somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনে বসন্ত , বসন্ত শহর জুড়ে

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বসন্তের আগমন বুঝতে পেরে লিখলেন অথবা বসন্তের আগমন বুঝতে পেরে গুন গুন করে গাইলেন ‘আজি দোল ফাগুনের দোল্ লেগেছে / আমের বোলে দোলন চাঁপায় ।
মৌমাছিরা গেলাস ভরে / পলাশ ফুলের মউ পিয়ে যায়।
শ্যামল তরুর কোলে কোলে / আবীর রাঙা কুসুম দোলে
দোয়েল শ্যামা লহর তোলে / কৃষ্ণচূড়ার ফুলের শাখায়!
সত্যিকার অর্থেই ফাগুন আমাদের জীবনের বিশাল এক উন্মাদনা। আমরা আমাদের অবচেতন থেকেই ফাগুন আর ফুলের সাথে একাকার। আমাদের সে একাতœতা পঞ্জিকায় ফাগুন খোঁজে প্রতি বছর , আমরা গানে-গানে আহ্বান করি বসন্তকে -
আয়রে বসন্ত
তোর কিরণ মাখা পাখা তুলে
নিয়ে আয় তোর নুতন গানের
নুতন পাতায় নুতন ফুলে!
সে আহ্বানে আমাদের মন এলোমেলো করে দিয়ে মন ভুলানো ফাগুন আজ জাগ্রত দ্বারে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন , ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’ তবে হরেক রকম ফুলের ডালা সাজিয়ে এবার বসন্ত এসেছে! যার শুরু ফাগুনে রাঙা শিমুল আর কিংশুকে। রমনা উদ্যান , কার্জন হল , জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বলধা বাগান ও শিশু একাডেমী সহ পুরো শহর জুড়ে এর আলামত স্পষ্ট। রমনা বা কার্জন হলে গ্লিরিসিডিয়া , রক্তকাঞ্চন আর পলাশ-শিমুলের উৎসব যেন! উদাল ছড়িয়েছে রঙ। এসব বাহারি বর্নগন্ধ ফুলের কোলাহলে প্রানবন্ত বসন্তের নকিব ফাগুন , যা আমাদের মনে দোল জাগিয়ে যেতে বাধ্য!
আজ বসন্তের প্রথম দিন। রাত বারোটা এক মিনিটে শুভমিতার ুদ্রবার্তা , বসন্তের এই দিনে খুব ভালোবাসি , বসন্তের শুভেচ্ছা! একটু অভিমান হলো , বসন্তের দিনেই কী শুধু ভালোবাসাবাসি! আর বাকী দিন কী! আজ পহেলা ফাগুন হলে আগামী কাল ভালোবাসা দিবস। তাকে ভোর ছয়টায় ওঠার মেসেজ দিয়ে আমি ভালোবাসার কার্ড বানাতে হাত লাগালাম!
ঠিক ছয়টায়ই সে আমার ঘুম ভাঙ্গালো। আমি চোখ মেলে দেখি সে বাসন্তি রঙের শাড়ি নয় , চমৎকার একটি বাসন্তি জামা পরে তৈরী। এমন পরিস্থিতিতে আমাকে দ্রুত তৈরী হতে হল , আমিও একটি ফতুয়া পরে , গায়ে শাল জড়িয়ে বের হলাম। বাইরে এসে দেখি ফাগুনের প্রথম দিনে একেবারে যেন জেঁকে ধরা শীত! কুয়াশায় ঢেকে আছে পুরো শহর। আমরা কুয়াশা গায়ে মেখে পথে নামলাম। মানুষ-জন ইতিমধ্যে পথে নেমে পড়েছে। অনেকের গায়ে দেখলাম হলুদ বাসন্তি শাড়ির বাহার , মেয়েদের চুলে গোঁজা হলুদ গাঁদা ফুল , আবার কারো চুলে জারবেরা! ছেলেরাও কম কিসে , তাদের পোষাকেও বসন্তের আবহ। আমরা কার্জন হলের ভেতর দিয়ে বের হলাম। ফুলে ফুলে ছেঁয়ে আছে পুরো কার্জন হল। এই সক্কাল বেলা এখানে সেখানে , মাঠে সিড়িতে যে যেভাবে বসে গল্পে মশগুল , সব বসেছে জোড়ায় জোড়ায়। একজনকে দেখলাম হাত ভরে পলাশ এনে বন্ধুদের বিলাচ্ছে। পথে শ্রীকৃষ্ণদার সাথে দেখা , তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভীদ বাগানের একজন মালি। জোড় করে আমাকে উদ্ভীদ উদ্যানে নিয়ে গেলেন। আমরা পুরো বাগান ঘুরে দেখলাম , কনজিয়াকে দেখলাম ফুটতে শুরু করেছে। বাসর লতা এখনও ঝুলে আছে! সাথে মৌসুমী ফুল গাঁদা , প্যানজি , স্যালভিয়া , হলিহক , স্নাপ ড্রাগনসহ কতকী! এখান থেকে বাংলা একাডেমী যেতে যেতে কুয়াশার আস্তর ভেদ করে ধীরে ধীরে সুর্য আলো ছড়িয়ে পড়লো প্রকৃতিতে। আজকের রোদ কেমন ঝলমলে আর অপরূপ। সে তো রোদ নয় যেন প্রকৃতির বাঁধ ভাঙা হাসি , সে হাসিতে উজ্জল হল আমাদের মন , আমরা চলে এলাম ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের কলা ভবনের কাছে। পুরো এলাকা উৎসব মুখর , ফাগুনের রঙে রঙ্গীন। আমরা এখান থেকে চলে যাই চারুকলা ইনিষ্টিটিউশনের বকুল তলায়। প্রতি বছরের মত এবারও এখানে ফাগুনকে বরন করে নেবার জন্য বর্নাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এতো যেন বাঙ্গালীর প্রানের মেলা। বাঙ্গালীর এই শ্বাশত উৎসবে মিলিত হয়ে বসন্তকে বরন করে নেবার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ চলে এসেছে এই উৎসব আয়োজনে। একঝাঁক আলোকচিত্রী আর মানুষের ভিড়ে সরগরম পুরো বকুল তলা। আমরা এখানে আসার কিছুনের মধ্যে উচ্চাঙ্গ নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হল ফাগুন উৎসব। ধ্রুপদ কলা কেন্দ্রের সে নৃত্য উপস্থাপনা ছিল সত্যি মনোমুগ্ধকর। আমরাও এখানে বসন্ত উৎসবে সামিল হই। শুভ চলে যায় ছবি তুলতে। আমারও কী বসে থাকা চলে! পুরো বকুল তলা আর চারুকলা ইনিষ্টিউিশন এলাকা আমি একবার ঘুরে আসি , ঘুরে আসি ছবির হাঁট। সর্বত্র একই দৃশ্য বসন্ত মঙ্গল আর এমন ভালোবাসা আর ভালো লাগার মহত্তম দিনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেবার প্রয়াশ। ছবির হাঁটে দেখলাম একদল মেয়ে একে ওপরের চুলে গাঁদাফুল পড়িয়ে দিতে ব্যাস্ত। একটু এগিয়ে শাহবাগ ফুলের দোকানে গিয়ে দেখি ফুল কেনার ধুম। নে নে মানুষ বাড়ছে। আমি সে ভীড় ঠেলে আবার বকুল তলায় আসি। সত্যি বসন্তের ছোঁয়া যেন সব দু:খ-কষ্টে সুখের আবির ঢেলে দিয়েছে। বকুল তলায় ঢুকতেই এখানে সত্যি সত্যি আবীরে মাখামাখি হলাম। উৎসব উদযাপন পরিষদ আকাশে বাতাসে সাথে স্রোতের মত এখানে আসা মানুষের কপোলে আবীরের তীলক পরিয়ে দিচ্ছে! শুভমিতা কে খুঁজতে গিয়ে তাকে আর চিনতে পারছিলাম না! তার পুরো চেহারা আবীরে রাঙা। সে তখন ক্যামেরা আবীর মুক্ত করায় ব্যাস্ত। সে সব আবীর সরিয়ে শিমুল মোস্তফার আবৃত্তিতে আর সুজিত মোস্তফা , ফেরদৌস আরা বা খাইরুল আনামের গানে বসন্ত মঙ্গল কী এক আবেশ তৈরী করে মনে , এযেন বাংলার শত-সহস্র বছরের আদি গন্ধ। সে আদি রূপ সঙ্গে করে আমরা ছুটে যাই রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে যেতে যেতে মনে হয় এযেন আরেক হলুদ দুনিয়া!

৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×