somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনা এবং ঘটনা থেকে উৎসারিত গল্প- ১: ঈদ সংখ্যা

০২ রা আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা: এই ঈদে আমি কোন ঈদ সংখ্যা কিনিনি।
গল্প:
অবশেষে ঈদ সংখ্যার প্রায় সবটাই নিয়ে আসা গেল। মানবজমিন বাকি ছিল। ওটা আজকেই আসল। বিক্রি গতবারের চেয়ে কম হলেও মোটামোটি সন্তোষজনক বলা চলে। বাংলাদেশের মানুষ ব্লগ, ফেসবুকের যুগে এখনো যে ঈদসংখ্যা কিনে এটাই আশার কথা। কিন্তু আজ সকালে হঠাৎ রুবেল নামের এক কাস্টমারের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় কেমন জানি লাগছে।

ঈদের ঠিক আগে আগে ঈদ সংখ্যা বেরুলেই আমাদের দোকানে একটা ছেলেকে দেখা যেতো। প্রতি সন্ধ্যায় এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নতুন আসা ম্যাগাজিনের খবর নিত, হাতে নিয়ে ম্যাগাজিনগুলো উল্টেপাল্টে দেখতো। কাজটা করতো সে অনেক সময় নিয়ে। প্রথমবার তো আমার কর্মচারীরা ভেবেছিল ছেলেটা বোধহয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরা বই শেষ করে যাবে। শেষ পর্যন্ত বই আর কিনবে না। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে ঈদের ঠিক আগের দিন সে মোট ৪টা ঈদ সংখ্যা একসাথে কিনে নিয়েছিল। তারপর প্রতি ঈদের সময় কোথা থেকে জানি সে ঠিক এসে হাজির হতো। বই এর জগতে সিজন্যাল কাস্টমার বলতে কিছু নেই। আমাদের দোকানে শব্দটার প্রচলন তার জন্যই ঘটেছিল। তাকে আমরা সবাই সিজন্যাল কাস্টমার বলে ডাকতাম।

ঈদের বাকি আর তিনদিন। এখনো সেই সিজন্যাল কাস্টমার আসছে না দেখে, কেন জানি না আজ সকাল থেকে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছি। কাস্টমাররা আমাদের দোকানে আসবে যাবে, তারপর আমাদের ভুলে যাবে, আমরাও তাদের ভুলে যাবো, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রুবেল আসলে আমাদের সবার এতোটা আপন হয়ে গেছে যে ঈদ আসলেই মনে মনে আমরা তার জন্য অপেক্ষা করি। কথা তেমন একটা না হলেও একদিন জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছিলাম ছেলেটা ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আমাদের এলাকার একমাত্র সরকারী কলেজে পড়াশুনা করে। কেন সে আসছে না? ঈদের আর মাত্র তিনদিন। এখানে পত্রপত্রিকার দোকান কেবল একটাই। তাই ঈদ সংখ্যা কিনতে অন্য কোন দোকনে যাবার কোন সুযোগ নেই। কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলাম। তাদের একজন বললো, বোধহয় পড়াশুনার অভ্যাস শেষ হয়ে গেছে। বড় হয়ে যাচ্ছেতো। আরেকজন বললো, হের বাপে সরকারী কলেজের টিচার। মনে লয় বাপ ট্রান্সফার হয়ে গেছেগা। যুক্তিযুক্তি কথা। আরেকজন আশংকা প্রকাশ করলো, অসুস্থ নাতো! কোন কারণ ছাড়াই এটাই আমার কাছে সবচাইতে গ্রহণযোগ্য কারণ বলে মনে হল। সাথে সাথে ঠিক করে নিলাম, ছেলেটার বাসায় গিয়ে খোঁজ নেব। সাথে দু তিনটা ঈদ সংখ্যা নেব। তাকে যদি সত্যি অসুস্থ অবস্থায় পাই, তবে একটা বই তাকে গিফট করে আসব।
ছোট্ট এলাকা আমাদের। বাসা খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না তাই। কলিং বেল চাপতেই বছর আটের একটি ছেলে বের হল। রুবেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, ভাইয়া শুয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কি অসুস্থ নাকি? বলল, হ্যা কাল রাত থেকে হঠাৎ প্রচন্ড জ্বর। কাল রাত থেকে জ্বর হলেতো তার আগে ছেলেটা আমার দোকানে যেতে পারতো। তবে দোকানে না যাবার অন্য কোন কারণ আছে। পিচ্চিটাকে পরিচয় দিয়ে বললাম, তোমার ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছি। অমাকে নিয়ে যাওয়া হলো বাড়ির একেবারে ভেতরের রুমে। এটাই বোধহয় রুবেলের রুম। আমকে দেখে সালাম দিলে বুঝলাম, রুবেল আমাকে চিনতে পেরেছে। বিছানার পাশের চেয়ারটিতে বসলাম। এটা সেটা জিজ্ঞেস করে তারপর মূল প্রসঙ্গে আসলাম।
এবার ঈদে যে ঈদসংখ্যা কিনতে গেলে না তুমি?
না এমনি।
এমনি এমনি তো জগতে কোন কাজ হয় না। নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। আমার দোকানের কেউ তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে? বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষতো, এদের বিশ্বাস নাই।
না, এমন কিছু ঘটেনি। এমনিতেই যাই না।
বুঝলাম আমাকে কারণটা বলতে চাচ্ছে না সে। তবু চষ্টা চালিয়ে গেলাম।
অন্য কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিয়েছো বুঝি?
না।
পড়ার ইচ্ছে বুঝি আর হয় না? নাকি সময় পাও না?
না সেটাও না। আসলে ঈদ সংখ্যা পড়ে কী হবে?
ঈদ সংখ্যা পড়ে কী হবে! তাইতো। এইসব গল্প কবিতা পড়ে আসলেই তো কোন কিছু হবে না কখনো। তবু তাকে বললাম, এক সময় তো পড়তে, তখনো তো কিছু হতো না।
না, আপনি যা ভাবছেন ব্যাপারটা আসলে তা না। আসলে যে বইয়ে আমার প্রিয় লেখকের লেখা নাই, সে বই পড়ে কী হবে? আমি তো কেবল তার লেখা পড়ার জন্যই ঈদসংখ্যা পড়তাম।
কে তোমার প্রিয় লেখক বলো। সবগুলো ঈদ সংখ্যা মিলে তো অনেক লেখকের লেখা ছাপানো হয়েছে। তুমি শুধু আমাকে নামটা বল, আমি খুঁজে বের করে তার লেখা আছে এমন ঈদসংখ্যা আজই তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
না, আংকেল। আপনি চাইলেও হুমায়ূন আহমেদের নতুন কোন লেখা কোথাও খুঁজে পাবেন না।
আমার সত্যি আর কিছু বলার থাকলো না।
উৎসর্গ: আমার কোনো লেখা এভাবে কখনো হুমায়ূন আহমেদকে উৎসর্গ করতে হবে এটা কখনো ভাবিনি। তিনি আমাদের মাঝে থাকবেন না, এটা কখনো মাথায় আসেনি যে! ঈদ সংখ্যা কেনার কারণ আগ্রহ পাবো না এটাও কখনো কল্পনা করিনি।
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×