somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেইখা লন বাইচ্ছ্যা লন, ভিসা ফরম, ভিসা ফরম

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মন টন খুবই খারাপ। কেনি বা হবে না। সেই কবে থেকে ও এস ডি হয়ে বসে আছি। এদিকে দেশে খবরের তো কোন অভাব নেই। আমাদের পত্রিকার বাকি সব সাংবাদিকের দম ফেলার সময় নেই। একবার এইদিকে আরেকবার ওইদিকে দৌড়াচ্ছে। আর দৌড়াবেই না কেন? ওয়াহিদ ভাই (পত্রিকার মালিক) তো বলেই দিয়েছেন, সেই রকম খবরের জন্য অতিরিক্ত বোনাস দেবেন।

আর এই সময়ে বোনাস অর্জন তো দুরের কথা, ঘরে বসে মাছি তাড়াই। এই সময় আমাদের বার্তা সম্পাদকের ফোন এলো।

" আরে বাইচ্যু ভাই, আন্নের তো কপাল খুলি গেলো ! "

বলে কি ব্যাটা? তার মানে আমি আবার রেগুলার ডিউটিতে ফিরে যাচ্ছি?

"খুলে বলেন ভাই, কি করে কপাল খুললো।"

"আরে জলদি অফিসে ছলি আসেন। খুলি কমু নে সব কতা।"

অফিসে চলে আসেন বলেই তো খালাস ! আমি যাই কি করে? যা দিন কাল, হয় শিবিরের হাতে নাইলে পুলিশের হাতে প্রাণটা যায় যায় অবস্থা চারিদিকে। সাংবাদিকদের কপালই খারাপ। সবার হাতেই প্যাদানি খেতে হয়।

কিন্তু ও এস ডি থাকার চেয়ে অফিসে যাওয়াই শ্রেয়। তাই পৈতৃক প্রাণটা হাতে নিয়েই বের হলাম।

ঢাকা শহরে থম থম অবস্থা ! তাও নিতান্ত পেটের দায়ে অনেকেই বেড়িয়েছেন। পুলিশ র‍্যাব তেমন দেখিনি। পিকেটার বা হরতাল বিরোধীদের টিকিটাও দেখা যায়নি।

যাই হোক, রিক্সায় অফিসে পৌছালাম।

"হুনেন বাইচ্যু ভাই। আন্নেরে মতিঝিল যাইতে হইবো।"

হম্মম্মম মতিঝিল। নিশ্চয় ওখানে বিশাল কিছু। কৃতজ্ঞতায় তাকে ধন্যবাদ দেবার আগেই বার্তা সম্পাদক মুখ খুললেন।

"বাংলাদেশ ব্যাংকের লগ দি, বুইজলেননি, যে চিপা গলি আছে, তার মইধ্যে আর তালতো ভাই, দুকান দিছে। বুইজলেননি? হেতে বিশাল বিজনেসম্যান। আন্নে হের একটা ইন্টারভিউ করি আনবেন।"

ব্যাটা বলে কি? এত কিছু থাকতে, এই ঢামাঢোল এর মধ্যে তার তালতো ভাইয়ের ইন্টারভিউ করতে হবে?

ঠিকানা পকেটে ভরে রওয়ানা দিলাম। আবার সেই নিরাপতার শংকা।

বিশাল বিজনেসম্যানই বটে ! চারটা বাশের খুটি দেয়া সামিয়ানা টাঙ্গানো টং ঘর। সস্তা টেবিল ক্লথে ঢাকা একটা টেবিল। ওপাশে একজনই। বর্ণনা শুনে বুঝেই ফেললাম ইনিই সেই তালতো ভাই। তবে দোকানের নাম শুনে বেশ কৌতুহল হলো


ভিসা ফর্ম সেন্টার। এই খানে সব দেশের ভিসা ফর্ম সুলভে পাওয়া যায়।

এতদিন জানতাম বৃটিশরা বেনিয়ার জাত। সেই রকম মেধাবি যে আমাদের মধ্যেও বিদ্যমান কে জানতো। দেশে সাধারণ মানুষ যেখানে কায়মন বাক্যে শান্তির প্রার্থনায় রত, তখন ইনি দেশ থেকে লোক ভাগানোর উস্কানি দিচ্ছে !

বেশ চিকন গলাতেই মাঝে মাঝেই "শ্লোগান" দিচ্ছেন দেইখা লন বাইচ্ছ্যা লন ভসা ফরম, ভিসা ফরম।

আমাকে দেখেই উনি খুশি হলেন।

"আরে বাইজান, আই পড়েন। খালি কই দ্যান কোন দ্যাশের ফরম লাগবো। একদম হস্তা দাম। টাইম থাকতেই ফরম লন ভিসা লাগান।"

নিজের পরিচয় দিলাম। খুব অখুশি হলেন না। এই ডামাডলে এই চিপায় কে আসবে? কথা বলারও তো লোক লাগে।

"আরে ওই মুশাররফ, জলদি চা আর হুরি লই আই।"

"আচ্ছা আপনি এতো ব্যাবসা থাকতে এই ব্যাবসায় নামলেন কেন?"

"আরে বাইজান, এই যে এত্ত হিডাহিডি শুরু হই গ্যাছে। এক দল তো জিত্তই নাকি? যারা হারি যাইবো, হেগো হিডের ছামড়া রাইতোনি? তো বিদেশ পলাই যাইতে হইবো ন? আর বিদেশ যাইতে হইলে ভিসা লাইগবো। আর ভিসার লাই ফরম লাগবো।"

অকাট্য যুক্তি। ফর্ম ছাড়া ভিসা লাগবে কি করে?

"তো কোন কোন দেশের ফরম আছে?"

"আর কাছে খালি হাকিস্থানের ছাড়া আর সব দ্যাশের ফরম আছে।"

"পাকিস্থানের ফর্ম নাই কেন?"

"আরে কি কমু বাইজান। শাহাবাগের আন্দোলনের ফরেই বেবাক ফর্ম বিক্রি হই গেছে গই।"

"ওহ আচ্ছা। আপনার ফর্ম এর দাম কি রকম?"

" এই ধরেন গিয়া, ইন্ডিয়ার ফর্ম হইলো ১ লাখ টিয়া। সিরিয়ার ফর্ম হইলো ১০০ টাকা। আর বার্মার ফরম হইলো ৫০ টিয়া"

"বলেন কি? ইন্ডীয়ার ভিসার এত দাম? কেন?"

"আরে আন্নে কি হাগল নি কুন? এই হিডাহিডির মইধ্যে যদি আওয়ামি লিগ হারি যায়, তাইলে ব্যাবাক ন্যাতা হ্যাতা বিবি বাচ্চা লই, খ্যাতা বালিশ লই বর্ডারে দৌড় লাগাইবো । আর বর্ডার পার হইলেই তো খানা দানা, থাকন সব ফ্রি। তো হেতিরা এত সুখ কইরবো, তো দাম দিবো না?"

হুম। তাও তো কথা।

"আচ্ছা জার্মানির ফর্ম এর দাম কেমন?"

আমার প্রশ্ন শুনে তিনি প্রবল সন্দেহে আমার দিকে তাকালেন।

"আন্নে কি ব্লগার নি কুনো? আন্নে কি আল্লা খোদা লই তামশা করেননি?"

" নাহ তো। আর ব্লগার আল্লাহ খোদা নিয়ে তামাশা, এর সাথে জার্মানির কি সম্পর্ক?"

"আন্নে কিয়ের সাংবাদিক হইছেন? কুনো খবরও তো রাখেন্না। আরেহ জার্মান সরকার কই দিছে। ইসলাম রে গাইল দিলেই জার্মানির ভিসা ফিরি। একজন তো শুইয়া বইসায় পাইয়া গেছে। বাকি আট দশ ও লাইনে আছে।"

কি জানি হবে হয়তো। দোকানের ফর্ম গুলিতে চোখ বুলালাম। মাশাল্লাহ। গাম্বিয়ার ভিসা ফর্ম ও আছে। কয়েকটা ছবিও তুললাম। অফিসের ফোটোগ্রাফাররাও সাংঘাতিক ব্যাস্ত। তাই আমাকে জুতা পালিশ থেকে চন্ডি পাঠ সবই করতে হচ্ছে।

"আচ্ছা, আপনার সাথে আলাপ করে অনেক খুশি হলাম। আমি রিপোর্টটা বানিয়ে দেবো আজকেই। কালকে পেপারে আসবে যদি আপনার তালতো ভাই চান আর কি ! "

"আন্নে কস্ট করি রিস্ক লই আইছেন, অনেক খুশি হইছি বাইজান। আন্নের ফরম দরকার হইলে খবর দিইয়েন। সস্তায় ছাড়ি দিমু আন্নের লাই।"


এই সময় মোশারফ চা আর পুরি নিয়ে হাজির। এই দেখে ভদ্রলোক চরম রাগ করলেন।

"গোলামের পুত গোলাম। তুর এত্তক্ষনে আওনের সময় হইলো। এই বাইজান চলি গেলে, হের কাছে আর মান সম্মান থাইকতোনি?"

গরম চা পুরির লোভে না বসলেই মনে হয় ভালো হতো। পুরি শেষ করে মাত্র চায়ের চুমুক দেবো। এর মধ্যেই দেখি গলি এক পাশ থেকে পিকেটার বের হচ্ছে। শরীরের ভাষা দেখেই বুঝতে পারছি, সামনে যাকেই পাবে ছাতু বানাবে।

ভাগ্য দুর্ভোগ লেখা থাকলে, খন্ডাবে কে? ভাবছিলাম ওরা আসার আগেই গলির অন্য প্রান্ত থেকে বের হয়ে যাবো। কিসে কি? সেখান থেকে দেখি পুরা ব্যাটল গিয়ারে পুলিশ আসছে। আজ খবরই আছে।

পিকেটারদের দলের প্রথম সারির কয়েকজন সামনে আসতেই শুধু বলেছি ভাই, আমি সাংবাদিক। আর কথা নেই, শুরু হয়ে গেলো আমার উপর।

এই দেখে অন্য প্রান্তের পুলিশদের গতি বেড়ে গেলো। তাদের মুখে শুনি ধর ধর রাজাকার ধর বুলি।

ওদের তাড়া খেয়ে পিকেটাররা তো পালালো। ততক্ষণে আমার যা হবার হয়ে গিয়েছে। ভাবছিলাম পুলিশ হয়তো চলে যাবে। কিসের কি? দেখলাম ওরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওই দোকানের মালিককে ধরে পিটাচ্ছে।

"হালার পো হালা। দোকান দিয়া ভেক ধরছোস? শালা রাজাকার । তোরে আইজকা ক্রস ফায়ারেই দিমু।"

রাজাকার? ওহ ভদ্রলোকের মুখে দাড়ি, পরণে পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি দেখে পুলিশ ধরেই নিয়েছে ইনি জামাতি। পিটানি খেয়ে আমার তো মুখের ভাষা পর্যন্ত শেষ। হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছাতে পারবো কিনা, সেটাও চরম সন্দেহ। আর এই ভদ্রলোকের কি হবে জানি না। তবে ওই মোশারফ ছোড়াটা বেঈমান বটে ! মালিককে এভাবে ছেড়ে পিকেটারদের সাথে মিশে হাওয়া হয়ে গেলো?
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×