somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা দিবসের উপর লেখা সাইন্স ফিকশন- লিখিত ভাষা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছর ২১ এ ফেব্রুয়ারি ভার্সিটি ম্যাগাজিনের জন্য লিখলাম এ সাইন্স ফিকশনটি। আমি জমা দিয়ে আসলাম। প্রকাশ হয়েছে কিনা তার জন্য কোন খবর নি নাই। প্রায় ৪-৫ মাস পরে আমি জানতে পারলাম আমার গল্পটি ছাপা হয়েছে। তাও এক মজার কাহিনী। অন্য এক দিন শেয়ার করব। আজ গল্পটি পড়ুন। ভাষা দিবসের জন্য লিখা আমার সাইন্স ফিকশনঃ

লিখিত ভাষা

?জাকির!



অমনোযোগী ছাত্র হিসেবে বিকির সুনাম রয়েছে পুরো বিশ্ববিদ্যাল্য। সারাদিন গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। তাকে কেউই চটায় না। সবাই যানে তাকে চটালে কপালে খারাপি আছে। তাই আশে পাশেও কেউ থাকে না।
ক্লাসে কোন শিক্ষকের প্রয়োজন হয় না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধিতিতে পাঠ দান চলে। সময় মত ক্লাসে এসে সবাই বসে। তার পর একটা মেশিন এসে সবার মাথায় ওয়েব বিকিরবনের মাধ্যমে নিউরনকে উদ্দীপ্ত করে তথ্য প্রবেশ করায়। শুধুমাত্র ল্যাবরেটরি ক্লাসে দুএক বার শিক্ষক আসেন কোন বিশেষ প্রয়োজনে।
তেমনি আজকে একজন শিক্ষক এসেছেন বিকিদের ক্লাসে। সমস্যা বিকিকে নিয়েই। তার মাথায় মেশিনের সাহায্যে তথ্য প্রবেশ করানো হলেও ল্যাব ক্লাসে এসে সব গোল মাল দেখা সেয়। ল্যাবরেটরি ক্লাসে সে কিছুই পারেনা। তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা যায় যে তার মস্তিষ্কে ঐ দিনের পাঠ সম্পর্কে কোন কিছুই নেই। এ রকম সমস্যা শুধু বিকিকে নিয়েই নয়। তাদের ক্লাসে এ রকম সমস্যা আরো কয়েক জনেরই আছে। তবে তাদের সমস্যা বিকির মত এত প্রকট নয়।
বিকির মস্তিষ্কে সব কিছুই ঠিক আছে। সব কিছুই স্বাভাবিক, তারপরও কেন সে ক্লাসের পাঠ মনে ধরে রাখতে পারে না। সে নিয়ে শিক্ষকেরা অনেক গবেষণা করেছে। ফলাফল শূন্য।
তার অমনোযোগিতার কারণে অনেক বকা ঝকা খেতে হয়। মারের প্রচলন থাকলে তা থেকেও রেহাই পেত না। এ সব সমস্যার কারবে সে এখন বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে প্রায়। তাই সে ঘরে বসে থাকে সারাদিন। যখন বসে থেকে বিরক্ত হয়ে যায় তখন সে পুরাতন ইতিহাস জেনে সময় কাটায় । ইতিহাস জানতে তার খুব ভালো লাগে। সে খুব আগ্রহ সহকারে এগুলো শোনে। এ সব তথ্য জানাটায় ও মেশিন নির্বর। মানুষেরা সব কিছু মেশিনের উপর ছেড়ে দিয়েছে। এ দিক টা খুব খারাপ। উপায় না দেখে তার ও এ পথ অনুসরণ করতে হয়। সে তার রোবটটিকে তথ্যকেন্দের সাথে যুক্ত করে ৩০৫০ সালের বিখ্যাত এক জন ব্যাক্তির নাম বলতে।
রোবটি বলল ৩৫০ সালের বিখ্যাত একজন ব্যাক্তির নাম- এ. রহমান। ঘুম যাওয়ার জন্য সে বিখ্যাত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৩ ঘণ্টাই সে ঘুম গিয়ে কাটাত।
তার এ সম্পর্কে আর জানতে ইচ্ছে করছে না। তাই সে সব চেয়ে প্রাচীন টাওয়ারের নাম বলতে বলল।
রোবট বলল সবচেয়ে প্রাচীন টাওয়ারের নাম এ.আর. টাওয়ার। এটি সবচেয়ে প্রাচীন টাওয়ার যার সঠিক নির্মাণ তারিখ জানা নেই।
বিকির এ সম্পর্কেও আর জানতে ইচ্ছে করছে না। সে রোবটটি কে বলল ৩০ শতকের সবচেয়ে হতাশা জনক সংবাদ কি?
রোবট বলল, ৩০ শতকের সবচেয়ে হতাশা জনক ঘটনা হচ্ছে সর্বশেষ লিখিত ভাষা জানা ব্যাক্তির মৃত্যু। বিকির কৌতূহল হল এ বিষয় সে রোবটটিকে বলল লিখিত ভাষা কি তাকে জানাতে।
রোবট বলল লিখিত ভাষ এমন একটি ভাষা যার সাহায্যে মানুষ হাতে এক প্রক্রিয়া লিখত, পড়া লেখা করত। বিকি উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করল কি, এটি দিয়ে পড়া এ যেত? রোবট বলল হ্যাঁ এ লিখিত ভাষা দিয়ে পড়া যেত। লেখা যেত এমন কি অন্য জনকে ও শিক্ষা দেওয়া যেত। আগে ক্লাসে শিক্ষক নিয়মিত যেত এবং এ লিখিত ভাষা দিয়ে লেখা বই ছিল যা দিয়ে ছাত্রদের-ছাত্রীদের পড়ানো হত।
বিকি জিজ্ঞেস করল বই কি? রোবট বলল বই হচ্ছে একটি বস্তু, এখন সব কিছু যেমন মেমরী চিপে ধরে রাখা হয় ঐ সময় তা বইতে লিখিত ভাষায় সংরক্ষিত হত।
রোবট এ সম্পর্কে আরো জানালো যে ঐ সময় হাজার হাজার প্রকার ভাষা ছিল। এক এক জায়গায় এক এক ভাষার প্রচলন ছিল। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এই ভাষার জন্য একটি দেশের মানুষ সংগ্রাম করে নিজেদের জীবন দিয়েছে।
বিকি জিজ্ঞেস করল কারন কি??
কারন তাদেরকে তাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এখন তো সবাই একটি নির্দিষ্ট কোডিং ভাষায় কথা বলে। কিন্তুয় ঐ সময় পৃথিবীর এক এক জাগায় এক এক ভাষা ছিল। যাকে বলে মাতৃ ভাষা। কারন ঐ ভাষাটি মায়ের মুখ থেক শুনে শুনে আয়ত্ত করা যেত। মাতৃ ভাষায় কথা বলার মধ্যে যেমন সুখ ছিল তেমনি ভাব প্রকাশেও ছিল মজা। কিন্তু অন্য দেশের শাসক গোষ্ঠী তাদেরকে তাদের মাতৃ ভাষার পরিবর্তে অন্য ভাষয় কথা বলার হুকুম দিল। যা তাদের আত্ন-সন্মানে আঘাত দেয়। তাই তারা সংগ্রাম করে। তারা দলবদ্ধ ভাবে রাস্তায় নামে মিছিল করে, স্লোগান দেয়। তাদের স্লোগান ছিল “রাষ্ঠ ভাষা বাংলা চাই”। কারন তারা যে ভাষায় কথা বলত তার নাম ছিল বাংলা ভাষা। কিন্তু শাসক গোষ্ঠী তাদের দাবি মেনে না নিয়ে তাদের উপর গুলি বর্ষণ করে। এতে ঐ দেশের কিছু ছাত্র শহীদ হয়। দিনটি ছিল ২১ এ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সাল। পরে যদিও তাদের দাবি মেনে নিতে হয়, তার পর ও শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সন্মান জানাবার জন্য তৈরি করা হয় এক বিশেষ ধরনের মিনার। যাকে বলা হয় শহীদ মিনার। ২১এ ফেব্রুয়ারিতে তারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শহীদ মিনারা ফুল দিত। আর যে দেশে এ ভাষা অন্দলোন হয়েছে তার নাম বাংলাদেশ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তুমি এই বাংলা দেশের মধ্যে অবস্থান করছ। অর্থাৎ তুমি বাঙ্গালীর বংশধর। যদি মানচিত্রের প্রচলন না উঠত তাহলে এই অঞ্চলই বাংলাদেশ হত।
বিকি জিজ্ঞেস করল ঐ ভাষাটা কি শেখা যাবে? রোবট বলল, ঐ ভাষা শিখা এত সহজ নয়, তুমি যদি শিখতে আগ্রহী হও তাহলে আম এ সম্পর্কে তথ্য দিতে পারি। বিকি বলল তাহলে তাই কর। আমি এ ভাষাটা শিখতে চাই।
রোবটের সাহায্যে বিকি লিখিত ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা প্রায় শিখে পেলছে। আবার ২১ এ ফেব্রুয়ারি ও ঘনিয়ে আসছে। তার মাথায় একটা চিন্তার জন্ম হল। সে ভাবল আচ্ছা যদি আমি শহীদ মিনার তৈরি করি এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ফুল দি তাহলে কেমন হবে? যেই কথা সেই কাজ। সে রোবটের সাহায্যে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুযায়ী তার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার তৈরি করা শুরু করে দিল। তার ক্লাস-মিটেরা তাকে এ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করলে ও সে উত্তর দেয় নি। পরে ২০ এ ফেব্রুয়ারি সবাইকে ডেকে বলল, এ সম্পর্কে যদি জানতে চায় তাহলে কাল অর্থাৎ ২১ এ ফেব্রুয়ারি সকাল সূর্য উঠার আগে আসতে হবে। তারা সবাই খুশি হয়ে আসবে বলে কথা দিল।
এ দিকে উত্তেজনায় বিকির চোখে ঘুম নেই। কখন ভোর হবে ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যে সে দেখল তার তৈরি শহীদ মিনারের সামনে সে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটাচ্ছে। এ ভাবে ছিটাতে ছিটাতে এক সময় সে দেখল তার তৈরি শহিদ মিনারের পিলার গুলো একে একে মানুষে পরিণত হল। তার একে একে বলল। আমি রফিক, আমি সালাম, আমি বরকত, আমি জব্বার। আমাদের সম্পর্কে তুমি তোমার রোবট থেকে অনেক তথ্য জেনেছ। তবে নিজের সম্পর্কে কিছুই জাননা। তোমাকে খুব ভাল একটা ইনফরমেশন দিচ্ছি। তুমি হলে বর্তমান পৃথিবীর সমচেয়ে বুদ্ধিমান লোক। মানুষেরা রোবট ব্যবহারের ফলে তাদের বুদ্ধি ক্ষয় হতে লাগল। তার লিখিত ভাষা দিন দিন ছেড়ে দিল। লিখিত ভাষা ছেড়ে দেওয়ার কারণে তাদের পড়ালেখা দিনদিন অবনতি হতে লাগল। এবং তাদের মস্তিষ্কের গঠন ও আস্তে আস্তে পালটে যেতে লাগল। তাই শিক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি হিসেবে নিউরন উত্তেজক এই ওয়েব পদ্ধতি গ্রহণ করল। যা শুধুমাত্র যাদের বুদ্ধি-কম তাদের ক্ষেত্রে কাজ করে সবার ক্ষত্রে না। তোমার বুদ্ধি স্বাভাবিকের থেকে অনেক ভালো, তাই তোমার ক্ষেত্রে কাজ করে না। তবে তুমি লিখিত ভাষায় পড়া লেখা শুরু কর। পৃথিবী এখন পুরোপুরি মেশিনের হাতে চলে গেছে। তারা কয়েক বছরের মধ্যেই মানুষ সহ সকল প্রাণীকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে। তুমিই পার পৃথিবীকে রক্ষা করতে। তুমি নিজে লিখিত ভাষা শিখে নাও। তোমার মত আরো অনেক বুদ্ধিমান মানুষ রয়েছে তাদেরকেও শিক্ষা দাও। নিজের পৃথিবী গড়ে তোল বলেই তারা একে একে আবার মিনারের পিলারে পরিণত হল।
আর তক্ষনি তার ঘুম ভেঙ্গে গেল, এখন ও ভোর হতে অনেক দেরি। তার পর ও সে ফুল হাতে নিয়ে দ্রুত পায়ে শহীদ মিনারের দিকে ছুটল।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×