somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালির আবেগ, বাঙালির জয়

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডকে হারানোর পর পুরো দেশই মেতে উঠেছে বিজয়ের পরম উচ্ছ্বাসে।

অনেক আকাঙ্ক্ষিত এই জয়। প্রথম ম্যাচে ভারতের সাথে পরাজয়কে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি এদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষ। এরপরও সান্ত্বনা ছিল, ওই ম্যাচে লড়াই করেই হেরেছিল টাইগাররা। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের সাথে ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের মরণপন লড়াই। জিততেই হবে। পরাজিত মানেই প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়ের আশঙ্কা। তাছাড়া একটি ননটেস্ট প্লেয়িং দেশের কাছে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে অষ্টম স্থানে থাকা বাংলাদেশের পক্ষে মানায় না।

এই উপলব্ধি ছিল সারাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে তারা বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের দিকে। ছুটির দিন হওয়াতে শুক্রবার ঢাকা শহর এমনিতেই যানজটমুক্ত থাকে। কিন্তু আজকে দুপুর থেকে রাজধানী ঢাকার রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে। সৌভাগ্যবানরা জড়ো হয় মিরপুর স্টেডিয়ামে। আর বাকিরা অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্রিকেটপ্রেমীরা নানা প্রস্তুতি নিয়ে বসে পড়ে টিভি সেটের সামনে।

কিন্তু শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। কাঙ্ক্ষিত মানের রানের দেখা পায়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তাই স্পিনারদের দিকেই তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ফলাফলও পাওয়া যায় সেই অনুযায়ী। বল হাতে স্পিনাররা নিয়েছেন মোট ৬টি উইকেট। আর যা আশা করা হয়নি, তাই দিয়েছেন পেসার শফিউল। একাই চার উইকেট নিয়ে গুড়িয়ে দেন আয়ারল্যান্ডকে।

অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত এই জয়ে আনন্দের মাত্রাটাও ছিল সীমা-পরিসীমাহীন। আয়ারল্যান্ডের সর্বশেষ উইকেটের পতনের সাথে সাথে উল্লাসে ফেটে পড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা। বেরিয়ে আসে রাস্তায়। রাজধানী ঢাকা নিমিষেই সরব হয়ে ওঠে। সব আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু যেন হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা।

কী ছিল না সেখানে। আতশবাজি, বিজয় মিছিল, নাচ, গান। সবকিছু ছাপিয়ে গেল একটি শব্দে। অবালবৃদ্ধবনিতার আবেগের এ শব্দ। সব শান্তি যেন এ শব্দে। বাংলাদেশ। টিএসসি প্রকম্পিত হচ্ছিল ‘বাংলাদেশ’ রবে।

বিজয়ানন্দ ধরা দিয়েছিল আরো আগে। অপেক্ষা শুধু একটি ম্যজিক বলের। ৯ উইকেটের পতন হয়েছে আইরিশদের। রাত সাড়ে ন’টা। চরম উত্তেজনাকর সে মুহুর্ত। শফিউলের ম্যাজিক বলে সাজঘরে গেলেন রেনকিন। উল্লাসে মেতে উঠল জনতা। মেতে উঠল টিএসসিও। বিজয়োল্লাসে মাতোয়ারা হলো গোটা দেশ।

শুরু হলো বিজয়ের আনন্দ মিছিল। বিভিন্ন হল ও আশপাশের এলাকা থেকেও আসতে থাকল বিজয়ের মিছিল। সবার গন্তব্য টিএসসি। মুহুর্তের মধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হলো গোটা টিএসসি। তাদের বুকে-পিঠে আঁকা বাঙালির ঐতিহ্য। লাল সবুজের পতাকা। হাতের কাগুজে বাঘ যেন ধরা দিলো সত্যিকারের টাইগার হয়ে। বিজয়ের ছাপ সবার চোখে-মুখে। এ যেন বিশ্বজয়ের তৃপ্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের নাজমুস সাদাত উল্লসিত কণ্ঠে বলল, “একাত্তরের বিজয় দেখিনি। বিজয়ের আনন্দ কী তা বুঝতে পেরেছি।”

ভুভুজেলা আর আতশবাজির শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছিল ঢাকার আকাশ। মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা যায় মিরপুরের দিকে। বিজয় সারথীদের অভিনন্দন জানাতে রাস্তার দুই পাশে জড়ো হয় তারা। মিরপুর থেকে টিএসসি, পলাশী, শাহবাগ হয়ে গোটা ঢাকা যেন মিছিলের নগরী। এ মিছিল আনন্দের। বিজয়ের মিছিল। ঢোল, বাদ্য হাতে মিছিলে ছিল তরুণ-তরুণীরা। প্রিয় মাতৃভূমির এ বিজয়ে তারা উচ্ছ্বসিত। আরো ভালো খেলবে প্রিয় দেশ- এটাই চান তারা। চাঁনখারপুল থেকে আসা একাদশ শ্রেণী পড়ুয়া রুমকি চান, তার এ প্রিয় দল বিশ্বকাপ-জয়ী হোক।

টিএসসির এ মিছিলে ছিল সব শ্রেণীপেশার মানুষ। দেশের বিজয় দেখতে এসেছিল খুদে ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়ার ছেলে বিজয় । বাবার কাঁধে চড়ে। বিজয় দেখেছে সে। জয়ের শান্তির ছাপ তার মুখেও। মোতালেব মিয়া ছেলেকে কাঁধে নিয়ে বিশাল পতাকার নিচে যেতে চান। ‘বিজয়’ পতাকা চিনলেও জানে না এর নিচে কী। তাই বাবার কাছে করুণ জিজ্ঞাসা, “আববু, পতাকার নিচে কী?” মোতালেব মিয়াও দিলেন তার আবেগের জবাব।

টিএসসির মোড়ে মুড়ি-চানাচুর বিক্রি করে কিশোরগঞ্জের সোহাগ। আনন্দের ছোয়া লেগেছে তার প্রাণেও। সেও ভালবাসে প্রিয় এ ভূ-খণ্ডকে। দরিদ্র সোহাগ চানাচুর বিক্রির বাটি ও চামচ নিয়ে বাজাচ্ছে তার বাদ্য। এখানেই যেন তার পরম শান্তি।

শুক্রবারের এ ছুটির দিনে সবাই জড়ো হয়েছিল। টিএসসির বড় পর্দায় টাইগারদের বিজয় দেখতে। তামিম-কায়েসের উন্মাতাল শুরু দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল তারা। মাঝখানে ক্ষোভ। বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়। সবশেষে বিজয়। এ বিজয় টাইগারদের। বিজয় বাংলাদেশের।

রাত তখন বারোটা। ক্লান্তি নেমে এসেছে উৎসুকদের ঘাড়ে। এবার বাড়ি যাবার পালা। ঘরে ফিরতে লাগল সবাই বিজয়ানন্দে। তারা চায় দেশের এমন বিজয় ধারাবাহিক হোক। মোতালেব মিয়াও বের হলন পতাকার নিচ থেকে। চলে যাবেন আপন নীড়ে। বিশাল পতাকার নিচ থেকে বের হতে হতে পাঁচ বছর বয়সী বিজয়কে বলল, “বাবারে, আমাদের যত সুখ এ পতাকার নিচেই।”
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×