somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভগবানের চোখ

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’
মানে কি?
মানে কিছুই না। তোমায় ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় লেখা আছে কথাটা।
ও তাই বল। তুমি না.....আসো তো দেখি কাছে আসো।
আয়নার গতরজুরে কতগুলো তিল.... লাল, কালো.. নীল, হলুদ, এই যে বড় খয়েরি তিলটা.... আল্লাহ কি সুন্দর, যেন ভগবানের চোঁখ। এই তো দ্বিধায় পড়ে গেলাম। ভগবানের তো অভাব নেই! না এইটা আল্লাহর চোখের মতন। প্রশ্ন করতে পারো তুমি কি আল্লাহর চোখ দেখেছো? আমি কেন ,পৃথিবীর কেউই দেখেনি। অথচ এই খয়েরি তিলটাকে সৃষ্টিকর্তার চোখের সঙ্গে তুলনা করতেই পারি।
তিল কোথায় দেখলে এগুলো তো আমার টিপ।
তোমার কাছে কি জলরঙের টিপ আছে অথবা মাছিরাঙা?
সে দিয়ে তুমি কি করবে?
আমার দু ভুরুর মাঝখানে ঝোলাবো।
আচ্ছা রাখ তো এসব.........এবার আসো কাছে আসো। লী বাবুটির মত চুপটি করে বস। তোমাকে দেখবো। তোমার ঠোটের তিলটা, হ্যাঁ এই তো সেই দুষ্টু তিলটা। কত জ্বালাতন করেছে আমাকে। তোমার তিলটা আমাকে দিবে?
সে না হয় নিলে কন্যা। কিন্তু ঠোট যে আমার বিধবা হবে!
আমার বুকে একটা তিল আছে সেটা তুমি নিতো পারো। তোমার ঠোটের তিলটা আমার বুকে বসিয়ে দাও। আর তোমার ঠোটের ভাজে আমার তিলটাকে জায়গা করে দাও। তাইলেই তো সব চুকে গেল।
বেশ ভালো বলেছো তো। কিন্তু...
আবার কিন্তু
এখনই আমাকে অফিসে যেতে হবে। বার বার ফোন আসছে। অফিস আমাকে ছাড়ে না।
আমিও ছাড়বো না তোমাকে।
হ্যাঁ, ধরে রাখ, ঠিক তোমার বাথরুমের দেয়াল ঘড়িটার মত। মিনিট, সেকেন্ড আর ঘন্টার কাটা তিনজনে মিলে ১২ সংখ্যাটাকে এমনভাবে ধরেছে। এক চুলও নড়াচড়া করতে পারছে না বেচারা! যেন সময়টাকে গলা টিপে ধরেছে।
কত কিছুর দিকে চোখ যায় তোমার।
এ যে ভগবানের দেওয়া চোখ!
প্রতিদিনই মনে করি ঘড়ির বেটারি বদলাবো। আর প্রতিদিনই ভুলে যাই। এখন আমি সব কিছু ভুলে যেতে চাই। হারাতে চাই। ডুবতে চাই। ডোবাতে চাই। ডুবসাঁতার দেব। আসো আসো...
বড্ড অস্থির তুমি।
তুমিই আমাকে অস্থির বানিয়েছো। আবার দাড়ালে কেন? এদিকে আসো।
কোরআনশরিফদানিটা তো সুন্দর। কোরআন শরীরফ রাখার এমন পাত্র কখনো দেখিনি। কি পবিত্র রঙ। নকশাটাও সুন্দর। কে পড়ে এটা ?
আমিই পড়ি, দেখ তোমার এসব কথা এখন একদমই ভালো লাগছে না।
তোমার বারান্দায় আংশিক শহরের দেখা মিলে। সারাণ গাড়ীর হর্ণ আর গর্জনে বিরক্ত হও না।
সেও অনেক মধুর। তোমার এসব আজাইরা প্যাচাল থেকে। ঠিক এখানটায় বস। দেখ, দেখ এই যে দেখ আমার বুকের তিলটা। নিবে তুমি? কেমন ছট ফট করছে তিলটা তোমার কাছে যাওয়ার জন্য।
তোমার ব্রাটা অনেক তাগরা। ইস কেন যে দুইটা চাঁদ হইলো না।
তাহলে কি করতে?
দুইটা চাঁদ দিয়া তোমারে একটা ব্রা বানিয়ে দিতাম। তাতে কোরআনশরিফদানির মত নকশা আকাঁ থাকতো।
তওবা পড় তওবা পড়। কি সব কথা বলছো, দাড়াও কোরআনশরিফটা ঢেকে দিয়ে আসি।
মনের চোখ ঢাকবা কি দিয়া? সে যে ভগবানের চোখের চেয়েও ভয়ংকর।

তোমার বউ তোমার সঙ্গে সংসার করছে কীভাবে?
যেভাবে তুমি মিস্টার কাশেমের সঙ্গে সংসার করছো।
এত প্যাচাইলা মানুষ তুমি। এসব করতেই আমার বাসায় এসেছো? তোমার কথার কচকচানিতে কেবল সময় নষ্ট।
তবে তাই হোক তুমি যা চাচ্ছো।
এই তো আমার লীসোনা।
তোমার খাটটা বেশ বেরসিক। কেমন বিশ্রি শব্দ করছে। তোমার পিঠেও দেখছি একটি লাল তিল।
হ্যাঁ, ওটাও তোমার জন্য।
আর নাভির ঠিক গোড়ায় যে পিচ্চি তিলটা?
ওটাও দিয়ে দিলাম তোমাকে। নিয়ে নাও, সব তিলগুলো আজ নিয়ে নাও।
তোমার গোলাপি প্যান্টিটা ভয়ংকর সুন্দর। আমাকে একটা কিনে দিবে?
তুমি তা দিয়ে কি করবে? বউকে দিবে বুঝি?
কেন আমি পরবো। তুমি হাসছো। হাসো। কিনে না দিলে তোমারটাই চুরি করবো।
নিয়ে নাও, দিলাম তোমাকে। সব নিয়ে নাও, সব, সব,সব................................

লেখাটা কম্পোজ করতে করতে শরীরটা কেমন তেতে ওঠলো ইলিয়াসের। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা। শীতের দিনেও শরীর ঘামছে। হঠাৎ করেই বউয়ের কথা মনে পরে গেল তার। বছর চারেক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে শীলাকে বিয়ে করে ইলিয়াস। নীলেেত একটা কম্পিউটার কম্পোজ দোকানে চাকরি নেয়। বউটা সারাদিন বাসায় একা। কত কবিতা, গল্প, আর নাটকের স্ক্রিপ্ট প্রতিদিন কম্পোজ করে ইলিয়াস। এমন তো কোন দিন হয়নি। গল্পের সঙ্গে সব মিলে যাচ্ছে। বাথরুমের ঘড়ি,ড্রেসিং টেবিলের টিপ, গোলাপি প্যান্টি সব সব কিছু। ব্যাটা খিচ্চু আসলে ধরতে হবে। খিচ্চু হায়াত এসব জানলো কীভাবে। নানা প্রশ্ন সিলিং ফ্যানের মত ঘুরতে থাকে ইলিয়াসের মাথায়। গাড়ীর হর্ন, মানুষের চিৎকার-চেচামেচি। কোন কিছুই কানে আসছে না। গল্পের সংলাপগুলো মাছির মত ভনভন করছে তার চারপাশে। না এখনই বাসায় যেতে হবে, বলেই চুপ করে দোকান থেকে বের হয়ে পড়ে ইলিয়াস।

নানারকম জ্বালতনে থাকতে হয় খিচ্চু হায়াতকে। গল্প লিখেই চলছে। টাকা খরচ করে কম্পোজ করে সেটা আবার চার পাঁচকপি বিভিন্ন পত্রিকায় ডাক যোগে না পাঠানো পর্যন্ত শান্তি নেই তার। লেখা ছাপা হোক বা না হোক এ নিয়ে চিন্তা নেই। এভাবে আর কতদিন। খিচ্চু জানে জীবন জীবীকার সন্ধ্যানে নামলে সাহিত্যকর্ম তাকে দিয়ে আর হবে না। নীল তে ট্রাফিক সিগনালে বাসটা এসে দাড়ায়। খিচ্চুর ভাবনার রাজ্যে ইন্টারবেল বাজে। দীর্ঘ জ্যাম। মানুষের ভির ঠেলে বাইম মাছের মত কোন রকম বের হয়ে আসে খিচ্চু। ফুতফাতের সিগারেটের দোকান থেকে একটা ক্যাপেস্টেন সিগারেট ধরায়। মাস কয়েক হল ক্যাপেস্টেন সিগারেট ধরেছে খিচ্চু। সিগারেট খাওয়া ছাড়তে চাইছে কিন্তু পারছে না। তাই ক্যাপেস্টেন ব্রান্ডের সিগারেট ধরেছে সে। তার যুক্তি এ সিগারেট সব দোকানে পাওয়া যায় না। তাই চাইলেও খেতে পারবে না। ফলে কম খাওয়া হবে। মীম কমপিটার কম্পোজ দোকানের সামনে সিগারেটের শেষ টান দেয় খিচ্চু। সিগারেটটা পা দিয়ে ডলে বলে, কি মিয়া ইলিয়াস, বালানি। ইলিয়াস কোন উত্তর দেয় না। মনিটরে চোখ রেখে আপন মনে কাজ করে যায়। পাশে একটা টুল টেনে বসে পড়ে খিচ্চু। ইলিয়াসের ঘারে হাত রেখে, মন বেজার নাকি মিয়া। লেখাটা শেষ হইছে।
না হয় নাই। অর্ধেক কইরা রাখছি।
কওকি মিয়া! এক সপ্তাহ আগে দিয়া গেলাম। ছোট্ট একটা লেখা। এখনও শেষ হয় নাই।
লেখাটা নিয়া আপনার সাথে আলাপ আছে।
কি আলাপ? হাতের লেখা বুঝো নাই?
তা না, অন্য কথা
বল কি কথা?
একটু বাইরে যেতে চাই।
রহস্যজনক ঘটনা। চল বাইরে যাই?
খিচ্চু আর কাসেম নীলখেতের ফুতফাট ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাটতে থাকে। এফ রহমান হল পর্যন্ত চলে আসে। কোন কথা বলে না কাসেম। এর মধ্যে খিচ্চু আরেকটা ক্যাপেস্টেন সিগারেট জোগর করে। সিগারেটের টান দিতে দিতে, কই নিয়া যাবা মিয়া। তোমার মতিগতি বুঝতাছি না।
আপনি কি আমার বউ শীলারে চিনেন?
সে সুযোগ তো করে দেওনি কখনো। কি হয়েছে তোমার বউয়ের?
আপনার গল্পের সঙ্গে আমার বউ, আমার ঘরের বর্নণার মিল আছে।
কথাটা শুনে কিছুন হাসে খিচ্চু। সিগারেটে আরেকটা টান দেয়। হাসাইলা মিয়া। মিল থাকতেই পারে।
তাই বলে আমার বাথরুমের ঘড়ি, ড্রেসিং টেবিলের টিপ, কোরআনশরিফ, এবং আমার বউয়ের গোলাপি প্যান্টি পর্যন্ত।
দেখ প্রায় মুসলমানের ঘরে কোরআনশরিফ থাকে, বউরা টিপ ব্যাবহার করে ড্রের্সি টেবিলেই রাখে। বাথরুমে ঘড়ি থাকাটা অস্বাভাকি কিছু না। আমার বউ তো মিয়া রান্নাঘরের দেয়ালেও টিপ রাখে। তুমি কি করে ভাবলে তোমার বউকে নিয়েই এ গল্প লিখেছি। সেটা তো আমার গল্পও হতে পারে।
আমার বউ সারাদিন বাসায় একা থাকে। এ সুযোগটা অনেকেই নিতে পারে। আপনি সত্যিকরে বলেন, এ গল্প আমার বউয়ের গল্প। হাত জোর করছি সত্যটা বলেন। গত কয়েকদিন ধরে এ বিষয় নিয়ে আমার ঘরের শান্তি হারাম হয়ে গেছে। আপনি বুঝতে পারছেন না, আমার মানসিক অবস্থা। আপনি মিথ্যা বলছেন।
লেখকের কাজই মিথ্যা আর সত্যের ব্লেন্ড করে গল্প জš§ দেওয়া।
আপনি একটা বাঝে লোক। ফালতু, বস্তাপচা গল্প লেখেন। আর কোন দিন আমার সামনে আসবেন না। ভালোমানুষি চেহারে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। আসলে আপনি একটা অমানুষ।
পারলে কেদে ফেলে ইলিয়াস। কিন্তু চোখে তার জলের অভাব। মন ভর্তি রাগ। হন হনিয়ে হাটতে থাকে। খিচ্চু কিছু সময়ের জন্য পাথর হয়ে যায়। ইলিয়াসকে পেছন থেকে ডাক দেয় খিচ্চু, ওই মিয়া দাড়াও। আমার লেখাটা তো দিয়া যাও।
ইলিয়াস মুখভর্তি বিরক্তি নিয়ে দাড়ায়। খিচ্চু সামনে আসে। লেখাটা খিচ্চুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার হাটতে থাকে ইলিয়াস। লেখাটা হাতে নিয়ে খিচ্চু চিৎকার করে বলে, শোন মিয়া, গল্পটা আমার না। এটা সময়ের গল্প। বউকে ভালোবাসতে শেখ। ইলিয়াস খানিক দাড়ায়। ঘাড় ফিরিয়ে খিচ্চুর দিকে এক পলক তাকায়, ফের হন হনিয়ে হাটতে থাকে।


তারিখ : ১২/২/২০১১


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×