বইমেলা দেখতে দেখতে শেষের পথে। ভাবলাম আমার পছন্দের মতো বইগুলো তো এখনও কেনা হয়নি। তাই দেরি না করে ঝটপট পত্রিকা খুঁজে খুঁজে একটা তালিকা তেরি করি। মেলা যাবার জন্য তড়িঘড়ি করছে বন্ধু হাসান ইমাম। বলি, আমিও তো মেলায় যাবো। সে বলে রওশন ভাইতো যাবে। ভালোই তো হলো। এক সঙ্গে যাও যাবে। কথা বলতে বলতে বন্ধু জিনাত নাজিয়ার ফোন। বলেন, ‘সাঈদ কত দূর?’
‘এত কাছাকাছি।’
‘জানো ত আজ আমার বইয়ের মোড়ক অনুমোচন।’
‘হ্যাঁ। জানি।’
জিনাত নাজিয়া ঢাকা বন্ধুসভার লেখাপাঠের আসরে একজন নিয়মিত বন্ধু। তাঁর প্রথম উপন্যাস তবুও গোধূলীবেলা আসছে। এজন্য বেশ উদ্বেগ। কিভাবে বইয়ের মোড়ক অনুমোচন করবে এই নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত।
মেলায় প্রবেশ করাই ফাল্গুলের বাতাসে উড়ে আসতে লাগে ধূসর রঙ্গে ধূলবালি। কোন একজন বলে উঠেন, ধূর..বাংলা একাডেমির কোন কান্ড জ্ঞান নেই। ধূলবালিগুলো উড়ছে। পানি দিলেই তো হয়। পানি দিতে আর ক’টাকায় লাগে!
এমন সময় একগাঁথা বই নিয়ে বের হচ্ছে পাবনাসভার বন্ধু শিশির। তিনি বলেন, ‘এই সুযোগ তো আর পাবো না। তাই বইগুলো কিনে নিলাম। সারাবছর জুড়ে এই বইগুলো পড়বো।’
মোহাম্মাদ আলী বলে,‘ইশ্ মেলাটা শেষ হয়ে এলো। বিকালে বিকালে মেলায় এসে কত বন্ধুর সঙ্গে দেখা হতো।’ তাসনুভা অরিণ বলে উঠে, ভালোই তো ছিল। সারাবছরজুড়ে যদি থাকতো!
একুশের এই মেলাটা আমাদের প্রাণের সঙেগ মিশে রয়েছে। এখানে আমরা আমাদের প্রিয় লেখকের ব্যস্ততম মূখগুলো দেখতে পাই। দেখতে পাই সারাদেশের পাঠকবন্ধুদের। স্বর্ণময়ী সরকার বলে,‘এইবারে মেলাটা আগের চেয়ে অনেক গুচ্ছানো এবং মানুষজন বই কিনছে আগের তুলনায় বেশি।’
ঢাকা বন্ধুসভা সহসভাপতি ফারাহ্ দিবা বলেন, ‘মেলা আসলে অনেক ভালো লাগে। লেখক হওয়া অনুপ্রেরণা পাই। তার চেয়ে বড় কথা সহজের অনেক বই কিনতে পারি।’
এই স্টল থেকে অন্য স্টল ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যার লালবেলাটা হেলে পড়তে লাগে। অন্ধকার এলোও শহরে বিদুিতক বাতির আলোতে অন্ধকার মনে হয় না। তখন বইয়ের দোকানগুলোতে বইকেনার জন্য মানুষের উচড়ে পড়া ভীড়। এই ভীড় ঠেলে হুয়াময় আহমেদের একটা বই কিনে নিয়ে আসে বন্ধু জুবায়ের কবির। তখন তার আনন্দ আর কে দেখে!
শোভন বলল,‘ বই কিনলে আর ঘুরলে কি হবে? কোন কিছু খেতে হবে না?
‘হ্যাঁ , তাই তো।’
সবাই বাংলা একাডেমির কেন্টিনে দিকে যাই। কেন্টিনে দেখি মানুষের ভীড় আর ভীড়। বসার তিল পরিমাণ কোন জায়গা নেই। কী আর করার। সবাই দাঁড়িয়ে কফি খেতে লাগলাম। কফি খেতে খেতে একজন বন্ধু বলে, ‘এমন আড্ডা আর কী হবে না!’