্কের নামে কিংবা শুধুমাত্র বিরোধিতার খাতিরে আমার ধর্ম নিয়ে যা মন চায় তা বলে। হতে পারে কেউ নাস্তিক, সেটা তার নিজস্বতা। কিন্তু আমার ধর্ম, আমার প্রিয় নবীকে কটুক্তি করতে হবে কেন? নিজের বিশ্বাস/ধ্যান-ধারনা/দৃষ্টিকোণ সবার সাথে আদান-প্রদান আমাদের সবার অধিকার। কিন্তু এই মিথষ্ক্রিয়ার মঞ্চ তিক্ত করার জন্য এই কটুক্তিগুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

তবে ধন্যবাদ জানাই নাস্তিকদের। আপনাদের সবার এই অক্লান্তভাবের ইসলামের ছিদ্রান্বেষনে ব্যস্ত থাকার কারণে ইসলামের এবং প্রিয় নবীর জীবনের অনেক গুরুতেপূর্ণ দিক আমরা জানতে পারি। তাই মুচকি হেসে বলতে পারি “প্রিয় নবীকে আরো ভালবাসতে শেখায়, ধর্মকে আরো প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরতে শেখায় আমাদের নাস্তিক ভাইয়েরা।”
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৪০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×