somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Part-1==Genocide======[[1971]]======Genocide==Part-1

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দি সানডে টাইমস, ১৩ জুন ১৯৭১
পাঁচ মিলিয়ন লোক বাস্তুভিটা ছেড়ে কেন পালিয়ে গেছে সে মর্মান্তিক কাহিনী নিয়ে পাকিস্তান থেকে এসেছেন সানডে টাইমসের রিপোর্টার।

মার্চের শেষ থেকে পাকাসেনারা পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে চলেছে। মার্চের শেষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সংবাদ-ধামাচাপা-দেয়ার পেছনের মর্মান্তিক কাহিনী হলো এই। কলেরা আর দুর্ভিক্ষ নিয়েও ৫০ লক্ষ লোকের পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে ভারতে চলে আসার এই হলো কারণ।

সানডে টাইমসের পাকিস্তান-প্রতিনিধি অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস এই প্রথামবারের মতো নিরবতার পর্দা উন্মোচন করলেন। তিনি সেখানে পাকসেনাদের কীর্তিকলাপ দেখেছেন। তিনি পাকিস্তান ছেড়ে এসেছেন বিশ্ববাসীকে সেসব জানানোর জন্য। সেনাবাহিনী শুধু স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশ ধারণার সমর্থকদেরই হত্যা করছে না। স্বেচ্ছাকৃতভাবে খুন করা হচ্ছে হিন্দু ও বাঙালি মুসলমান সবাইকে। হিন্দুদের গুলি করে বা পিটিয়ে মারা হচ্ছে তারা কেবল হিন্দু বলেই। জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের রিপোর্টের পেছনেও রয়েছে একটি দারুণ গল্প।

মার্চের শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্তানে দুই ডিভিশন পাকসেনা গোপনে পাঠানো হয় বিদ্রোহীদের ‘খুঁজে বের করা’র জন্য। কিন্তু দু-সপ্তাহ পরে পাকিস্তান সরকার আটজন পাকিস্তানী সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানায় পূর্ব পাকিস্তানে উড়ে যাবার জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রভাবিত করে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণকে এই ধারণা দেয়াই এর উদ্দেশ্য ছিল যে, দেশের পূর্বাংশে ‘সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে’। সাতজন সাংবাদিক তাদের কথামতো কাজ করেছেন। কিন্তু তা করেননি একজন — তিনি হলেন করাচির মর্নিং নিউজ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ও সানডে টাইমসের পাকিস্তান-প্রতিনিধি অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস।

১৮ মে মঙ্গলবার তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে এসে হাজির হন লন্ডস্থ দি সানডে টাইমসের কার্যালয়ে। আমাদের জানালেন, পূর্ব বাংলা ছেড়ে ৫০ লক্ষ লোককে কেন চলে যেতে হয়েছে তার পেছনের কাহিনী। তিনি সোজাসাপ্টভাবে জানালেন এই কাহিনী। এই কাহিনী লেখার পর তার পক্ষে আর করাচি ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি জানালেন তিনি পাকিস্তানে আর ফিরে না-যাবার ব্যাপারে মনস্থির করেছেন; এজন্য তাকে তার বাড়ি, তার সম্পত্তি, এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে সম্মানীয় একজন সাংবাদিকের মর্যাদার মায়া ত্যাগ করতে হবে। তার মাত্র একটি শর্ত ছিল: পাকিস্তানে গিয়ে তার স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা যেন তার রিপোর্ট প্রকাশ না করি।

সানডে টাইমস রাজি হয় এবং তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান। দশ দিন অপেক্ষা করার পর সানডে টাইমসের এক নির্বাহীর ব্যক্তিগত ঠিকানায় একটি বৈদেশিক তারবার্তা আসে। তাতে লেখা ছিল, ‘আসার প্রস্তুতি সম্পন্ন, সোমবার জাহাজ ছাড়বে।’ দেশত্যাগ করার ব্যাপারে স্ত্রী ও সন্তানদের অনুমতি পেতে ম্যাসকারেনহাস সফল হন। তার দেশত্যাগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে তিনি কোনোরকমে একটা রাস্তা পেয়ে যান। পাকিস্তানের ভেতরে যাত্রার শেষ পর্যায়ে তিনি প্লেনে একজন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে দেখতে পান যাকে তিনি ভালোমতোই চিনতেন। এয়ারপোর্ট থেকে একটি ফোনকল তাকে গ্রেফতার করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তবে কোনো ফোনকল হয়নি এবং তিনি মঙ্গলবার লন্ডনে এসে পৌঁছান।

পূর্ব পাকিস্তানে ম্যাসকারেনহাস বিশেষ কর্তৃত্ব ও নিরপেক্ষতা সহকারে যা দেখেছেন তা লিখেছেন। তিনি গোয়ার একজন ভদ্র খ্রিস্টান, তিনি হিন্দু বা মুসলমান কোনোটাই নন। জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন পাকিস্তানে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের উদ্ভবের পর থেকেই তিনি পাকিস্তানের পাসপোর্টধারী। তখন থেকে তিনি পাকিস্তানের অনেক নেতার আস্থা অর্জন করেছেন এবং এই রিপোর্ট লিখছেন সত্যিকারের ব্যক্তিগত দুঃখবোধ থেকে।

তিনি আমাদের কাছে বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের জানান সেনাবাহিনী যে বিরাট দেশপ্রেমের কাজ করছে, ব্যাপারটা সেভাবে উপস্থাপন করতে।’ তিনি তার প্রতিবেদনের জন্য যা দেখেছেন এবং রিপোর্ট করেছেন সে-সম্পর্কে কোন সন্দেহই থাকতে পারে না । তাকে একটি রিপোর্ট লেখার অনুমতি দেয়া হয় যা সানডে টাইমসে ২ মে প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটিতে কেবল মার্চ ২৫/২৬-এর ঘটনার বিবরণ ছিল, যখন বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে এবং অবাঙালিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এমনকি দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার প্রসঙ্গ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সেন্সর করেছিল। এ-ব্যাপারটিই তার নীতিবোধকে পীড়া দিচ্ছিল। কিছুদিন পরে, তার ভাষায়, তিনি স্থির করলেন যে, “হয় যা দেখেছি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ লিখবো, নয়তো লেখাই বন্ধ করে দেবো; নইলে সততার সঙ্গে আর লেখা যাবে না।” তাই তিনি প্লেনে চেপেছেন এবং লন্ডন চলে এসেছেন।

পূর্ব বাংলা থেকে আসা শরণার্থী ও নিরপেক্ষ কূটনীতিবিদদের মধ্যে যাদের এসব ঘটনা সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা রয়েছে তাদের দ্বারা তার প্রতিবেদন আমরা বিস্তৃতভাবে যাচাই করতে সমর্থ হয়েছি।
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×