কুইন মেরির কেবিন এবং করিডোরে যাত্রীরা প্রেতাত্দার অবয়ব দেখার পাশাপাশি রহস্যময় শব্দ শুনতে পায়। অনেকেই এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন; কিন্তু কেউই সেটা স্পষ্ট ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
কুইন মেরির যাত্রী সার্ভার ক্যারল নামে এক ব্যক্তি মুখোমুখি হয়েছিলেন এমন অভিজ্ঞতার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমার বয়স যখন চৌদ্দ তখন আমার এই অদ্ভূত যানটি দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। জাহাজটির যাত্রী হয়ে যখন আমি কেবিনের কাছাকাছি গিয়েছিলাম তখন দেখেছিলাম এক জন নারী সেখানে বসেছিল। আমি তার পোশাক দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার ছিল গাঢ় কালো চুল। তার কোনো ম্যাকাপ ছিল না। তাকে দেখতে খানিকটা ফ্যাকাশে মনে হচ্ছিল। আমি কখনো তাকে নড়তে দেখেনি। আমি যখন তার খুব কাছে এগিয়ে গেলাম, তখনি ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। সেই নারীর কাছাকাছি এগুতেই তিনি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। আমি হতভম্ব হয়ে চর্তুদিকে তাকে খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।'
জাহাজটির সাবেক গাইড ন্যান্সি আনি্নও এরকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন- 'একদিন আমি যখন জাহাজটির সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম তখন আমি ষাট-সত্তর বছর বয়সী এক সাদা চামড়ার মহিলাকে দেখতে পেয়েছিলাম। তাকে একা একা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম। কৌতুহলবশত সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন তিনি। এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।'
১৯৩৬ সাল থেকে এই বিলাস বহুল জাহাজটি সমুদ্রে যাতায়াত শুরু করে। দ্রুতগামী কুইন মেরি মাত্র পাঁচ দিনে বিশাল আটলান্টিক পাড়ি দিতে সক্ষম। জন স্মিথ নামে এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জাহাজটির মধ্যে প্রথম কাজ করেছিলেন। সেখানে তিনি প্রায় দুই মাস যাবৎ কাজ করেছিলেন। জন প্রায়ই জাহাজের সম্মুখ ভাগে এক ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পেতেন। নিজের দুঃসহ স্মৃতির কথা বর্ণনা করে জন বলেন-'আমি যখন ভয়ঙ্কর শব্দ শুনতাম তখন আমার দু'চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরতে থাকতো। ভীষণ ভয় করতো। সেটা যে কী বিভীষিকাময় মুহূর্ত ছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।'
রহস্যময় কুইন মেরি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছিল এবং একসময় এটিকে সৈন্যদের জাহাজে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ কিউরা কেরার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একবার কুইন মেরির তিন শতাধিক যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছিল। ধারনা করা হয় এই দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রেতাত্দাই জাহাজটিতে ঘুরে বেড়ায়। জাহাজটির সুপারভাইজার কেথি বলেন, 'আমরা যখন জাহাজটির অগ্রভাগে গিয়েছিলাম তখন আমরা এক ধরনের অদ্ভুত হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। পরে এক তরুণীকে দেখা গিয়েছে ওখানে খেলা করছে। অনবরত হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটি বদ্ধ রুমে সে চলাচল করছে।' যতই বিচিত্রময় এবং রহস্যময় হোক না কেন, যদি তুমি বিশ্বাসী হও কুইন মেরি হচ্ছে সমুদ্র যাত্রার জন্য এক আরামদায়ক জলযান। যাই হোক কুইন মেরির রহস্য আজও অপ্রকাশিতই রয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:২১