somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ে আবার সংঘর্ষ।এর শেষ কোথায়?

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল আবার লংগদুতে পাহাড়ী বাঙালির মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বাঙালিরা গুলশখালি এলাকায় ও রাঙিপাড়ায় পাহাড়ীদের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে।ঘটনাটা কেন, কীভাবে ঘটলো বিস্তারিত জানতে পারিনি।লংগদুর অদুরে এক নিকট জনকে ফোন করলাম।সেও বিস্তারিত জানে না। যা শুনেছে সেটা জানালো। বললো, “কীভাবে যেন এক বাঙালি মারা গেছে।তার লাশ নিয়ে বাঙালিরা লংগদুতে মিছিল করেছে।মিছিলটা লঞ্চঘাট পর্যন্ত গেলে সেখানে কয়েকজন পাহাড়ীকে পেয়ে বাঙালিরা মারধর করেছে।মিছিল শেষে বিডিআর (আসলে এখন বিজিবি)-এর সহযোগিতায় বাঙালিরা পাহাড়ীদের গ্রামে ঢুকে হামলা চালিয়েছে।ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে”।

ঘটনা নিয়ে নানা ডালপালা গজিয়ে উঠতে লাগলো।বিভিন্ন রকম তথ্য আসতে লাগলো।অনেকে বলাবলি শুরু করলো, “ফেব্রুয়ারীটা আসলে একটা খুব গরম মাস।গত সপ্তাহে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক কয়েকজন আদিবাসী নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো। এখন লংগদুতে পাহাড়ী গ্রাম পুড়ে যাচ্ছে।গত বছরও ১৯ – ২০ ফেব্রুয়ারীতে পাহাড়ী-বাঙালি সংঘর্ষ হয়েছিল।সামনে বিজু আসছে, এরকম সময়ে বাঙালিরা যতসব গন্ডগোল পাকায়”।পাহাড়ী গ্রামে আছি বলে পাহাড়ীদের মতামতগুলো শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু বাঙালিদের মতামতগুলো কীভাবে শুনবো তার কোন উপায় নেই। সে যাক, বাসা থেকে ফোন এলো, “পরিস্থিতি ভালো নয়, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরো”।অগত্যা বাসায় ফিরতে হলো।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ইন্টারনেট সংস্করণে দৈনিক পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে ঘটনাটা বুঝার চেষ্টা করছিলাম।পত্রিকাগুলোও বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়েছে।পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণে ঘটনা সম্পর্কে মোটামুটিভাবে নিচের তথ্যগুলো পাওয়া গেছে:

১। গুলশাখালী ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা ছাবের আলী (৪৫) নামে জনৈক কাঠুরিয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত (প্রথম আলো)।দৈনিক ডেইলি স্টারের সূত্র মতে, ছাবের আলী তার সহযোগী সাগু শেখকে নিয়ে (পক্ষান্তরে সমকাল বলেছে ৩ জন, কালের কন্ঠ বলেছে ৪ জন সহযোগী)গত মঙ্গলবার কাঠ সংগ্রহের জন্যে জঙ্গলে যায়। সাগু শেখ ফিরে এলেও ছাবের আলী ফিরে আসেনি।

২। তার পরের দিন অর্থাৎ বুধবার ছাবের আলীর লাশ পাওয়া যায়।পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা খুন করেছে অভিযোগে ছাবের আলীর লাশ নিয়ে সেটেলার বাঙালিরা গতকাল লংগদু সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

৩।বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের পরে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হলো বগাচতর ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া (লংগদু উপজেলা সদর থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার দূরে) এবং পার্শ্ববর্তী গুলশাখালী ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রাম (সমকাল অনুসারে রাজানগর)।প্রথমোক্ত গ্রামটি আদিবাসীদের এবং দ্বিতীয়টি সেটেলার বাঙালিদের।

৪।কয়টি বাড়ী পুড়ে গেছে সে ব্যাপারে তথ্যের ভিন্নতা রয়েছে।সমকাল ও দৈনিক কালের কন্ঠ অনুসারে ১৫ টি বাড়ী পুড়ে গেছে। তার মধ্যে ৯ টি রাঙ্গী পাড়ায় (আদিবাসীদের) এবং ৬টি রাজনগর/শান্তিগ্রামে (বাঙালিদের)। বিভিন্ন জনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ১০ – ১২টি, আর ডেইলিস্টারে বলা হয়েছে ৩০ -৪০টি।

সারসংক্ষেপ করে বলা যায়, গতকালের ঘটনাটি সেটেলার ছাবের আলীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।কিন্তু ঘটনা কীভাবে ঘটলো, এবং বিক্ষোভ-সমাবেশের পরে ঘটনাপ্রবাহ কীভাবে অন্যদিকে মোড় নিল এ ব্যাপারে অনেক প্রশ্নের উত্তর পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়নি।এসব প্রশ্নের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলো জানা খুবই জরুরী।

১।ছাবের আলীকে কে হত্যা করেছে? এ প্রশ্নের উত্তর উদঘাটন করা হয়নি কেন?

২।দৈনিক পত্রিকাগুলো ছাবের আলীর হত্যাকারীকে প্রচলিত বিভিন্ন পরিভাষায় চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে।কালের কন্ঠ, সমকাল ও ডেইলি স্টারে বলা হয়েছে “সশস্ত্র সন্ত্রাসী”, দুষ্কৃতকারী” ও “অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী” (unknown criminals). কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাবের আলীর সঙ্গে যেই সাগু শেখ (পক্ষান্তরে ৩/৪ জন সহযোগী) জঙ্গলে গিয়েছিলো সেই সাগুর বা সহযোগীদের ভূমিকা কী ছিলো? সাগু কিংবা অন্য ৩/৪ জনের বক্তব্য নেই কেন? কে বা কারা ছাবের আলীকে অপহরণ করেছে (ধরে নিচ্ছি, খুনের আগে অপহরণের ঘটনা ঘটবে)সে ব্যাপারে তাদেরকে কী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?

৩। যে কোন খুনের ঘটনা নিন্দনীয়। যে কোন মৃত্যু অত্যন্ত বেদনার।কিন্তু “সশস্ত্র সন্ত্রাসী”, দুষ্কৃতকারী” ও “অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী”দের দুষ্কর্মের জন্যে সাধারণ নিরীহ মানুষদের দু:খ ভোগ করতে হবে কেন? নিরীহ গ্রামবাসীদের বাড়ীঘর পুড়বে কেন?এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী?

পাদটীকাঃ
গতকালের লংগদুর সহিংসতার পাদটীকা হিসেবে গত বছরে বাঘাইহাটে সংঘটিত ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হয়। গত বছরও ঠিক এই সময়ে ১৯ – ২০ ফেব্রুয়ারী এ রকম পাহাড়ী বাঙালি সংঘাত হয়েছিলো। ঐ সহিংসতায় কিছু লোক মারা গিয়েছিলো।অনেক ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো।তখনও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো পাহাড়ী আদিবাসীরা। গতকাল সন্ধ্যায় পাহাড়ীদের আলাপনে উল্লেখিত, “ফেব্রুয়ারীটা আসলে একটা খুব গরম মাস” কথাটা কী তাহলে সত্যি?ফেব্রুয়ারী আসলে কী পাহাড়ীরা ভয়-আতংকের মধ্যে থাকবে? “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কী ভুলিতে পারি” সুরের বদলে কী আমাদের গাইতে হবে, “সেটেলার বাঙালির কালো হাতের থাবায় পরিপূর্ণ ফেব্রুয়ারী আমরা কীভাবে ভুলি?” সেটেলার বাঙালির কালো থাবা রাষ্ট্রকে অচিরেই বন্ধ করতে হবে।নতুবা এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×