somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিবিয়ায় বাংলাদেশি

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিবিয়ায় ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি আছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ২০ হাজার জন গাদ্দাফিবিরোধী আন্দোলনের কারণে ঘোর বিপদে পড়েছেন। এর মধ্যে সরকারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া বেনগাজিতে আছেন প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি। রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ ও সংঘাতের কারণে বাংলাদেশিদের অনেকেই দেশে ফিরতে চাইছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারও প্রয়োজনে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টেলিফোনে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, লিবিয়ায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে বেনগাজি এলাকা বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সেখানে প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন। ওই এলাকায় বাংলাদেশিরা সমস্যার মধ্যে আছেন। টেলিফোনে দূতাবাসের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হলেও সেখানে কেউ যেতে পারছেন না।
লিবিয়ায় চলমান বিক্ষোভ ও সংঘাতের শিকার হওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা জানতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, তাদের জানা মতে লিবিয়ায় অন্তত ৫০ হাজার বাংলাদেশি আছেন। তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ভালো আছে। তবে প্রায় ৪০ শতাংশ শ্রমিক সংঘাতের শিকার হয়েছেন। সূত্র আরো জানায়, এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। অস্ত্র হাতে মানুষ রাস্তায় ঘুরছে। কেউ কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা নিয়ন্ত্রণ করার মতোও কেউ নেই।
এদিকে গতকাল রাতে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে জহিরুল ইসলাম টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর ভগি্নপতিকে বেনগাজি থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে দারনা সিটিতে সরকারবিরোধীরা আটকে রেখেছে। তাঁদের মারধর করা হয়েছে এবং জিনিসপত্রও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা এখন জীবন নিয়ে সুস্থভাবে দেশে ফিরতে চান। লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিরা দেশে ফেরার আগ্রহের কথা দূতাবাসকে জানাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে দূতাবাস সূত্র জানায়, অনেকেই দেশে ফিরতে চাচ্ছেন। আবার অনেকেই বলছেন, জীবিকার তাগিদে ভিটামাটি বিক্রি করে লিবিয়ায় এসেছেন। অনেকের বেতনও বকেয়া পড়ে আছে। দেশে ফিরে কী করবেন?
বাংলাদেশ সূত্র আরো জানায়, দূতাবাস কর্মকর্তারা লিবিয়া সরকারের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতে পারছেন না। বেনগাজির মতো সরকারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে কেউ ঢুকতে পারছে না। এ কারণেই অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জিম্মি মনে করছেন। তবে জিম্মি হওয়ার মতো কোনো খবর গতকালও দূতাবাস শোনেনি।
লিবিয়া দূতাবাস সূত্র জানায়, লিবিয়ায় খাদ্য ও পানি সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সর্বত্র থমথমে অবস্থা। ৩০-৪০ বছর ধরে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ত্রিপোলি শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশ কম। বিদেশিদের জন্য চলাচল করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও অন্য কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিসে আসছেন এবং জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খুলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরকারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা বা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাস কী উদ্যোগ নিচ্ছে জানতে চাইলে দূতাবাস সূত্র জানায়, লিবিয়ায় অনেকটা যুদ্ধাবস্থা চলছে। এ ছাড়া এখানে একটি শহর থেকে আরেকটি শহর বেশ কয়েক শ মাইল দূরে। সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সব এলাকায় যেতে পারেন। কিন্তু লিবিয়ায় জাতিসংঘ কার্যালয় তেমন শক্তিশালী নয়। তাই দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, তারা যেন জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। বাংলাদেশ দূতাবাস লিবিয়ায় অন্য দেশগুলোর দূতাবাসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সরকার সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছে। বাংলাদেশিদের কেউ হতাহত বা জিম্মি হয়েছেন এমন কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস লিবিয়া পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকেই সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সম্ভাবনার কথাই সরকার ভাবছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ লিবিয়া পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দেশটিতে চলমান সংঘাতে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন। সব পক্ষ সংযম প্রদর্শন করলে চলমান সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পেঁৗছা সম্ভব হবে বলে বাংলাদেশ মনে করে।
পরে পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ সরকার লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনবে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ হচ্ছে। ফিরিয়ে আনতে হলে বাংলাদেশিদের তালিকাভুক্ত করতে হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকায় সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, 'লিবিয়ায় বিক্ষোভকারীদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার বা দূতাবাসের কোনো যোগাযোগ হয়নি। জিম্মিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।'
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল ও দুপুরে দূতাবাসের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ হয়েছে। অন্যদিকে দূতাবাস টেলিফোনে বেনগাজিসহ লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যথাসম্ভব যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যোগাযোগও হচ্ছে। দারনা বা বেনগাজি থেকে অনেকে টেলিফোন করে তাঁদের জিম্মি করার কথা স্বজনদের বা গণমাধ্যমকে জানাচ্ছেন। দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, তারা নিজেদের জিম্মি মনে করছে। কারণ সরকারবিরোধীরা তাদের ওই এলাকা থেকে বের হতে দিচ্ছে না।
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় জনশক্তি প্রেরণে কোনো প্রভাব পড়ছে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×