somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিভি লটারী নিয়ে দুর্বৃত্ত চক্রের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য : মূল প্রতারক এখনো ধরা পড়েনি আমেরিকা প্রবাসীরা জানান-জিম্মি হিসেবে দলিলে স্বার ও সার্টিফিকেট আটক রাখা হয়েছে

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউইয়র্ক থেকে এনা : স্বামী-স্ত্রী ও এক সন্তানের জন্যে ৩৪ লাখ টাকা চুক্তির পর ১০ লাখ দিয়ে ভিসাসহ পাসপোর্ট পেয়েছেন। অবশিষ্ট ২৪ লাখ টাকার জিম্মি হিসেবে একটি মুচলেকা পত্রে (স্ট্যাম্প-কার্টিজ) স্বার ছাড়াও ঐ দম্পতির বিয়ের সার্টিফিকেট, শিাগত যোগ্যতার মূল সার্টিফিকেট এবং সন্তানসহ গোটা পরিবারের জন্মের সার্টিফিকেটের সাথে অতি আপনজনদের শিাগত সার্টিফিকেট রাখা হয়েছে। দু’বছরের মধ্যে পরিশোধের অঙ্গিকার করে গত জুলাই মাসে আমেরিকায় আগত এই বাংলাদেশী ( নাম সঙ্গত কারণে গোপন রাখা হলো) স্বপ্নের দেশে সদা সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। জন্মের সার্টিফিকেটের মূল কপি না থাকায় শিশু সন্তানের হেল্্থ ইন্স্যুরেন্স করতে পারছেন না। নিজেরাও প্রতিপদে সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছেন। কাজ করছেন একটি ফাস্টফুডের স্টোরে। মাসে বেতন পাচ্ছেন ১২০০ ডলার। এর ৭৫০ ডলার যাচ্ছে বাসা ভাড়া বাবদ। অবশিষ্ট অর্থে কোনমতে দিন খরচ চলছে। ডিভি লটারীর ঐ দালালদের অবশিষ্ট ২৪ লাখ টাকা পাবেন কোথায়-এ টেনশন সদা তাড়িত করছে বি.বাড়িয়ার ঐ বাংলাদেশীকে। আরেক কলেজ পড়–য়া বাংলাদেশী যুবক ডিভি লটারীর ভিসা পাবার পর দালাল চক্রকে ১৭ লাখ টাকা দেয়ার অঙ্গিকার করেন। ৩ লাখ টাকা অনেক কষ্টে সংগ্রহ করে দেয়ার পর ভিসাসহ পাসপোর্ট হাতে পেলেও অবশিষ্ট ১৪ লাখ টাকার জিম্মি হিসেবে সার্টিফিকেটসহ মুচলেকানামায় স্বার নিয়েছে। ৩ বছরের মধ্যে দিতে হবে অবশিষ্ট টাকা। টাকা নেয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রেই আসবেন ঐ চক্রের সর্দার। ময়মনসিংহ অঞ্চলের এই যুবকও কাজ পেয়েছেন একটি ফাস্টফুডের স্টোরে। ব্যাচেলর হওয়া সত্বেও প্রত্যাশিত আয় হচ্ছে না বলে ঐ ১৪ লাখ টাকা কীভাবে জমাবেন সে টেনশনে আমেরিকান স্বপ্ন ধুলিসাত হতে চলেছে।
ময়মনসিংহের একটি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের ছাত্র ছিলেন ঐ যুবক। তিনি নিউইয়র্কের ঠিকানা পত্রিকাকে বলেন, ২০০৩ সালে ডিভি লটারীর ফরম পূরণের জন্যে শহরের একটি প্রতিষ্ঠানে যাই। তাদের কম্প্যুটারে সবকিছু করা হয়। সে বছরের লটারীতে নাম উঠেনি। এরপর ঐ প্রতিষ্ঠানের লোকজনই আমার নামে আবেদন করেন। কারণ, তাদের ওখানে আমার যাবতীয় তথ্য ছিল। ২০০৬ সালের ডিভিতে আমি জয়ী হয়েছি বলে ঢাকা থেকে ফোন করা হয়। সাড়া দেইনি। বিশ্বাস হয়নি। অবশেষে একদিন দেখতে পেলাম ঢাকা থেকে বাড়িতে লোক এসেছে। তার কাছ থেকে নেয়া ঠিকানায় এক আত্মীয় গেলেন ঢাকায় মৌচাক মার্কেট এলাকায় এক অফিসে। সেখানে গেলে ডিভিতে জয়ী হবার চিঠি দেখায়। সে সময় গোপন কোড নাম্বার ঢেকে রাখা হয়। বলা হয়, টাকা পয়সা কিছুই লাগবে না। সেকেন্ড লেটার আসার পর যেন তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। উল্লেখ্য, ডিভির আবেদনে যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হয় ঐ চক্রের অফিস। সেজন্যে ওদের হাতেই পড়ে বিজয়ী হবার চিঠি। দ্বিতীয় চিঠি আসার পর ওরা সবকিছু করে দেয়। সে সময়ও টাকা পয়সার ব্যাপারে কিছু বলেনি। এরপর ভিসার জন্যে ইন্টারভিউয়ের তারিখ ধার্য হলেই ২২ লাখ টাকা দাবি করে। যুবকটি বলেন, আমি আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। কোথায় পাবো এত টাকা। কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে জমিজমা সবকিছু বিক্রি করলেও ৮ লাখ টাকা হবে না। এ অবস্থায় ভিসার জন্যে ইন্টারভিউ দিলাম। ভিসার টোকেন দেয়া হলো। বারিধারা দূতাবাস থেকে বের হবার সাথে সাথে ওরা কেড়ে নিল সে টোকেন। পরদিন ভিসাসহ পাসপোর্ট পিকআপ করার পরও ঘটলো একই অবস্থা। শুরু হলো দেন-দরবার। অনেক কষ্টে ৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দেয়ার পর আমার সবগুলো সার্টিফিকেটের মূল কপি, আমার বড়ভাই (সরকারী চাকরিজীবি)এর সমস্ত সার্টিফিকেট জমা নিল। এরপর জমি রেজিস্ট্রি করার মত দলিল করা হলো যে আমি ওদের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা ধার নিয়েছি। ৩ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবো। এরপর ওরা আমার পাসপোর্ট দেয় এবং হুমকি দেয় যে, টাকা দিতে গড়িমসি করলে গ্রীণকার্ড বাতিল করা হবে।
১৮ ফেব্র“য়ারি প্রকাশিত চলতি সংখ্যা ঠিকানা পত্রিকাকে বি.বাড়িয়ার ভদ্রলোক বলেছেন, কসবা উপজেলা সদরের রাস্তায় একটি স্টুডিও রয়েছে-যেখানে ছবি তোলা হয়। ২০০২ সালের কথা। ঐ স্টুডিওর সামনে দিয়ে যাবার সময় স্টুডিওর মালিক জনাব আনোয়ার ডাক দেন। কাছে গেলে বলেন, আসুন ছবি উঠাই। আপনার ডিভি লটারীর আবেদন করবো। সেই শুরু। এরপর ২০০৮ সাল নাগাদ প্রতি বছরই ঐ স্টুডিওর মালিক জানান যে আমার নামে আবেদন করা হয়েছে। আমি যেন নিজে থেকে কোন আবেদন না করি। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকা থেকে টেলিফোন এলো। বলা হলো যে, আমার আবেদন জয়ী হয়েছে ডিভিতে। ঢাকায় মালিবাগে ওদের অফিসে দেখা করতে হবে ডিভি লটারীর যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য। এক পর্যায়ে মালিবাগ গেলাম। গোপন কোড নম্বর ঢেকে আমার আবেদন দেখালো। জিজ্ঞাসা করলাম টাকা পয়সা লাগবে কিনা। বললো, কিছুই লাগবে না। ভিসা হবার পর টাকা লাগবে। দ্বিতীয় লেটার আসে আমার বাসায়। সেটি জানানোর পর ওরা আমাকে ৯ হাজার টাকা দিল আমার, ন্ত্রীর এবং শিশু সন্তানের পাসপোর্ট বানানোর জন্যে। অবাক হলাম ওদের আন্তরিকতা দেখে। এরপর ইন্টারভিউ দেই এবং ভিসা ইস্যু হয়। কিন্তু দূতাবাস ভবন থেকে বের হবার সাথে সাথে ওদের লোক এসে পাসপোর্ট ৩টি কেড়ে নেয়। নিয়ে যায় মৌচাকের সামনে নক্সী ভবনে বশির মিয়াজি এন্টারপ্রাইজে। দাবি করে ৩৪ লাখ টাকা। এটা জেনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা আমার এবং স্ত্রীর। সে সময় আমাকে জানানো হয় যে ভিসার জন্যে কন্সুলার সেকশনে টাকা দিতে হয়েছে। জবাবে আমি বশির নামক (কুমিল্লার দাউদকান্দির অধিবাসী) জনৈক ব্যক্তিকে জানাই যে, আতার পে একটি টাকা দেয়াও সম্ভব নয়। এক পর্যায়ে ৬ লাখ টাকা দিতে চাই। কিন্তু ঐ বশির তার কথায় অটল। অবশেষে ১০ লাখ টাকা দিতে চাইলাম। তবে অবশিষ্ট ২৪ লাখ টাকা দু’বছরের মধ্যে দেয়ার অঙ্গিকারনামায় স্বারসহ যাবতীয় সার্টিফিকেট আটক করে। আমার নিকাত্মীয় কয়েকজনের সার্টিফিকেটও রেখে দেয় জিম্মি হিসেবে।
উপরোক্ত দুই বাংলাদেশীর মত আরো অন্তত ১৬ জন একই অভিযোগ করেন। গত ১২ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় ডিভি লটারীর নামে প্রতারণার অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেফতারের সংবাদে তারা আশান্বিত, তবে বশির মিয়াজি নামক ঐ লোকটিসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা গ্রেফতার না হওয়ায় তাদের টেনশন কমেনি। তারা আশা করছেন, শীঘ্রই সরকারের গোয়েন্দারা বশির মিয়াজিসহ অন্যদের ব্যাপারে যথাযথ পদপে নেবেন। এসব প্রবাসী বলেছেন, এহেন দুষ্কর্মে লিপ্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে তারা এফবিআইয়ের কাছে যাবেন। কারণ, তারা এখন নিশ্চিত হয়েছেন যে, তাদের গ্রীণকার্ড কেউই বাতিল করতে পারবে না। বি.বাড়িয়ার ঐ প্রবাসী আরো জানিয়েছেন যে, উপজেলা সদর রোডের ঐ স্টুডিও মালিক প্রতিজনের ছবি উঠিয়ে দিয়ে ঐ চক্রের কাছ থেকে পেয়েছেন ৮৫ টাকা করে। এ ধরনের এজেন্ট দেশের অধিকাংশ জেলা-উপজেলাতে রয়েছে। তারা আরো বলেন, বশির মিয়াজির সাথে আমাদের কারোই কোনদিন পরিচয় ছিল না, তাই তার কাছ থেকে টাকা ধার নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এছাড়া এত বিরাট অংকের টাকা অপরিচিত একজন লোব কখনোই কাউকে হাওলাদ দিতে পাওে না-এটাই প্রমাণিত হবে যে কোন আদালতে গেলে। তাই বশির মিয়াজিসহ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে যেতেও কুন্ঠা করবে না। তারা আশা করছেন, এই চক্রকে নির্মূল করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে ডিভি বিজয়ীরা এহেন হেনস্থা থেকে রেহাই পাবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে একটি বাড়িতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন হানা দিয়েছিল। সে বাড়ির ঠিকানায় প্রতি বছর হাজার হাজার আবেদন করা হয়। জানা গেছে, ডিভি লটারী নিয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রতারণার ফাঁদ পাতা লোকজনের এজেন্ট এই নিউইয়র্কেও রয়েছে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া জরুরী বলে ভোক্তভোগীরা মনে করছেন। নইলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এ উদ্যোগ প্রহসনে পরিণত হবে

লিনক...http://www.probashaprotidin.com/
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দিশ হারা

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২

তোয়াত্তন আ`‌রে কেন লা‌গে?
গম লা‌গে না হম লা‌গে?
রাই‌ক্কো আ‌রে হোন ভা‌গে
ফেট ফু‌রে না রাগ জা‌গে?

তোয়া‌রে আত্তন গম লা‌গে
ছটফড়াই আর ডর জাগে
ছেত গরি হইলজা ফাড়ি
হইবানি হোন মর আগে।

হোন হতার হোন ইশারা
ন'বুঝি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাদ্য পন্যের মান নিয়ন্ত্রন

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১২

মশলা প্রস্তুতকারী কিছু ভারতীয় সংস্থার মশলায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গিয়েছে।সম্প্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেন্টার ফর ফুড সেফটি’। সংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় বাজারে জনপ্রিয় বেশ কিছু সংস্থার মশলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×